ইইডিসি’র বিশেষ ট্রাস্টি ও প্রতিনিধি আশরাফুল হক চৌধুরী
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৪:১৯ পিএম, ১৩ জানুয়ারি ২০২১ বুধবার
আশরাফুল হক চৌধুরী
সীতাকুণ্ডের কৃতিসন্তান আশরাফুল হক চৌধুরীকে সম্প্রতি বিশ্বের অন্যতম উন্নয়ন সংস্থা ইউরোপীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন কাউন্সিল- ইইডিসি’র বিশেষ ট্রাস্টি ও প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে। তাকে গত ১ জানুয়ারি নিযুক্ত করার মাধ্যমে ইইডিসি এখন তার অবিচ্ছিন্ন আর্থ-সামাজিক ও শিল্প প্রবৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশকেও উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে যুক্ত করেছে।
ইইডিসি একটি অ-আমলাতান্ত্রিক, অ-রাজনৈতিক, বেসরকারি আন্তর্জাতিক সংস্থা, যা আর্থ-সামাজিক এবং শিল্প প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে তহবিল উন্নয়নের জন্য সরকারি ও বেসরকারি সেক্টরের প্রয়োজনগুলোর দ্রুত সমাধানের জন্য নিবেদিত। এর সদর দপ্তর মাদ্রিদে অবস্থিত।
নির্দিষ্ট ম্যান্ডেটের সাথে পরিচালিত এই সংস্থাটি লাতিন, দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকা, ক্যারিবিয়ান, ইউরোপ, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, মধ্য, পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলজুড়ে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই বিস্তৃত।
এক্সিকিউটিভ বোর্ড, ট্রাস্টি বোর্ড এবং অ্যাডভাইজরি গ্রুপে উচ্চ প্রোফাইল সম্পন্ন বিশেষজ্ঞ এবং স্বনামধন্য ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে এই সংস্থা তাদের বিভিন্নধর্মী উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালিত করে থাকে।
আশরাফুল হক চৌধুরী গত ৩২ বছর ধরে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ হিসেবে আবদান রেখে আসছেন। বর্তমানে তিনি স্টার ইনফ্রাস্ট্রাকচার কনসোর্টিয়ামের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং ব্যাংক এশিয়া-বাংলাদেশের পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত আছেন।
সততা, নিষ্ঠা, কর্মকুশলতা, কর্তব্যপরায়ণ ও দায়িত্বশীল কর্মাধ্যক্ষ হিসেবে কর্মক্ষেত্রে অসাধারণ প্রভাববলয় তৈরি করে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। একটেল (বর্তমানে রবি), এয়ারটেল মোবাইল কোম্পানিসহ দেশি-বিদেশী নামীদামী বহু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হয়ে কোম্পানির সার্বিক অগ্রগতি ও উন্নয়নে যথেষ্ট অবদান রেখেছেন তিনি। দক্ষিণ ইউরোপ, স্ক্যানডিভিয়া, উত্তর আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ানে বেসরকারি বাণিজ্যিক উন্নয়নখাত, এইচআরডি ম্যানেজমেন্ট এন্ড পার্সোনাল এডমিনেস্ট্রেশান, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট এন্ড কর্পোরেট কমিউনিকেশন, আন্তর্জাতিক বাজার ও রফতানি উন্নয়ন, আইসিটি ও টেলিযোগাযোগ ক্ষেত্রে তিনি তিন দশকেরও বেশি সময়ের বিশাল অভিজ্ঞতা সম্পন্ন।
অত্যন্ত চটপটে, কর্মঠ ও বহুমুখি প্রতিভার অধিকারী আশরাফুল হক কর্মক্ষেত্রে স্বীয় দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে সর্বদা অনুগত ও নিবেদিতপ্রাণ। ইংরেজি, বাংলা ও সুইডিশ ভাষায় তিনি বেশ পারদর্শী। উর্দু এবং হিন্দিও তিনি খুব ভালো বোঝেন।
আশরাফুল হক চৌধুরী ১৯৫৭ সালের ১ জানুয়ারি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলাধীন বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার মরহুম পিতা মজিবুল হক চৌধুরী এলাকার একজন স্বনামধন্য চিকিৎসক ও সমাজসেবক ছিলেন। তার বড় ভাই মরহুম আজিজুল হক চৌধুরী ছিলেন পেট্রোবাংলার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
১৯৭১ সালে জাফরনগর অপর্ণাচরণ উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ হন। তিনি ১৯৮০ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৮৯ সালে তিনি সুইডেনের স্টকহোম ইউনিভার্সিটির ইন্টারন্যাশনাল ডেভলপমেন্ট স্টাডিজে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৯৪ সালে একই ইউনিভার্সিটির বাণিজ্য প্রশাসন বিভাগ থেকে রিচার্স ফেলো এবং ১৯৯৫ সালে কানাডার টরেন্টো ইউনিভার্সিটির ফ্যাকাল্টি অব ফরেস্ট্রি থেকে রিচার্স ফেলো অর্জন করেন। এছাড়াও তিনি ফিনল্যান্ডের হেলসিনকি স্কুল অব ইকোনোমিক্স থেকে এক্সপোর্ট মার্কেটিং প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
