ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

‘মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস’ কাল

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০১:০৫ পিএম, ৬ নভেম্বর ২০২০ শুক্রবার

আগামীকাল ৭ নভেম্বর। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন দিবসটি ‘মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস’ হিসেবে এবং ‘সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থান’ দিবস হিসেবে পালন করে থাকে।

বস্তুতো সিপাহী বিপ্লবের নামে এদিন থেকে শুরু হয় মুক্তিযোদ্ধা সেনা সদস্যদের হত্যা প্রক্রিয়া। ১৯৭৫ সালের এদিনে সিপাহী বিপ্লবের নামে প্রথমে হত্যা করা হয় তিন খ্যাতনামা মুক্তিযোদ্ধাকে। এরা হলেন, খালেদ মোশাররফ বীর উত্তম, কে এন হুদা বীর উত্তম এবং এটি এম হায়দার বীর বিক্রম। দশম বেঙ্গল রেজিমেন্টের সদর দপ্তরে অবস্থানকালে সকালে তাদের একেবারে কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করে কোম্পানি কমান্ডার আসাদ এবং জলিল।

সাংবাদিক অ্যান্থনি ম্যাসকারেনহ্যাস এ ব্যাপারে লিখেছেন, ‘এছাড়াও এদিন উচ্ছৃঙ্খল জওয়ানরা একজন মহিলা ডাক্তারসহ ১৩ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করে। এমন কি একজন সেনা কর্মকর্তার স্ত্রীকেও এ সময় হত্যা করা হয়।’

লেখক গবেষক গোলাম মুরশিদ তার ‘মুক্তিযুদ্ধ ও তারপর’ গ্রন্থে লিখেছেন, শাফায়াত জামিল বিদ্রোহের খবর পেয়েও থেকে গিয়েছিলেন বঙ্গভবনে। কিন্তু যখন বিদ্রোহী সেনারা শ্লোগান দিতে দিতে বঙ্গভবনের কাছাকাছি পৌঁছে যায় তখন তিনি সঙ্গীদের নিয়ে দেয়াল টপকে পালিয়ে যান। এতে তার পা ভেঙ্গে যায় এবং ভাগ্যচক্রে পরে ধরা পড়েন। তার জায়গা হয় সামরিক হাসপাতালে। তিনি বেঁচে যান।

এর আগে ৬ নভেম্বর ভোর রাতে গৃহবন্দি জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করতে যায় বঙ্গবন্ধুর খুনি ফারুকের ল্যান্সার বাহিনীর একটি দল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যায় যার বলিষ্ঠ ভূমিকা ছিল সেই ল্যান্সার মহিউদ্দিন ছিল এই দলের নেতৃত্বে। তারা জিয়াকে মুক্ত করে নিয়ে আসে কর্নেল রশিদের দুই নম্বর অ্যার্টিলারি রেজিমেন্টের দপ্তরে।

গোলাম মুরশিদ আরো বলেন, মুক্তি পেয়েই জিয়াউর রহমান সদ্য নিযুক্ত রাষ্ট্রপতির সঙ্গে (বিচারপতি আবু সাদত সায়েম) কথা না বলেই বেতারে ভাষণ দিতে চলে যান। ’৭১-এর ২৭ মার্চের মতোই সংক্ষিপ্ত ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর অনুরোধে তিনি প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।

একাত্তরের ২৭ মার্চ তিনি প্রথমে নিজেকে রাষ্ট্রপতি হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন। পরে শুধরে নিয়েছিলেন। এবারও তিনি নিজেকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসাবে ঘোষণা করেন। পরে উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হয়েছিলেন। পরবর্তীতে একে একে গণভোট, প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, স্থানীয় পরিষদ নির্বাচন এবং পার্লামেন্ট নির্বাচন দিয়ে জিয়াউর রহমান নিজেকে প্রেসিডেন্ট হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করলেও তার আমলে ২০টির বেশি অভ্যুথান হয়েছিল বলে বিভিন্ন তথ্যে পাওয়া যায়।

এক হিসাবে প্রায় প্রতি তিন মাসে একটি করে অভ্যুথানের চেষ্টা হয়েছিল জিয়ার শাসন আমলে। এ ব্যাপারে গোলাম মুরশিদ বলেন, ‘একবার ফারুক-রশিদ ইত্যাদির শৃঙ্খলা ভঙ্গকে ক্ষমা করার পর জিয়া সেনাবাহিনীকে শৃঙ্খলার মধ্যে ফিরিয়ে আনতে খুবই চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু একটার পর একটা অভ্যুথান সেনাবাহিনীতে হতেই থাকে। প্রতিটি অভ্যুথানের পর বহু সেনা সদস্যকে তিনি ফাঁসিতে ঝোলান। অনেককে বিনা বিচারেও পাইকারিভাবে হত্যা করে গণকবর দেয়া হয়েছিল। বিশেষ করে ৭৭ সালের ২ অক্টোবর বিমান বাহিনীর অভ্যুথানের পর শত শত লোককে বিনা বিচারে অথবা সংক্ষিপ্ত বিচারে হত্যা করা হয়েছিল। ফলে এমন অবস্থা দাঁড়ায় যে, বিমান বাহিনীতে মাত্র ১১ জন কর্মকর্তা থাকেন। তাদের মধ্যে বিমান চালাতে পারতেন মাত্র তিনজন।’ 

মার্কাস ফ্র্যান্ডার মতে, এই অভ্যুথানের কারণে আড়াই হাজার সেনা সদস্য নিহত হয়।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ দিনটিকে সিপাহী জনতার অভ্যুত্থান দিবস পালন করবে। এ উপলক্ষে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যকারি কমিটি ৭ নভেম্বর সকাল ১১টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ শহীদ কর্ণেল তাহের মিলনায়তনে জাসদ নেতা শহীদ কর্নেল তাহের বীর উত্তমের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।

দলের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি জাসদের সকল জেলা-উপজেলা কমিটিকে কেন্দ্রীয় কর্মসুচির অনুরুপ কর্মসুচির মাধ্যমে ঐতিহাসিক সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থান দিবস পালন করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।
সূত্র : বাসস
এসএ/