ঢাকা, শনিবার   ১১ মে ২০২৪,   বৈশাখ ২৮ ১৪৩১

সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিবাদের বটিকা

মানিক মুনতাসির

প্রকাশিত : ০৫:০০ পিএম, ২ নভেম্বর ২০২০ সোমবার

কাজ করবেন বেতন পাবেন। সেটা কম বা বেশি হতেই পারে। আর যদি একেবারেই বেতন না পান তাও ভাল। কেননা, কার্ড তো আছে! ফলে এর কোনও প্রতিবাদ করতে পারবেন না। চাকরি যাবে কিন্তু বকেয়া পাওনা আদায় হবে না। প্রেস ক্লাবে গিয়ে মানববন্ধন করবেন। পরিবার পরিজন নিয়ে না খেয়ে থাকবেন, তবুও দল নিয়ে ফুটানি মারবেন। সেটা কিন্তু কমবে না। আমার নেতা, আমার নেত্রী- তাদের মতো মানুষই হয় না। কারণ, তারা মহামানুষ -এই বলে গলা ফাটাবেন। 

একইসঙ্গে তেলবাজ, দালাল আর দলন্ধদের ভোট দিয়ে নেতা বানান। তারা আপনাকে ভাঙিয়ে ফ্ল্যাট/প্লটের মালিক হবেন। ব্যাংকে ব্যালেন্স থাকবে বেশ স্বাস্থ্যসম্মত। কিন্তু আপনি বিনা চিকিৎসায় মারা গেলেও সে আপনাকে ১০ টাকা দেবে না। বরং আপনার অসুস্থতাকে কাজে লাগিয়ে আরেও কিছু ইনকাম করে নিবে। কিন্ত এসবে বাধা দেয়া যাবে না। কারণ তারা নেতা এবং আপনিই তাকে বানিয়েছেন।

আপনি পেশাদার সাংবাদিক কিন্তু আপনার কোনও প্রকৃত বন্ধু নাই। কোনও কোটিপতি আপনার বন্ধু তো হবেই না। বরং সে আপনার শত্রুই বনে যাবে। আপনার দুঃখের কথা কেউ শুনবে না। নেতারা শুনলেও কোনও উদ্যোগ নেবে না। তবে আপনার দূর্বলতার কথা আরেকজনের কাছে বলে নিজে লাভবান হওয়ার ধান্দা করবে। তাহলে আপনি কি করবেন। নিচের কাজগুলো করুন। তাহলে আপনিও ভালো থাকবেন। 

এসব বলিয়া কোনও ফল আপনি পাইবেন না। বরং সম্ভব হইলে তৈল মর্দন করিয়া কোনও লতিকামন্ডলীকে লৌহদন্ডের ন্যায় শক্ত করুন। যাহা ভাঙবেও না মচকাবেও না। মাগার কোনও কাজেও লাগবে না। অনেকটা মাকাল ফলের মতন বিভিন্ন সভা সেমিনারের ফুলদানি হিসেবে শোভা বর্ধন করিবে। সভা শেষে তাহা ডাস্টবিনে নিক্ষিপ্ত হইবে। আর যদি তাহা করিতে না পারেন তাহলে সুশীল সাজিয়া আপনার আড্ডা স্থলের কোনও ফ্রন্ট চেয়ার টেবিলে বসিয়া এরশাদ কিংবা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের পুরোধা সেজে যান, তাতে অন্তত চাকরিটা টিকিয়ে রাখিয়া মাছ ভাত খেতে পারবেন। 

এছাড়া উচু গলায় বলিতে পারিবেন এরশাদ আর ব্রিটিশ শাসন আমলে মিডিয়ার কোনও স্বাধীনতা ছিল না। কারণ তখন সাংবাদিক নেতারা কোনও দল করিতে পারিতেন না। কোনও দল বা নেতার  আগ্যাবহও ছিলেন না। বরং এখন আমরা সবাই স্বাধীন। সাংবাদিক হয়েও নিজ পছন্দের দলের লেজুড়বৃত্তি করিতে পারি। শুধু তাই নয়, দলীয় মনোনয়ন নিয়া নিজ কমিউনিটির বিরাট নেতাও হইতে পারি। আবার নিজের আড্ডাস্থলকে রাজনৈতিক দলের উপশাখা অফিস হিসেবেও বানাইতে পারি। ফলে সাংবাদিকদের স্বাধীনতা নেই এই কথা সঠিক নয় বৈকি। 

এমনকি আপনি দল না করার স্বাধীনতাও পাইতেছেন। ইচ্ছা না হইলে কোনও দল করিবেন না। কেউ আপনাকে বাধ্য করিবে না। তবে আপনি কোনও সুযোগ সুবিধা না পাইলে কাউকে দোষারোপ করিতেও পারিবেন না। কারণ সেটা তো আপনারই অর্জন। 

এদিকে আমি নিজ আসরে বসিয়া গলা উচিয়া চিল্লাইয়া বলিতে পারি- আমি বিরাট সাংবাদিক। অমুক নেতার ব্লেস আমার সব সময় আছে। ফলে আমি-ই তো বড়। আমি তো অমুক ধমুক ডট.কম, ফট.কমের সম্পাদক। ফলে অন্যরা আমার কাছে নস্যি। এসব নিয়া বলতে গেলে আপনার চাকরি হালকাও হতে পারে।

সুতরাং আপনি সুশীল সাজুন। কলম গুটিয়ে হাত পা ছাড়িয়া আড্ডা মারুন। আপনার কোনও সহকর্মী জেলে গেলে কিংবা, গুম, অপহৃত হলে ভেবে নিন তিনি কৃতকর্মের ফল ভোগ করছেন। ফলে নিজে বাঁচুন। প্রতিবাদও করুন। পেশাটা গোল্লায় যাক।

এনএস/