ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

এক বছরে বেনাপোলে আটক ১২০ কোটি টাকার পণ্য

বেনাপোল প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০২:৩৬ পিএম, ১৮ জানুয়ারি ২০২১ সোমবার

করোনাকালীন সময়েও নিরাপত্তার সাথে যেন পাল্লা দিয়ে বেড়েছিল যশোরের বেনাপোল সীমান্ত পথে চোরাচালান। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রায় প্রতিদিন ঘটছে মাদকসহ কোন না কোন পণ্যের পাচার কার্যক্রম। 

গেল বছর (২০২০) বেনাপোল সীমান্ত থেকে শুধু যশোর ৪৯ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অভিযানে প্রায় ১১৯ কোটি ৮ টাকা মূল্যের মাদক, স্বর্ণ, আগ্নেয়াস্ত্র, বৈদেশিক মুদ্রা, চন্দন কাঠ, কসমেটিক্স ও গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন ধরনের চোরাচালান পণ্য জব্দ হয়েছে। এ সময় পাচারের সাথে জড়িত ৩০৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

যশোর ৪৯ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল সেলিম রেজা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বিজিবি সূত্র জানায়, সীমান্ত নিরাপত্তা ও চোরাচালান রোধসহ সবধরনের পাচার কার্যক্রম প্রতিহত করতে বছর ধরে বিজিবির নিয়মিত অভিযান পরিচালনা হয়ে আসছে। গত বছরের ১ জানুয়ারি হতে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিজিবির অভিযানে ৩৩ হাজার ৬৯৮ বোতল ফেনসিডিল, ৪১ কেজি ৭৭২ গ্রাম স্বর্ণ, ৭ লাখ ৩৮ হাজার ইউএস ডলার, ২২ লাখ ৯২ হাজার ২০০ ভারতীয় রুপি, ১৩টি পিস্তল, ২৪টি ম্যাগাজিন, ৫৮ রাউন্ড গুলি, ৫৪৮ বোতল মদ, ১ হাজার ২১২ পিস ইয়াবা ও ৯১৫ কেজি গাঁজা জব্দ করা হয়। এছাড়া বিপুল পরিমাণে চন্দন কাঠ, গার্মেন্টস ও কসমেটিক্স সামগ্রী ও চোরাচালানের সাথে জড়িত ৩০৪ জন চোরাচালানীকে আটক করা হয়। আটককৃত মাদক ও চোরাচালান পণ্যের বাজার মূল্য ১১৯ কোটি ৮২ লাখ ৩৪ হাজার টাকা।

স্থানীয় গ্রামবাসী মিলন খান বলেন, ‘২০১৮ সালে বেনাপোল সীমান্তের ৮ দশমিক ৩ কিলোমিটার বিজিবি-বিএসএফ যৌথভাবে ‘ক্রাইম ফ্রি জোন’ ঘোষণা করলেও তার তেমন সুফল তেমন মেলেনি। বিজিবি-বিএসএফের নজর এড়িয়ে প্রতিনিয়ত ঢুকছে মাদক, অস্ত্র, স্বর্ণসহ বিভিন্ন চোরাচালান পণ্য। সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও আধুনিকায় ও জোরদার করতে হবে।’

বেনাপোলের সংবাদকর্মী আনিছুর রহমান বলেন, ‘যেভাবে মাদক প্রবেশ করছে এবং প্রতিদিন আইনশৃঙ্খখলা বাহিনীর হাতে উদ্ধার হচ্ছে এতে করে আমরা সন্তানদের নিয়ে শঙ্কিত। এসব মাদক সব ঢুকছে ভারত থেকে। তাই চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবির পাশাপাশি ভারতীয় বিএসএফেরও আন্তরিক হতে হবে।’

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ইউপি চেয়ারম্যান বজলুর রহমান বলেন, ‘আইনের ফাঁক-ফোঁকর দিয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা ছাড়া পেয়ে আবার পাচার কাজে জড়িয়ে পড়ছে। এদের বিরুদ্ধে আরও কঠিন আইন হওয়া উচিত।’

যশোর ৪৯ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল সেলিম রেজা জানান, ‘বেনাপোল বিস্তীর্ণ সীমান্ত এলাকা। এত কাছাকাছি জনবসতী চোরাচালান রোধ কঠিন। মূল হোতারা স্থানীয় অসহায় মানুষগুলোকে ব্যবহার করে পাচার কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। ফলে সহজে মাদক প্রবেশ করে ছড়িয়ে পড়ছে দেশের অভ্যন্তরে। তবে চোরাচালান প্রতিরোধে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে বিজিবি আন্তরিকভাবে কাজ করছে। বিজিবি যেভাবে অভিযান চালাচ্ছে তাতে খুব দ্রুত চোরাচালান শূন্যের কোঠায় চলে আসবে।’

উল্লেখ্য, যশোর এলাকায় ভারতের সাথে ৭০ কিলোমিটার সীমান্ত পথ রয়েছে। সেখানে সীমান্ত রক্ষায় ও চোরাচালান প্রতিরোধে কাজ করছে ৫ শতাধিক বিজিবি সদস্য। বিজিবি সীমান্তে নাইট ভিষন ক্যামেরা, ভাসমান বিওপি, নৌরুটে স্প্রিড বোর্ডসহ বেশ কিছু আধুনিক প্রযুক্তি সংযুক্ত রয়েছে। তারপরও ফাঁক-ফোঁকর দিয়ে চলে আসছে চোরাচালানী পণ্য।’
এআই/এসএ/