ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১০ ১৪৩১

দূর্ঘটনা রোধে মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা সরকারের

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:১৩ পিএম, ২২ অক্টোবর ২০২০ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৩:০৬ পিএম, ২২ অক্টোবর ২০২০ বৃহস্পতিবার

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সড়ক মহাসড়কে দূর্ঘটনার স্থান ও কারণ নির্ধারন করে সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সেইসাথে রয়েছে মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা।’

নিরাপদ সড়ক দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেন, নতুন সড়ক নির্মানকালে রক্ষা করতে হবে প্রকৃতিক ভারসাম্য। চালকদেও ট্রাফিক আইন ও চিহ্ন মেনে চলার তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও কাঠামো থাকলে একটি দেশের উন্নয়ন সহজ হয়। এ কারণে গ্রামীণ সড়ককে প্রধান্য দেয়ার পাশাপাশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে ঢাকার সাথে সারা বাংলাদেশের যোগাযোগ সহজতর করা।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে রাখতে হবে সচ্ছতা। পথচারীসহ সকলেই মানতে হবে ট্রাফিক আইন।’

এ সময় ড্রাইভার, হেলপারদের প্রশিক্ষণ দেয়া, একটানা গাড়ী না চালানোসহ সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বেশকিছু নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে সরাসরি ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে ‘জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস- ২০২০’ উদযাপন অনুষ্ঠানে যুক্ত হন। অনুষ্ঠানটি সভাপতিত্ব করেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতে সবকিছু করে যাচ্ছে সরকার।’ এসময় তিনি সরকারের গৃহীত নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চালকদের জন্য সড়ক পথে বিশ্রামাগার তৈরি করতে হবে। বাসে বিকল্প চালকের ব্যবস্থা রাখতে হবে। ফিটনেসবিহীন যান চলাচল এবং ওভারটেকিংয়ের মত অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’

গাড়ি চালকের জন্য প্রয়োজনীয় বিশ্রামের ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা গাড়ি চালাই না। তাই গাড়ি চালকদের কষ্ট বুঝতে পারি না। কারণ আমাদের অনেকের গাড়িচালক আছে। একজন চালক কয় ঘণ্টা গাড়ি চালাতে পারে? তাদেরও বিশ্রামের প্রয়োজন আছে। সেটি মাথায় রেখে আমরা গাড়িচালকদের বিশ্রামের জন্য কিছু কিছু স্থানে বিশ্রামাগার নির্মাণ করে দিচ্ছি। পর্যায়ক্রমে সারাদেশে বিশ্রামাগার নির্মাণ করা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মেয়েদের জন্য আমরা আলাদা গাড়ির ব্যবস্থা করেছি। ছাত্র ছাত্রীদের চলাচলের জন্য ১৮৮টি গাড়ির ব্যবস্থা করেছি। বেসরকারি স্কুল কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞেস করেছি তাদের গাড়ি লাগবে কী না। তারা অনেকেই ‘না’ বলেছে। স্কুলে অনেকে নিজের গাড়িতে করে আসে। স্কুলে এসে বলে, আমি ওই গাড়িতে করে এসেছি। বাসে গেলে তো সেটা বলতে পারবে না।’

সরকার প্রধান বলেন, ‘সন্তানদের সুশিক্ষা দিতে হবে। সম্পদের অহমিকাবোধটা যেন না থাকে। সম্পদ থাকলেই সবকিছু করা যায় না, সবকিছু ভোগ করা যায় না। মহামারী করোনাভাইরাস আমাদের সেটা শিখিয়ে দিয়েছে। জানি না, কয়জন এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছে।’

তিনি বলেন, ‘দূরপাল্লার গাড়ির চালকদের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, বিকল্প চালক না থাকায় অনেককেই অদক্ষ হেলপারের হাতে গাড়ি ছেড়ে দেয় এবং দুর্ঘটনা ঘটে।’

প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমরা ৬টি মেট্রোরেল করে দিচ্ছি। মেট্রোরেলগুলো চালু হলে ঢাকা ও এর আশেপাশের এলাকায় যানজট কমে আসবে।’

এদিকে ‘জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস’ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।

দিবসটি উপলক্ষে সরকারিভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। এ তথ্য জানিয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে রয়েছে ক্রোড়পত্র প্রকাশ, আলোচনাসভা, শোভাযাত্রা ও সড়ক সচেতনতামূলক কার্যক্রম। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কদ্বীপ সজ্জিত করে সচেতনতামূলক প্ল্যাকার্ড টাঙানো হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতিতে এবার গণশোভাযাত্রার পরিবর্তে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শোভাযাত্রা করা হবে। এ ছাড়া জুম বৈঠকে নিরাপদ সড়ক বিষয়ে হবে আলোচনাসভা।

এই আলোচনা সভা বড় পর্দায় গাবতলী, সায়েদাবাদ, মহাখালী ও ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনালে লাইভ প্রদর্শন করা হচ্ছে। বিভিন্ন বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও প্রিন্ট মিডিয়ায় সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। যাত্রী ও পথচারীদের সচেতনতা বাড়াতে বাস টার্মিনালসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে প্রচারপত্র বিলি করা হচ্ছে। একইভাবে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় শোভাযাত্রাসহ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।

এবার চতুর্থবারের মতো পালিত হচ্ছে নিরাপদ সড়ক দিবস। ১৯৯৩ সালের ২২ অক্টোবর বান্দরবানে স্বামী নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের কাছে যাওয়ার পথে মর্মান্তিক এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন স্ত্রী জাহানারা কাঞ্চন। এর পর থেকে ইলিয়াস কাঞ্চন ‘নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)’ নামে একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলেন। 

নিসচার আন্দোলনের ফল স্বরুপ ২০১৭ সালের ৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রীসভার বৈঠকে ২২ অক্টোবরকে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ওই বছর থেকেই বাংলাদেশে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস পালিত হয়ে আসছে।  
এসএ/