ঢাকা, শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ব্যতিক্রমধর্মী যোদ্ধা চট্টগ্রামের মর্জিনা বেগম (ভিডিও)

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৩:৫৭ পিএম, ১৭ ডিসেম্বর ২০২০ বৃহস্পতিবার

একাত্তরের এক ব্যতিক্রমধর্মী যোদ্ধা চট্টগ্রামের মর্জিনা বেগম। মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময় খাবার ও আশ্রয়সহ সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা দিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে অর্থ সংগ্রহ করেছেন মুক্তিযুদ্ধের জন্য। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর চোখ এড়াতে কখনো সেজেছেন ভিক্ষুক, কখনো পাগল। তার সাহসিকতা ও বীরত্বের গল্প শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষকরা।

বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা আলোড়িত করে সে সময়ের ২২ বছর বয়সী গৃহবধু মর্জিনা বেগমকে। দেশের জন্য কাজ করার অদম্য ইচ্ছা জেগে উঠে তার মধ্যে। সদ্যজাত সন্তানকে দোলনায় ঘুম পাড়িয়ে ছুটে যান মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায়। যোগদেন গেরিলা যোদ্ধা মৌলভী সৈয়দের সাথে। ভিক্ষুক সেজে অর্থ জোগাড় করে, খাবার পরিবেশন করে আশ্রয় দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করেন তিনি। সেসব নিয়ে স্মৃতিচারণ করলেন মর্জিনা বেগম।

মর্জিনা বেগম জানান, এক এক সময় ভিন্ন ভিন্ন রূপ নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভিক্ষা চেয়েছি, তা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের খাবারের ব্যবস্থা করেছি।

নগরীর ঈদগাহ, বৌ বাজারের রামপুরা এলাকার এই বাড়িটিই ছিল তখন মুক্তিযোদ্ধাদের নির্ভরতার ঘাঁটি। এই বাড়িতে তিনি গড়ে তুলেছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প। যুদ্ধদিনের গল্প শোনান ইতিহাসের সাক্ষী এই নারী।

স্মৃতিচারণ করে মর্জিনা বেগম বলেন, ওদেরকে কি দরকার, রাতে ওদের কাছে জিজ্ঞেস করি। পরে তা ওদের হাতে তুলে দিয়েছি।

শৈশবে বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য হওয়ার গল্পও বললেন মর্জিনা বেগম। তিনি জানান, বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য-স্মৃতি তাকে আজীবন সৎ থাকতে, অনুপ্রাণিত করেছে। 

মর্জিনা বেগম বলেন, যখন আমি ৭ বছর বয়সের তখন পায়জা-পাঞ্জাবি পড়া বঙ্গবন্ধুকে দেখি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছেন। তখন উনি আমাকে ঝড়িয়ে ধরে কোলে নিয়েছেন।

তার স্বামী শামসুল আলম চৌধুরীও ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। তাদের ছেলেমেয়েরাও এমন বাবা-মা পেয়ে গর্ববোধ করেন।

মর্জিনা বেগমের সন্তান তারেক মাহমুদ চৌধুরী পাপ্পু বলেন, আমার মা বঙ্গবন্ধুর ডাকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধে নেমেছিলেন। এতে আমি সবচেয়ে বেশি গর্ববোধ করি।

মর্জিনা বেগমের দেশপ্রেম ও সাহসী ভূমিকার কথা স্মরণ করে এখনো উজ্জীবিত হন মুক্তিযোদ্ধারা। 

মুক্তিযোদ্ধা অমল মিত্র বলেন, তিনি বিভিন্নভাবে আমাদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন। 

গবেষকরা বলছেন, মর্জিনা বেগম এবং তার মতো মানুষরা মুক্তিযুদ্ধে যে অবদান রেখেছে, তার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি থাকা উচিত। 

মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, ওনাকে মুক্তিযোদ্ধা তো বলাই যায়। পারলে আরও বেশি বলা উচিত, কারণ উনি নিজের বাড়িতে থেকে ঝুঁকি নিয়ে সমস্ত কাজ করেছেন।

ড. খাস্তগীর বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে ১৯৬৫ সালে এসএসসি এবং ১৯৬৭ সালে নাসিরাবাদ মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন মর্জিনা বেগম। সেই সময়েই তিনি আন্দোলন সংগ্রামে যুক্ত হন।
ভিডিও :

এএইচ/এসএ/