ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

নওগাঁ হানাদার মুক্ত দিবস ১৮ ডিসেম্বর

নওগাঁ প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০২:৪৮ পিএম, ১৮ ডিসেম্বর ২০২০ শুক্রবার

১৬ ডিসেম্বর সারাদেশে বিজয় দিবস পালিত হলেও মহান স্বাধীনতা বিজয়ের দুদিন পর ১৮ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয় নওগাঁ। এদিন প্রায় দুই হাজার পাকিস্তানী সশস্ত্র সেনাবাহিনী যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করার মধ্যদিয়ে হানাদার মুক্ত হয়। 

২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার পর ২১ এপ্রিল পর্যন্ত মুক্ত ছিল নওগাঁ। পরদিন ২২ এপ্রিল নওগাঁ পাক হানাদারদের দখলে চলে যায়। পরবর্তীতে পাক হানাদার বাহিনীরা জেলার বিভিন্ন স্থানে হত্যা, লুট, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণসহ বিভিন্ন তাণ্ডব চালায়। শত শত মুক্তিকামী  মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে বর্বর পাকিস্তানী সেনারা। 

জেলার বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে সম্মুখযুদ্ধ হয় পাক বাহিনীর। সর্বশেষ ১৯৭১ এর ১০ ডিসেম্বর জেলার রানীনগর উপজেলা ও পার্শ্ববর্তী বগুড়ার সান্তাহার রেলওয়ে জংশন শহর ১২ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয়। এ সময রানীনগর ও সান্তাহারে অবস্থানরত পাক বাহিনী ও অবাঙালিরা ১৪ ডিসেম্বর রাতের মধ্যে নওগাঁ শহরের পার-নওগাঁ, কেডি স্কুলে আশ্রয় নেয়। এ সময় হানাদার বাহিনী নওগাঁ ক্যান্টনমেন্ট এলাকা, সাবেক থানা চত্বর, আদালত পাড়া ও এসডিও বাসভবন চত্বরে আত্মরক্ষামূলক প্রতিরক্ষা বেষ্টনী গড়ে তোলে।

১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ঢাকায় আত্মসমর্পণ করে। এ খবর শোনার পরও নওগাঁয় পাক হানাদাররা অত্মসমর্পণ করবে না বলে ঘোষণা দেয়। এতে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তৎকালীন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার জালাল হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৭ ডিসেম্বর সকাল ৭টার দিকে প্রায় ৩৫০ মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে নওগাঁ শহর ঘিরে ফেলে। মুক্তিযোদ্ধারা ওইদিন শহরতলীর জগৎসিংহপুর ও খলিশাকুড়ি গ্রামে অবস্থান নিয়ে পাক বাহিনীর উপর আক্রমণ চালায়। এ সময় পাকা হানাদাররা ভারী অস্ত্র ব্যবহার করে। এভাবে একটানা রাত ৮টা পর্যন্ত উভয় পক্ষের মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। 

এই যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা ইচাহাক আলী খাঁন, ফরিদ হোসেন, আমজাদ হোসেন, ওসমান, শাহাদত আলী মীর ও কিশোর মুক্তিযোদ্ধা অছিম উদ্দিনসহ ৬ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।

১৮ ডিসেম্বর শনিবার সকালে বগুড়া থেকে অগ্রসরমান ভারতীয় মেজর চন্দ্রশেখর, পশ্চিম দিনাজপুর বালুরঘাট থেকে পিবি রায়ের নেতৃত্বে মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী নওগাঁয় প্রবেশ করলে হানাদার বাহিনীর আর কিছুই করার ছিল না। ফলে সকাল ১০টার দিকে প্রায় দুই হাজার পাকসেনা নওগাঁ কেডি স্কুল থেকে পিএম গার্লস স্কুল, সরকারি গার্লস স্কুল, পুরাতন থানা চত্বর এবং এসডিও অফিস থেকে শুরু করে রাস্তার দু’পাশে মাটিতে অস্ত্র রেখে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে নতমস্তকে আত্মসমর্পণ করে।

তৎকালীন নওগাঁ মহকুমা প্রশাসক সৈয়দ মার্গুব মোরশেদ মুক্তি বাহিনী ও মিত্র বাহিনীকে স্বাগত জানান। বর্তমান পুরাতান কালেক্টরেট (এসডিও) অফিস চত্বরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। সেখানে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা পতাকার প্রতি সালাম জানিয়ে সম্মান প্রদর্শন করেন। ফলে নওগাঁ হানাদারমুক্ত হয়।

জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট সাবেক কমান্ড হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস পালনের পাশাপাশি ১৮ ডিসেম্বর ‘নওগাঁ হানাদার মুক্ত’ দিবস পালন করা হলে তরুণ প্রজন্মরা জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে পারবেন।’

দিবসটি চিরস্মরণীয় করার জন্য সরকারিভাবে পালন করা দরকার বলে মনে করেন তিনি। তবে সামাজিক সংগঠন নওগাঁ একুশে পরিষদ দিবসটি উদযাপনে নানা কর্মসূচি পালন করা হবে বলে সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এআই/এসএ/