ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১০ ১৪৩১

হিলিতে পুলিশের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ 

হিলি প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৬:২২ পিএম, ৩০ নভেম্বর ২০২০ সোমবার

দিনাজপুরের হিলিতে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান চালিয়ে অভিনব কায়দায় ফেন্সিডিল পাচারের সময় ৫৪ বোতল ফেনসিডিলসহ তিনজনকে আটক করে পুলিশ। এসময় ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা নেওয়া হলেও এজাহারে টাকার কথা উল্লেখ করা হয়নি বলে অভিযোগ আটককৃতদের স্বজনের। শুধুমাত্র ফেনসিডিল উদ্ধার দেখিয়ে আসামীদের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করে তাদেরকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এর ফলে পুলিশের বিরুদ্ধে আসামীদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।

গত ২৬ নভেম্বর বৃহস্পতিবার অভিযান চালিয়ে ফেনসিডিলসহ তাদের আটক করে পুলিশ। আটককৃতরা হলেন, হিলির দক্ষিণ বাসুদেবপুরের চুড়িপট্টি গ্রামের রানা হোসেনের স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন (২৬), জেলার বিরামপুর উপজেলার দেবীপুর-বনখুনজা গ্রামের মৃত ইসমাইল হোসেনের ছেলে টগর হোসেন (৩২) এবং জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার তাঁতীপাড়া গ্রামের রিপন হোসেনের স্ত্রী মুক্তা বেগম (২৯)। এছাড়াও আরও দুজনকে পলাতক আসামী করা হয়েছে।

স্থনীয় এলাকাবাসী ও দায়েরকৃত এজাহার সূত্রে জানা গেছে, হিলির চুড়িপট্টি এলাকার মাদক ব্যবসায়ী চাঁদনির বাড়ি থেকে সিলিন্ডারের ভেতর করে বিশেষ কায়দায় মাদক নিয়ে বিরামপুরের দিকে যাচ্ছে। এমন খবরের ভিত্তিতে গত ২৬ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফেরদৌস ওয়াহিদের নেতৃত্বে এসআই নিহার চন্দ্র রায়সহ পুলিশের একটি দল হিলির সিপি রোডে অবস্থান নেয়। এসময় রিক্সাযোগে এক ব্যাক্তি সিপি রোডের দিকে আসলে পুলিশ সদস্যরা তাকে থামার সংকেত দেয়। রিক্সাটি থামামাত্র যাত্রীর সিটে বসা একব্যাক্তি পায়ের কাছে চটদিয়ে মোড়ানো কিছু একটা রেখে পালানোর চেষ্টা করে এসময় টগর নামের একজনকে আটক করা হয়। পরে উপস্থিত সকলের সামনে সেই সিলিন্ডারের ভেতর হতে ৩৫ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়। এর পরে তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ি হিলির দক্ষিণ বাসুদেবপুরের চুড়িপট্টি এলাকায় মুক্তার হোসেনের বাড়ীতে তল্লাশী চালায়। এসময় সেখান থেকে আরো তিনটি সিলিন্ডার উদ্ধার করা হয়, এর ভেতর থেকে ১৯ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয় ও সাবিনা ও মুক্তা নামের দুজনকে আটক করা হয়। যদিও এসময় মনি ও চাঁদনি নামের আরো দুজন পালিয়ে যায়। পরে বাদী নিহার চন্দ্র রায় ৫৪ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার দেখিয়ে এ ঘটনায় জড়িত তিনজনের বিরুদ্ধে থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করেন। যার নং ১৯, তাং ২৬,১১,২০ইং। পরেরদিন তাদেরকে দিনাজপুর আদালতে প্রেরন করা হয়।

আসামী সাবিনার স্বামী রানা হোসেন অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ ওইদিন বাসায় কোথা থেকে এক লোককে ফেনসিডিলসহ আটক করে নিয়ে আসে। বাসায় সকলকে দেখিয়ে দিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করে এদের মধ্যে কেউ ছিল কিনা, তখন সে এরা কেউ ছিলনা বলে জানায়। এরপরে তারা অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে আমার ছোটবোন চাদনির শোবার ঘরে ঢুকে সবকিছু তছনছ করে ড্রয়ারে দু জায়গায় রাখা ১লাখ ৬৫ হাজার টাকা নিয়ে যায়। সঙ্গে একটি স্বর্নের আংটি ও চেইন ছিলো সেটিও নিয়ে গেছে। এরপরে সে বলেন এই কথাগুলো আপনাদের বলছি এর কারনে হয়তো প্রশাসন আমাকে নিয়ে যেতে পারে আমার ক্ষতি করতে পারে। একই ধরনের অভিযোগ তার বাবা মুক্তার হোসেন ও তার মায়ের। 

পুলিশি অভিযানের সময় সেখানে কর্মরত রাজমিস্ত্রি জনি হোসেন বলেন, আমরা বাসায় রাজমিস্ত্রির কাজ করতেছিলাম, এসময় বাসায় প্রথমে সিভিলে দুজন আসেন। তারা সকলের নাম জিজ্ঞাসা করছিলেন, সে মোতাবেক সকলেই তাদের নাম বলে। এর পরে চাঁদনি কে, তার দরকার জানিয়ে ঘরের ভেতরে গিয়ে ড্রয়ার খুলে কিযেন খুজতে শুরু করে দেয়। তারপরে তারা আমাকে ডেকে বলে আমরা কিছু নিয়েছি নাকি দেখো আমাদের চেক করতে পারো তোমরা বলে চলে যায়। তবে টাকা নিয়েছে কিনা এবিষয়ে কিছু বলতে পারবোনা।   

হাকিমপুর থানার এসআই নিহার চন্দ্র রায় বলেন, অভিযোগ থাকলে কিছু করার নেই, আর অভিযোগ আমাকে বলে লাভ আছে বলে মন্তব্য করেন। আমি সেখানে তল্লাশী করার সময় শত শত লোক ছিল, এধরনের ঘটনা অসম্ভব ও কেন থাকবে বলেও মন্তব্য করেন। তাদের পরিবারের সবার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, তাদের একটা আক্রোশ আছে আমাদের উপর তাই তারা অভিযোগ করবেই তো। কেউ ক্ষতিগ্রস্থ হলে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে এটি আমার চাকুরির বয়স থেকেই দেখে আসছি বলেও মন্তব্য করেন।

হাকিমপুর থানার ওসি ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, টাকা নেওয়ার বিষয়টি সত্য হওয়ার কোন মতেই সুযোগ নেই ও প্রশ্নই আসেনা বলে মন্তব্য করেন। আর যদি টাকা উদ্ধারের বিষয় থাকতো থাহলে তো মামলা আরো শক্তিশালী হতো মানি লন্ডারিং এর মামলা করতাম। ফেনসিডিল পেয়েছি, এরপরে মামলা টি যেখানে শেষ হওয়ার কথা সেখানে শেষ না করে আরেকটু সামনে এগিয়েছি যে আমরা তাতে করে তাদের ক্ষতি হয়েছে, সিলিন্ডারগুলো তার বাসায় পেয়েছি এটাতে তাদের ক্ষতি হয়েছে। একারনে তারা আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছে।

হাকিমপুর সার্কেলের অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রাপ্ত সহকারি পুলিশ সুপার মিথুন সরকার বলেন, তারা যদি আমার নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন সেক্ষেত্রে বিষয়টি তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা যারা জড়িত আছেন ঘটনা যদি প্রমানিত হয় তাহলে তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনা হবে।

আরকে//