শিক্ষাজীবন শেষ করেই তিনি কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। শিক্ষাজীবন যেভাবে তিনি সফলতার সাথে সম্পন্ন করেন ঠিক তেমনি কর্মজীবনেও সফলতার সিঁড়ি বেয়ে অনেক দূর এগিয়ে যান। ১৯৮১ সালে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর সহকারি পরিচালক হিসেবে। এখানে তিনি অত্যন্ত সুনামের সাথে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। অতঃপর তিনি ১৯৯০ সালে লন্ডনের কমনওয়েলথ সেক্রেটারিয়েটে ট্রেড এডভাইজার পদে যোগ দেন। ১৯৯৫ সালে তিনি অর্থনীতি ও বাণিজ্যসম্পর্কিত উপদেষ্টা হিসেবে রয়েল নেদারল্যান্ড অ্যাম্বাসিতে যোগদান করে বেশ সুনামের সাথে কাজ করেন।
সেখান থেকে তিনি গ্রামীণ ফোন লিমিটেডের প্যারেন্ট অর্গানাইজেশান গ্রামীণ টেলিকম লিমিটেডে প্রজেক্ট ম্যানেজার পদে নিয়োগ লাভ করেন। এখানে তিনি প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় সার্বিক দায়িত্ব অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে পালনপূর্বক স্বীয় যোগ্যতা প্রদর্শন করতে সক্ষম হন। ১৯৯৭ সালের অক্টোবরে তিনি গ্রামীণ ফোন কোম্পানি থেকে একটেল-এ জেনারেল ম্যানেজার (এইচ আর এন্ড কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স) পদে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
ইতোপূর্বে অর্জিত অভিজ্ঞতা তিনি এখানে পুরোপুরি কাজে লাগিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও সহকর্মীদের দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হন। আশরাফুল হক চৌধুরী এখানেও বেশ সুনাম ও দাপটের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি ২০০১ সালের জানুয়ারিতে ডেল্টাসফ্ট লিমিটেডে ব্যবস্থাপনা পরিচালক/সিইও হিসেবে যোগদান করেন এবং এখানে প্রায় সাড়ে চার বছর কৃতিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। এখান থেকে তিনি ২০০৬ সালের জানুয়ারিতে ওয়ারিদ (বর্তমানে এয়ারটেল) টেলিকম ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডে জেনারেল ম্যানেজার (বিদেশবিষয়ক ও সরকার সম্পর্কিত) পদে যোগ দিয়ে অত্যন্ত সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন।
আশরাফুল হক চৌধুরী বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচি ও গবেষণাধর্মী কাজে অংশ নিয়ে পেশাগত ক্ষেত্রে প্রচুর অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। ২০০১ সালে সুইডেনের স্টকহোমে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল স্মল বিজনেস কংগ্রেসে তিনি অংশ নেন এবং প্রাইভেট সেক্টর বিজনেস ডেভলপমেন্ট বিশেষ করে আইসিটি টেলিকমিউনিকেশন সেক্টরের ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
২০০৪ সালে প্রথম বাংলাদেশ মালয়েশিয়া বিজনেস ফোরামে তিনি ট্রেড এন্ড ইনভেস্টমেন্ট অপরচুনিটিজ ইন বাংলাদেশ শীর্ষক সেমিনারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এছাড়াও তিনি ফিলিপিন্স, ফিনল্যান্ড, হংকং, জার্মানী, চীন ও সুইডেনে আয়োজিত দারিদ্র্য বিমোচন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক ব্যবসায় ও রফতানি বাজার, মার্কেট স্টাডিজ, সার্ভেজ, পল্লী টেলি যোগাযোগসহ গুরুত্বপূর্ণ নানা বিষয়ভিত্তিক সেমিনারে সক্রিয় অংশ নিয়ে সময়োপযোগী প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।
আশরাফুল হক চৌধুরী এশিয়ার ভারত, পাকিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, চীন, মালয়েশিয়া, হংকং ও ওমান, ইউরোপের সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, ইতালী, ফিনল্যান্ড, নরওয়ে, ডেনমার্ক, জার্মানী, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য এবং হল্যান্ড, ক্যারিবিয়ান ও আফ্রিকার এসটি লুচিয়া বারবাডোজ ও অন্যান্য ওইসিএস দেশসমূহ এবং আমেরিকা মহাদেশের আমেরিকা ও কানাডাসহ বিশ্বের বহুদেশ ভ্রমণ করেন।
আশরাফুল হক চৌধুরী ব্যক্তিগত জীবনে এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক। ছেলে নাবিদ জাহেদ ও মেয়ে ঈশিতা আশরাফ কর্মজীবনে স্ব স্ব ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত। তার স্ত্রী তাজমীরা আশরাফ রাজধানীর স্কলাস্টিকা স্কুলের একজন সিনিয়র শিক্ষিকা। তিনি পেশাগত ও বাণিজ্যিক উন্নয়ন সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে জড়িত আছেন।
এনএস/