ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সীতাকুণ্ডের অবিসংবাদিত নেতা কাসেম মাস্টারের প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধা

মোহাম্মদ ইউসুফ

প্রকাশিত : ১০:২৭ পিএম, ২৩ নভেম্বর ২০২০ সোমবার

প্রয়াত এ বি এম আবুল কাসেম মাস্টার

প্রয়াত এ বি এম আবুল কাসেম মাস্টার

সীতাকুণ্ডের দুইবারের সাবেক এমপি ও প্যানেল-স্পিকার, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সাবেক সভাপতি, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সভাপতি ও সীতাকুণ্ড উপজেলা আওয়ামী লীগের আমৃত্যু সভাপতি এ বি এম আবুল কাসেম মাস্টারের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। 

২০১৫ সালের এ দিনেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। প্রয়াত এ নেতার মৃত্যু দিবসে এ বি এম আবুল কাসেম ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে স্মরণসভাসহ নানা কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। বিশেষ করে ত্যাগী এ নেতার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক-জীবনাবলম্বনে প্রকাশিত হয়েছে ‘কাসেম মাস্টার’ শিরোনাম শীর্ষক এ বি এম আবুল কাসেম স্মারকগ্রন্থ।

কাসেম মাস্টার ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দের ২১ ফেব্রুয়ারি সীতাকুণ্ড উপজেলার দক্ষিণ সলিমপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আবদুল জলিল, মা আমেনা খাতুন। তিনি পড়াশোনা করেন কাট্টলী নুরুল হক চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজে। কাট্টলী হাইস্কুলে তিনি শিক্ষকতাও করেন। এ কারণেই তিনি কাসেম মাস্টার হিসেবে পরিচিত। তাই তার জীবনাবলম্বনে রচিত স্মারকগ্রন্থের নামকরণ করা হয়েছে ‘কাসেম মাস্টার’।

জনসেবার মহান ব্রত নিয়ে যারা রাজনীতিতে আসেন, যারা ভোগ নয়, ত্যাগেই বিশ্বাসী, ব্যক্তিস্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে যারা
আর্তমানবতার সেবায় নিজেদের উৎসর্গ করেন, কাসেম মাস্টার তাঁদেরই একজন। কর্মজীবনের শুরুতে শিক্ষকতা করেছেন বলে কাসেম মাস্টার হিসেবে তিনি সমধিক পরিচিত ছিলেন। দেশ, মাটি ও নীতি আদর্শকে ভালোবেসে তিনি রাজনীতির শেকড় থেকে শিখরে ওঠেছিলেন। 

ব্যক্তিগতভাবে নিবেদিতপ্রাণ এ কর্মীবান্ধব নেতা সীতাকুণ্ডের “নেলসন ম্যাণ্ডেলা” হিসেবে সম্মোধন করতাম। ধৈর্যের পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ ছিলেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে আওয়ামী লীগ থেকে ৫বার মনোনয়ন দিয়েছিলেন। পঁচাত্তরোত্তর আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিশ্চিত পরাজয়ের ঝুঁকি নিতে সীতাকুণ্ডের কোনো নেতা যখন সাহস করতেন না, তখন কাসেম মাস্টার বারবার এমপি প্রার্থী হয়ে আওয়ামী লীগের ঝাণ্ডা উড্ডীন রেখেছিলেন। 

কাসেম মাস্টার সত্যিকার অর্থে তৃণমূল থেকে গড়ে ওঠা একজন জনপ্রতিনিধি ছিলেন। হঠাৎ করে তিনি এমপি নির্বাচিত হননি। শেকড় থেকে তিনি শিখরে উঠেছিলেন। ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত টানা ১৫ বছর তিনি সলিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। দু'বার তিনি চট্টগ্রাম ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সমিতির চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সীতাকুণ্ড সংসদীয় এলাকা থেকে দুইবার এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে প্রথম এমপি নির্বাচিত হয়ে জাতীয় সংসদের প্যানেল স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন। সংসদ-সদস্য থাকাকালীন তিনি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৯৭ সালে তিনি সংসদীয় দলের সদস্য হিসেবে চীন সফর করেন। দ্বিতীয়বার এমপি হওয়ার পর কাসেম মাস্টার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এ সময়ে তিনি বাংলাদেশ-কোরিয়া পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।

কাসেম মাস্টার আওয়ামী লীগের একজন পোড়খাওয়া ত্যাগী নেতা ছিলেন। টানা এক যুগের বেশি সময় তিনি সীতাকুণ্ড উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগেরও তিনি আমৃত্যু সভাপতি ছিলেন। দীর্ঘ সময়ে তিনি সীতাকুণ্ড আওয়ামী লীগের একচ্ছত্র নেতা ছিলেন। বলা যায়, এমপি থাকাকালীন সীতাকুণ্ডের আওয়ামী রাজনীতি ছিল তারই একক নিয়ন্ত্রণে। দলের নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের সঙ্গেও তার সম্পর্ক ছিল খুবই ঘনিষ্ঠ ও নিবিড়। তার স্মরণশক্তি ছিল অত্যন্ত প্রখর। ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার সরাসরি সম্পর্ক ছিল। তাদের নামধাম ছিল তার নখদর্পণে। সীতাকুণ্ড উপজেলার সৈয়দপুর থেকে সলিমপুর পর্যন্ত বিয়ে-শাদি থেকে শুরু করে সামাজিক যে কোনো ছোটখাটো অনুষ্ঠানে তার উপস্থিতি সবার নজর কাড়তো।

কাসেম মাস্টার একজন সমাজহিতৈষী ও শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্ব ছিলেন। লতিফপুর আলহাজ আবদুল জলিল উচ্চ বিদ্যালয়, দক্ষিণ সলিমপুর আমেনা বিদ্যানিকেতন, সলিমপুর আবাসিক এলাকা বিদ্যাপীঠ, বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের ধর্মপুর আবুল কাসেম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ছিলেন। 

এছাড়া তিনি সীতাকুণ্ড ডিগ্রি কলেজ, সীতাকুণ্ড বালিকা বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়, বিজয়স্মরণী কলেজ, মোস্তফা হাকিম কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ছিলেন। অন্যদিকে তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির আজীবন সদস্য, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের পরিদর্শক ছাড়াও এলাকার বহু সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন। সীতাকুণ্ড এলাকার সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য এ জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের একক প্রচেষ্টায় সীতাকুণ্ড সদর ইউনিয়নকে পৌরসভায় রূপান্তর করা হয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এমপি আবুল কাসেম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীকে সীতাকুণ্ডে এনে যুগান্তকারী নানা উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ শুরু করেছিলেন। আজকের এই দিনে তাঁকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।

মোহাম্মদ ইউসুফ : প্রধান সম্পাদক, সাপ্তাহিক চাটগাঁর বাণী।