ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সুস্থ সাহিত্য বিকাশে কাজ করছে ‘উন্মেষ’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:২১ পিএম, ৮ ডিসেম্বর ২০২০ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৮:২৩ পিএম, ৮ ডিসেম্বর ২০২০ মঙ্গলবার

সাহিত্য পিপাসুদের জন্য সুস্থ সাহিত্য বিকশিত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে উন্মেষ সাহিত্য সাময়িকী। বাংলা সাহিত্যকে নিয়ে খোলামেলা ভাবনার এই প্রশ্রয় অবলম্বনের যাত্রা খুব বেশি দিনের নয়। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে একটি সাহিত্য আড্ডার মধ্য দিয়ে উন্মেষের পথচলা সুগম হয় সাজেদুর আবেদীন শান্ত (সম্পাদক) ও সাকি সোহাগের (নির্বাহী সম্পাদক) হাত ধরে।

বাংলা সাহিত্যকে এগিয়ে নেওয়ার মানসে এই দুই তরুণকে যে কোলাকৌশলগুলো অবলম্বন করতে হবে; তা নির্দেশ দিয়ে সহযোগিতা করে আসছেন উন্মেষের উপদেষ্টা সম্পাদক শ্রদ্ধেয় ইকবাল কবির লেমন। এই স্বল্প সময়ে বাংলা সাহিত্যে একটি অনন্য সাহিত্য সাময়িকী হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে উন্মেষ, জায়গা করে নিয়েছে হাজার হাজার পাঠকসহ লেখক ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের হৃদয় মন্দিরে।

বাংলাদেশে এখন প্রায় সবখানে বাংলা সাহিত্যকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে সাহিত্য চর্চা হচ্ছে। এটা আরও সহজ হয়েছে তথ্য ও প্রযুক্তির বহুল ব্যবহারের কারণে। ইন্টারনেট ঘাটলেই আমরা পেয়ে যাচ্ছি প্রিয় লেখকের লেখা গল্প, উপন্যাস, কবিতা, ছড়া, প্রবন্ধ-নিবন্ধ।

এখন অনেকটাই বলা যায় যে- আমাদের পড়া, লেখা, শেখা, চর্চা সব হচ্ছে ইন্টারনেটের মাধ্যমেই। আমরা ফেসবুক খুললেই দেখতে পাই নানান সাহিত্য চর্চার গ্রুপ, পেজ, ওয়েবসাইট। কিন্তু সত্যিই কি আমরা সেই সব সাহিত্য গ্রুপ, পেজ বা ওয়েবসাইড থেকে সুস্থ সাহিত্য চর্চা করতে পারছি? পারছি কি আমরা শিখতে? পারছি কি আমরা বাংলা সাহিত্যকে ন্যূনতম এগিয়ে নিতে? 

এই প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, অবশ্যই আমরা সাহিত্য চর্চা করতে পারছি। কিন্তু সেটা ফেসবুকের সকল সাহিত্য চর্চার গ্রুপ থেকে নয় বা সব ওয়েবসাইট থেকেও নয়। কিছু কিছু সাহিত্য চর্চার গ্রুপ ও ওয়েবসাইটে এখনও অনেক ভালোভাবে সাহিত্য চর্চা করা যায়। জানা যায় অনেক কিছু, শেখার থাকে অনেক কিছু। লেখার গঠন, বানান, দাড়ি-কমা ইত্যাদি। কিন্তু এই কিছু কিছু সুস্থধারার সাহিত্য চর্চার ওয়েবসাইট খুঁজে পাওয়া মুশকিল বর্তমান এই ফেসবুকীয় সাহিত্য চর্চার বাজারে।

শুধু সেই চিন্তাধারা থেকে উন্মেষ-এর উৎপত্তি। একজন পাঠক যখন উন্মেষের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে কোনও লেখা পড়বে; সেই লেখাটা যদি মানসম্মত না হয়, সেই লেখায় যদি শেখার মতো কিছু না থাকে ও পাঠক লেখাটা পড়ে যদি কোনো অনুভূতির জন্ম দিতে না পারে তাহলে সেই পাঠক আর কোনও দিন উন্মেষের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করবে না। এটাই স্বাভাবিক। শুধু সেই জায়গা থেকে উন্মেষে প্রকাশিত লেখাগুলো অনেকটা মানসম্মত বলে আমি আশাবাদী।

উন্মেষের শুরুতে যেমন লেখা আহ্বান করেও লেখকের সাড়া পাওয়া যায়নি; তেমনি এখন উন্মেষে অনেক লেখক লেখা জমা দিয়ে নিজে থেকে খোঁজ নেয়। এই জায়গায় পৌঁছাতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে উন্মেষকে। অনেকের কথা হজম করতে হয়েছে। যদিও উন্মেষ আজ সেই সব শুভাকাঙ্ক্ষীদেরই ধন্যবাদ জানায়, কৃতজ্ঞতা জানায়। কারণ, অনেকের ভালো-মন্দ মতামতেই আজ উন্মেষ এখানে দাঁড়িয়ে।

