ঢাকা, বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৩ ১৪৩১

ধর্ষণ: বর্তমান সমাজ চিত্র, কারণ ও প্রতিকার

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৩৭ পিএম, ৯ অক্টোবর ২০২০ শুক্রবার

আমাদের সমাজে অসংখ্য অন্যায়-অপকর্মের স্রোত-তরঙ্গের মাঝে ধর্ষণ বর্তমানে নতুন রূপ পরিগ্রহ করেছে। প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিনিয়ত আসছে ধর্ষণের নানা খবর। মানুষ গড়ার আঙ্গিনায় অমানুষদের হিংস্র থাবায় আমার বোন আজ ক্ষত-বিক্ষত। স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণ। বাসের ড্রাইভার আর হেল্পার মিলে জন্তু-জানোয়ারের মত ঝাঁপিয়ে পড়ে অসহায় নারীর উপর। প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না পেয়ে জন সম্মুখে কুপিয়ে হত্যা কিংবা শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার মত ঘটনা দেখে জাতি স্তম্ভিত। এমনকি প্রেম প্রত্যাখ্যাত হয়ে প্রতিশোধ নিতে কয়েকজন ধর্ষক গণধর্ষণ করার পর ফেইসবুক লাইভে পৈশাচিক উল্লাসে মেতে উঠে। বাদ যায় না প্রতিবন্ধী কিংবা ছয় বছরের শিশুও৷
 
এই হল, আমাদের বর্তমান সমাজের নির্মম হাল-চিত্র। (আল্লাহ এ জাতিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করুন। আমিন।) যা হোক, এমন ভয়ানক পরিস্থিতিতে নিম্নে ধর্ষণ সংক্রান্ত জরুরি কিছু তথ্য, ধর্ষণের প্রকারভেদ, কারণ ও ইসলামে ধর্ষণ রোধে গৃহীত পদক্ষেপ সমূহ তুলে ধরা হল:

আইনে ধর্ষণের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘যদি কোন পুরুষ বিবাহ বন্ধন ব্যতীত ষোল বৎসরের অধিক বয়সের কোন নারীর সাথে তার সম্মতি ছাড়া বা ভীতি প্রদর্শন বা প্রতারণামূলকভাবে তার সম্মতি আদায় করে অথবা ষোল বৎসরের কম বয়সের কোন নারীর সাথে তার সম্মতিসহ বা সম্মতি ব্যতিরেকে যৌন সঙ্গম করেন তাহলে তিনি উক্ত নারীকে ধর্ষণ করেছেন বলে গণ্য হবেন।’ [নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০]

অনুমতি প্রদানে অক্ষম (যেমন: কোনও অজ্ঞান, বিকলাঙ্গ, মানসিক প্রতিবন্ধী কিংবা অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি) এ রকম কোনও ব্যক্তির সঙ্গে যৌন মিলনে লিপ্ত হওয়াও ধর্ষণের আওতাভুক্ত। ধর্ষণ শব্দটির প্রতিশব্দ হিসেবে কখনো কখনো ‘যৌন আক্রমণ’ শব্দ গুচ্ছটিও ব্যবহৃত হয়। (উইকিপিডিয়া)

ধর্ষণের শিকার ব্যক্তিরা মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয় এবং আঘাত পরবর্তী চাপ বৈকল্যে আক্রান্ত হতে পারে। এছাড়া ধর্ষণের ফলে গর্ভধারণ ও যৌন সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির পাশাপাশি গুরুতরভাবে আহত হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া ধর্ষণের শিকার ব্যক্তি ধর্ষকের দ্বারা এবং কোনও কোনও সমাজে ভুক্তভোগীর নিজ পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের দ্বারা সহিংসতার শিকার হয়।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ ’র ৯ ধারা মতে সাজাসমুহ:

