ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১০ ১৪৩১

জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় কাজ করছে সরকার: পরিবেশ মন্ত্রী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:১৭ পিএম, ২০ অক্টোবর ২০২০ মঙ্গলবার

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন বলেছেন, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ, বনজ সম্পদ উন্নয়নসহ বিভিন্নমুখী কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় আন্তরিকভাবে কাজ করছে সরকার।

তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করতে বা এর বিরূপ প্রভাব থেকে মুক্ত হতে বিশ্বের সকল দেশ, বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তন এর জন্য দায়ী শিল্পোন্নত দেশগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। বিশ্বের সকল দেশের সরকার ও জনগণের সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমেই জলবায়ু পরিবর্তনের গতি শ্লথ করে বৈশ্বিক বিপদ থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে পারি। 

মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ‘ঢাকা ট্রিবিউন’ ও ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’ আয়োজিত ‘ইমপ্যাক্টস অভ ক্লাইমেট চেঞ্জ অন বে অভ বেঙ্গল এন্ড অন কোস্টাল সোশ্যাল ইকোলজিক্যাল সিস্টেম’ বিষয়ক এক ওয়েবিনারে সরকারি বাসভবন থেকে যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। ওয়েবিনারে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ বক্তব্য রাখেন। 

জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে বন্যা, খরা, সাইক্লোন, লবণাক্ততা এবং সমুদ্রতলের উচ্চতা বৃদ্ধি আমাদের জাতীয় প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করেছে। সম্প্রতি পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে বিগত ৩০ বছরে উপকূলীয় অঞ্চলে সমূদ্র পৃষ্টের উচ্চতা বছরে প্রায় ৬-২১ মিমি বৃদ্ধি পেয়েছে যা বৈশ্বিক গড় সমূদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতার চেয়ে বেশি। 

তিনি বলেন, জলবায়ু এবং সামুদ্রিক বাস্তুসংস্থানের পরিবর্তন মাছের প্রজনন প্রক্রিয়া, অভিপ্রয়াণের প্যাটার্ন এবং বেঁচে থাকার হারকে প্রভাবিত করছে। জলবায়ু পরিবর্তন দ্বারা প্ররোচিত বন্যা, নদীভাঙন এবং উপকূলীয় জমির লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়া উপকূলীয় অঞ্চলগুলিতে কৃষিজমির এবং স্বাদুপানির মাছের আবাসগুলির ক্ষতি করে। তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত এবং হাইড্রোলজির মতো ভৌত বিষয়গুলির দ্বারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মাছের প্রজনন, বৃদ্ধি এবং মাইগ্রেশন সবই প্রভাবিত হয়। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি যতই ন্যূনতম হোক না কেন, সমতলপৃষ্ঠ তাতে হ্রাস পেতে পারে এবং মিঠা পানির প্রজাতিগুলোর অবস্থায় পরিবর্তন আনতে পারে। এর ফলে মিঠা পানির মাছের উৎপাদন প্রভাবিত হবে, বিশেষত সেসব মাছের যাদের লবণাক্ততা সহনশীল নয়। 

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সরকারের উদ্যোগের উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘দ্য বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ স্ট্রাটেজি এন্ড একশন প্লান-২০০৯’ প্রণয়ন করা হয়েছে। বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করা হয়েছে যার আওতায় বিভিন্ন অভিযোজন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়া আমরা ‘ন্যাশনাল এডাপটেশন প্লান’ প্রণয়নের কাজ চলমান আছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাতের মোকাবেলার জন্য বেশ কিছু অভিযোজন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। উপকূলীয় বনায়ন কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। 

বন মন্ত্রী বলেন, বঙ্গোপসাগরসহ উপকূলীয় জীববৈচিত্র্যের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমকে উন্নয়নের মূল ধারায় অন্তর্ভুক্তকরণের লক্ষ্যে ‘ন্যাশনাল বায়োডাইভার্সিটি স্ট্রাটেজি এন্ড একশন প্লান’ এবং ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের প্রেক্ষাপটে উপকূলীয় ও সমুদ্র সম্পদ এবং প্রতিবেশ ও জীব সম্পদের সমন্বিত তথ্যভান্ডার তৈরির লক্ষ্যে সমুদ্র জীববৈচিত্র্যের জরিপ সম্পাদনের কাজটি একটি সমীক্ষা প্রকল্পের আওতায় সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ‘এসেসমেন্ট অভ কোস্টাল মেরিন বায়োডাইভার্সিটি রিসোর্সেস এন্ড ইকোসিস্টেম টু ইমপ্লিমেন্ট দ্য ব্লু ইকোনমি একশন প্লান’ শীর্ষক প্রকল্প  বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। 

পরিবেশ মন্ত্রী বলেন, উপকূলীয় ও সামুদ্রিক প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার জন্য প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার মতো উপকূল ও সমুদ্রের বিশেষ বিশেষ এলাকাকে সামুদ্রিক প্রতিবেশগত সঙ্কটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করা হয়েছে এবং জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করে জনসচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করে ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। কক্সবাজার-টেকনাফ সমুদ্র সৈকত ও সোনাদিয়া দ্বীপ ইসিএ-তে স্ট্রেংদেনিং এন্ড কনসলিডেশন অব সিবিএ-ইসিএ (দ্বিতীয় পর্যায়) বাস্তবায়িত হচ্ছে। সেসঙ্গে সেন্টমার্টিন দ্বীপের জীববৈচিত্র্য ও প্রতিবেশের সংরক্ষণ ও উন্নয়নের লক্ষ্যে ‘প্রতিবেশগত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সেন্টমার্র্টিন দ্বীপের জীববৈচিত্র্যের উন্নয়ন, ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। 

মন্ত্রী বলেন, উপকূল ও সমুদ্র এলাকার সামুদ্রিক পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্যকে পরিবীক্ষণের লক্ষ্যে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে নিয়মিত পানির গুণগতমান পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। এছাড়াও সমুদ্র পরিবেশ ও প্রতিবেশের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পরিবীক্ষণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘প্রজেকশন অভ সি লেভেল রাইজ এন্ড এসেসমেন্ট অফ ইটস সেক্টোর‍্যাল (এগ্রিকালচার, ওয়াটার এন্ড ইনফ্রাচটাকচার) ইমপ্যাক্টস’ বা বাংলাদেশের সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির অভিক্ষেপণ এবং কৃষি, পানি সম্পদ ও অবকাঠামোর উপর এর প্রভাব নিরূপণ” শীর্ষক একটি প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তরে সিভিএফ এবং গ্লোবাল সেন্টার অন এডাপটেশন (জিসিএ)-র আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপন করার ফলে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে বিশ্ব ফোরামে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে।  মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় অনন্য উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশকে একটি রোল মডেলে পরিণত করেছেন এবং বিশ্বের অনেক দেশ ও সংস্থা থেকে স্বীকৃতি লাভ করেছেন।

এসি