ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

দিগন্তজোড়া মাঠে দুলছে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন

ফারুক আহমেদ চৌধুরী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

প্রকাশিত : ১১:১৬ পিএম, ২৭ ডিসেম্বর ২০২০ রবিবার

চাঁপাইনবাবগঞ্জের দিগন্তজোড়া মাঠ সরিষার হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে। যত দূর চোখ যায় কেবল হলুদ আর হলুদ। সরিষা ফুলের রঙে অপরূপ শোভা ধারণ করেছে। ফুলের হলুদ রাজ্যে মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে উঠেছে গোটা মাঠ। হলুদের সমারোহে সজ্জিত সরিষার প্রতিটি ফুলে দুলছে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন।

ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জে দিন দিন বাড়ছে সরিষা চাষ। আমন ও বোরো চাষের মাঝামাঝি সময়ে সরিষার আবাদ করেন কৃষকরা। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী কৃষকরা। গত বছর সরিষার ভালো ফলন হয়েছিল। ফলে এ বছর বিপুল পরিমাণ জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান ভোজ্যতেল ফসল সরিষার ব্যাপক ফলনে গ্রামীণ অর্থনীতিতে সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর জেলায় ১৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। যা গতবার বছরের তুলনায় বেশি। বিনা সরিষা-৪, বিনা সরিষা-৯, বারি সরিষা-১৪, বারি সরিষা-১৫, বারি সরিষা-১৭, টরি-৭ জাতসহ স্থানীয় বিভিন্ন জাতের সরিষার চাষ করেছেন কৃষকরা। লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছরই বাড়ছে সরিষার আবাদ।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার তেররশিয়া গ্রামের কৃষক সাইদুর রহমান জানান, এ বছর চার বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি। সরিষা ফুলে মাঠ ভরে গেছে। দেখে খুবই আনন্দ লাগছে। আশা করছি আবহাওয়া ভালো থাকলে ও পোকার আক্রমণ থেকে সরিষা খেত রক্ষা করতে পারলে সরিষার ব্যাপক ফলন হবে। বিক্রি করে লাভবান হতে পারবো।

সরিষা চাষিরা বলছেন, বোরো চাষের মাঝামাঝি সময়টা সরিষার আবাদ করছি আমরা। এছাড়াও সরিষার আবাদ অন্যান্য ফসলের আবাদের চেয়ে লাভজনক। সরিষার আবাদে তেমন কোনও খরচ নেই বললেই চলে। সময়ও কম লাগে। জমিতে সরিষা লাগানোর পর তেমন একটা সেচ দিতে হয় না। সবকিছু মিলিয়ে একবিঘা জমিতে সরিষা আবাদে খরচ হয় ২৪০০-২৫০০ টাকার মতো। আর এক বিঘা জমি থেকে ৪-৫ মণের মতো সরিষা পাওয়া যায়। প্রতিমণ সরিষা ১৮০০-২০০০ টাকায় বিক্রি হয়। ফলে একবিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করে ৫-৬ হাজার টাকার মতো লাভ হয়। সে সঙ্গে আমন ও বোরো চাষের মাঝে সরিষা লাগালে জমির উর্বরতা শক্তি বাড়ে। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া বেশ ভালো রয়েছে। সরিষাতে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের তেমন একটা আক্রমণ না থাকায় বেশ ভালো ফলন পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সলেহ আকরাম জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৭ হাজার ৪১৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। গত বছর ৫ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছিল। ফলন ভালো হওয়ায় আমরা কৃষকদের সরিষা চাষে উদ্বুদ্ধ করছি। এ জন্য প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় চলতি মৌসুমে ১২০০ প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে সার ও বীজ বিতরণ করা হয়েছে। সে সঙ্গে পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় ৫০০ কৃষককে সরিষার বীজ ও সার সরবরাহ করা হয়েছে। বিশেষ করে জমির মাটির অবস্থা বুঝে কৃষকদের সঠিক মাত্রায় সার ও কীটনাশক দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া ভালো থাকায় ও তেমন রোগবালাই বা পোকামাকড়ের আক্রমণ না থাকায় আশা করছি সরিষার ভালো ফলন হবে এবং কৃষকরা ভালো দাম পাবেন। যার কারণে আগামীতেও সরিষার আবাদ বাড়বে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় চলতি মৌসুমে ১৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। সরিষা বাংলাদেশের প্রধান ভোজ্যতেল ফসল। চাঁপাইনবাবগঞ্জে সরিষার আবাদ বাড়াতে প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে সার ও বীজ বিতরণ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর সরিষার ভালো ফলন হবে। সরিষা বিক্রি করে এবার কৃষকের মুখে হাসি ফুটবে বলে আশা করছেন এ কৃষি কর্মকর্তা।

আরকে//