১. যদি কোন পুরুষ কোন নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন, তাহা হইলে তিনি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন।
ব্যাখ্যা- যদি কোন পুরুষ বিবাহ বন্ধন ব্যতীত [ষোল বৎসরের] অধিক বয়সের কোন নারীর সহিত তাহার সম্মতি ব্যতিরেকে বা ভীতি প্রদর্শন বা প্রতারণামূলকভাবে তাহার সম্মতি আদায় করিয়া, অথবা [ষোল বৎসরের] কম বয়সের কোন নারীর সহিত তাহার সম্মতিসহ বা সম্মতি ব্যতিরেকে যৌন সঙ্গম করেন, তাহা হইলে তিনি উক্ত নারীকে ধর্ষণ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন৷

২. যদি কোন ব্যক্তি কর্তৃক ধর্ষণ বা উক্ত ধর্ষণ পরবর্তী তাহার অন্যবিধ কার্যকলাপের ফলে ধর্ষিতা নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অন্যূন এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন।

৩. যদি একাধিক ব্যক্তি দলবদ্ধভাবে কোন নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন এবং ধর্ষণের ফলে উক্ত নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে বা তিনি আহত হন, তাহা হইলে ঐ দলের প্রত্যেক ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অন্যূন এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন।

৪. যদি কোন ব্যক্তি কোন নারী বা শিশুকে-
ক. ধর্ষণ করিয়া মৃত্যু ঘটানোর বা আহত করার চেষ্টা করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন।

খ. ধর্ষণের চেষ্টা করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি অনধিক দশ বৎসর কিন্তু অন্যূন পাঁচ বৎসর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন।

৫. যদি পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন সময়ে কোন নারী ধর্ষিতা হন, তাহা হইলে যাহাদের হেফাজতে থাকাকালীন উক্ত রূপ ধর্ষণ সংঘটিত হইয়াছে, সেই ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণ ধর্ষিতা নারীর হেফাজতের জন্য সরাসরিভাবে দায়ী ছিলেন, তিনি বা তাহারা প্রত্যেকে, ভিন্নরূপ প্রমাণিত না হইলে, হেফাজতের ব্যর্থতার জন্য, অনধিক দশ বৎসর কিন্তু অন্যূন পাঁচ বৎসর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অন্যূন দশ হাজার টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন৷ [নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ source:
https://bit.ly/3kWfFOO]

ধর্ষণের প্রকারভেদ: (১০ প্রকার)
ধর্ষণের নানা প্রকারভেদ রয়েছে। এগুলো থেকে নিম্নোক্ত প্রকার সমূহ সমধিক সংঘটিত হয়। যেমন:
১. ডেট ধর্ষণ
২. গণ ধর্ষণ
৩. শিশু ধর্ষণ
৪. কারাগারে ধর্ষণ
৫. ধারাবাহিক ধর্ষণ (serial rape)
৬. প্রলোভন ও প্রতারণার মাধ্যমে ধর্ষণ
৭. হেফাজত কালীন ধর্ষণ। (যেমন: হাসপাতাল কর্মী, পুলিশ, সরকারী কর্মকর্তা ইত্যাদি কর্তৃক ধর্ষণ)।
৮.  আন্তর্জাতিক সংঘাত বা যুদ্ধ কালীন নিয়মতান্ত্রিকভাবে ও ব্যাপক হারে ধর্ষণ।
৯. চৌর্যবৃত্তিমুলক ধর্ষণ: নারী অথবা পুরুষকে অপহরণ করে এ ধর্ষণ করা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের যৌন দাসত্বে অথবা দেহব্যবসায় বাধ্য করা হয়।
১০. বিকৃত মস্তিষ্ক নিকটাত্মীয় কর্তৃক ধর্ষণ।  যেমন: বাবা, চাচা, ভাই, দাদা ইত্যাদি রক্ত সম্পর্কীয় নিকটাত্মীয় কর্তৃক এ ঘৃণ্য কাজটি করা হলে তাকে বলা হয় অজাচার। (ফেইসবুক থেকে সংগৃহীত)

এমএস/