শুরুর দিকে লক্ষ করা যায়, উন্মেষে যেসব লেখা প্রকাশিত হতো, তা নিতান্তই কচি হাতের লেখা। আসলে সে সময় অনেকেই লেখা দিতে চাইতো না উন্মেষে। সাজেদুর আবেদীন শান্ত’র কঠোর ও দক্ষ সম্পাদনায় উন্মেষ আজ তার এই চেহারা দেখতে পাচ্ছে।

এ পর্যন্ত উন্মেষ হতে অনলাইন ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয়েছে বেশ ক’টি। উন্মেষকে এগিয়ে নেওয়ার পেছনে এই অনলাইন ম্যাগাজিনগুলো বড়ই ভূমিকা রেখেছিল। কারণ, সেখানে দেশের প্রথম শ্রেণির লেখকরা লিখেছিল। জানিয়েছিল তাদের অভিমত। যা উন্মেষকে এগিয়ে নেওয়ার সিঁড়ি দেখে দেয়।

অনলাইন ম্যাগাজিনের পাশাপাশি পাঠক ও লেখকের ভালোবাসায় ঊন্মেষ আবারো আসছে ডিসেম্বরে। প্রিন্ট ভার্সনে উন্মেষ ‘বিজয় সংখ্যা’ বের করার প্রস্তুতি নিয়েছে। উন্মেষের এই প্রস্তুতি সফল হোক, সেই কামনাই করি। উন্মেষসহ দেশের সব সুস্থ সাহিত্য চর্চার প্ল্যাটফমের্র জন্য রইলো শুভকামনা। সবুজে ঘেরা সোনার এই বাংলাদেশ এগিয়ে যাক সুস্থধারার সাহিত্য সংস্কৃতিমনা মস্তিষ্ক নিয়ে।

২০১৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর উন্মেষ সাহিত্য সাময়িকী তার প্রথম স্বাধীনতা সংখ্যা বের করে। প্রিন্ট ভার্সনে বের করার পরিকল্পনা করা হলেও শেষ পর্যন্ত কোনও এক কারণে তা সম্ভব হয়নি। অনলাইন ভার্সনেও যে ‘উন্মেষ’ এতটা সাড়া পাবে পাঠকের কাছে, তা কেউ ভাবেনি। 

মায়ের ভাষাকে নিজের রক্ত দিয়ে আপন করে নিতে হয়েছিল ১৯৫২ সালে ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। সেই রক্তাক্ত রাজপথে পরে থাকা ভাষা শহীদদেরকে শ্রদ্ধা জানিয়ে উন্মেষ সাহিত্য সাময়িকী ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ‘একুশে সংখ্যা’ কাগজে বের করে। যা উন্মেষকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়।

সামনে এগিয়ে চলাকে অব্যাহত রাখতে উন্মেষ আবার ২০২০ সালে এসে ঈদ সংখ্যা ‘আনন্দবিথী’ অনলাইন ভার্সনে প্রকাশ করে। এই আনন্দবিথী নামকরণে যার নামটা লেখা থাকবে চিরকাল, তিনি সহজ মানুষ, লালন গবেষক ড. আজাদুর রহমান। পাঠকের সাড়া আর লেখকের ভালোবাসায় উন্মেষ সাহিত্য সাময়িকী বর্ষাপাগল দেশের অন্যতম কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদকে উৎসর্গ করে আরও একটি সংখ্যাকে জন্ম দিতে সক্ষম হয়।

শ্রাবণ সংখ্যার ‘রিমঝিম’ নামকরণে যার মেধা ক্ষয়িত হয়েছে, তিনি উন্মেষ-এর উপদেষ্টা সম্পাদক ইকবাল কবির লেমন। এই সংখ্যাটি প্রিন্ট আকারে বের করার সব ব্যবস্থা করা হলেও প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস কোভিড-১৯ এর প্রভাবে তা আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এই সংখ্যায় দেশের জনপ্রিয় লেখকেবৃন্দ লেখা দিয়ে সংখ্যাটিকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলেছিলেন। 

‘রিমঝিম’ এ লিখেছিলেন- শ্রদ্ধাভাজন কবি নির্মলেন্দু গুণ, অসীম সাহা, আনিসুল হক, সাদাত হোসাইনসহ আরও অনেকে।

সর্বশেষ ২০২০ ডিসেম্বরের ১ তারিখে দেশ ও জাতীর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে উন্মেষ সাহিত্য সাময়িকীর ক্ষুদ্র নিবেদন 'বিজয় সংখ্যা-২০২০’ বের করা হয়। যা ইতিমধ্যেই বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।

এনএস/