ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

রাসিকের সড়কবাতি পোড়ানোর নেপথ্যে ২ প্রকৌশলী

রাজশাহী প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০২:৫৩ পিএম, ২ নভেম্বর ২০২০ সোমবার

রাজশাহী সিটি করপোরেশনে (রাসিক) সড়কবাতি নিয়মিতভাবে পোড়ানোর পরিকল্পনা করেছিলেন দুই প্রকৌশলী। তাদের পরিকল্পনার মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করেন রাসিকের বৈদ্যুতিক শাখার কর্মচারীরা। 

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তে এমনটা উঠে এসেছে। এ ঘটনায় পিবিআই যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

১৬৪ ধারার ওই জবানবন্দিতে উঠে এসেছে রাসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মুর্শেদ ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী শফিকুল হাসানের পরিকল্পনায় দীর্ঘদিন ধরে সড়কবাতি পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। মেয়রকে বেকায়দায় ফেলাসহ ঠিকাদারের মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য সড়কবাড়ি পোড়ানোর কাজটি তারা করছিলেন বলেও তাদের জবানবন্দিতে এসেছে।

পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ আগস্ট বৈদ্যুতিক শাখার কর্মচারী মিজানুর রহমান শাহীন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। তাতে তিনি উল্লেখ করেন, সড়কবাতি পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশনা দেন উপ-সহকারী প্রকৌশলী শফিকুল হাসান। এরপর পিবিআই শফিকুল হাসানকে গ্রেপ্তার করে। তিনি ১৭ সেপ্টেম্বর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আদালতে দেওয়া ওই জবানবন্দিতে তিনি উল্লেখ করেন, পরিকল্পনাটি করেছিলেন নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মুর্শেদ। এছাড়াও ২১ অক্টোবর কর্মচারী মো. ইব্রাহিমের দেওয়া জবানবন্দিতেও এসেছে নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মুর্শেদের নাম।

রাসিক সূত্র জানায়, রাতের ঝলমলে আলোয় আলোকিত কিছু এলাকায় হঠাৎ করেই সড়কবাতি পুড়ে যেতো। নানাভাবে তৎপরতা চালিয়েও এটি বন্ধ করতে পারছিল না সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। এরপরই মামলার সিদ্ধান্ত নেন মেয়র। গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর রাসিকের পক্ষ থেকে বোয়ালিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।

সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘গত দেড় বছরে কোটি টাকার বেশী মুল্যের সড়কবাতি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। নষ্ট হয়েছে বিভিন্ন মোড়ে বসানো হাই-মাস্ক লাইটও। 

তিনি বলেন, যেসব বাতি পুড়ে যাচ্ছিলো, সেগুলো মনে হয়েছে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে পুড়িয়ে দিচ্ছে। দেখে মনে হয়েছে কেউ গান পাউডার দিয়ে পুড়িয়েছে। বার বার সড়কবাতি পুড়ে যাওয়ার ঘটনাটি আমার কাছে রহস্যজনক মনে হয়েছে। এ কারণে মামলা করার সিদ্ধান্ত হয়।’

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী খন্দকার খায়রুল বাশার জানান, এ ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে প্রথমে গ্রেপ্তার হয় বৈদ্যুতিক শাখার কর্মচারী শাহীন। তার দেয়া তথ্যে উপ-সহকারী প্রকৌশলী শফিকুল হাসানকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। এরপরই বেড়িয়ে আসতে শুরু করে নেপথ্যে থেকে কারা এতোদিন পুড়িয়েছেন নগর সড়কের বাতি।

তিনি আরও বলেন, সর্বশেষ গত জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহের দিকে সাগরপাড়া মোড় থেকে রাণীবাজার মোড় পর্যন্ত সড়কের বাতিগুলো পুড়ে যায়। দীর্ঘ সময় ধরে সড়কবাতি পুড়ে যাওয়ার কারণ খুঁজতে তারা লাইট বুয়েটে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল। গত ১৭ সেপ্টেম্বর সেখান থেকে পাঠানো যে ফলাফল তারা পেয়েছেন, তাতে অতিরিক্ত ভোল্টেজের কারণে লাইটগুলো পুড়েছে। ফলে তারা এখন নিশ্চিত, ইচ্ছাকৃতভাবে ভোল্টেজ বাড়িয়ে সেটি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আইন কর্মকর্তা সমর পাল জানান, সড়কবাতিগুলো পুড়ে যাওয়াটি রহস্যজনক হওয়ার কারণেই মেয়রের পরামর্শে গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর তিনি মামলা করেন। পরে ওই মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই।

পিবিআইয়ের এসআই ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মহিদুল ইসলাম জানান, তাদের কাছে এ ঘটনায় জড়িত কয়েকজনের নাম এসেছে। এদের মধ্যে একজন উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও দুইজন কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। তাদের দেয়া তথ্য যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। শিগগিরই এ ঘটনার নেপথ্যের সবার নাম উন্মোচন করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হবে। 

এমবি//