ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বিদায় সুহাসিনী!

শামীম আনোয়ার

প্রকাশিত : ০৮:১৬ পিএম, ২৫ জানুয়ারি ২০২১ সোমবার

এএসপি ইশরাত জাহান তন্বী

এএসপি ইশরাত জাহান তন্বী

৩৪তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে আমার সহকর্মী এএসপি ইশরাত জাহান তন্বী আর নেই। যে করোনা ভাইরাসের কবল থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করতে তাঁর গত দশ মাসের লড়াই, মৃত্যুভয় তুচ্ছ করে লকডাউন কার্যকর, হোম কোয়ারেন্টাইন বা স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে কর্মমুখর দিনরাত, শেষমেষ সেই রাক্ষুসি করোনার নিকটই হার মানতে হলো তাঁকে। 

করোনা যুদ্ধের একজন অগ্রসৈনিক হিসেবে কাজ করার একপর্যায়ে নিজের শরীরেও বাসা বেঁধে ফেলে সর্বনাশা করোনা ভাইরাস। তীব্র ইচ্ছাশক্তির জোরে সেই করোনাকে পরাজিতও করেছিলেন। কিন্তু করোনা পরবর্তী শারীরিক জটিলতা নামক যে বিষের প্রভাব- তার নিকট আর পেরে উঠলেন না তিনি।

এই তো সেদিন, চট্টগ্রামের সারদা পুলিশ একাডেমি মাঠে পাসিং আউট প্যারেডের দিনে তন্বীসহ আমরা ১৪১ জন নবীন এএসপি এক কণ্ঠে শপথ করেছিলাম- মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দেশের জন্য, মানুষের কল্যাণে দায়িত্ব পালন করে যাব। বিসিএস (পুলিশ) এর এক বছর মেয়াদি ট্রেনিং শেষে পরস্পরকে অশ্রুসিক্ত বিদায় জানিয়েছিলাম। দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে পুলিশ সম্পর্কে মানুষের বদ্ধমূল নেতিবাচক ধারণা বদলে দেওয়ার প্রত্যয়ে। কিন্তু সেদিন তো আর জানা ছিল না যে, সেই দায়িত্ব পালন বা প্রত্যয় পূরণের পর্ব ঠিকমতো শুরু হবার আগেই তার মৃত্যুর পালাটি এসে পড়বে। মানুষের কল্যাণে আত্মনিয়োগ শুরু হতে না হতেই এভাবে  বেজে যাবে শেষ বিদায়ের ঘণ্টা!

সারদায় ট্রেইনি এএসপি হিসেবে আমাদের ট্রেনিং ছিল ভিন্ন কোম্পানিতে (আমি আলফা কোম্পানিতে ছিলাম, আর তিনি চার্লিতে)। কিন্তু কমন ক্লাসরুম, ফায়ারিং বাট, ডাইনিং হল বা অস্ত্রাগারে সঙ্গীন চড়ানোরত অবস্থায় যতবারই দেখা হয়েছে, হাসিমুখ ছাড়া তার অন্য কোনও অবয়বের কথা আমি মনে করতে পারছি না। খুব ইন্ট্রোভার্ট, কখনও অযথা হৈ-হুল্লোড়ে নেই। কিন্তু ভীষণ রকম বিনয়ী আর অমায়িক মেয়েটির এমন অকাল প্রয়াণ একদমই নিতে পারছি না।

পরপারে ভাল থাকুন, সুখে এবং একই রকম হাস্যমুখে বিরাজ করুন, সুহাসিনী। জান্নাতের সর্বোচ্চ মর্যাদায় যেন আপনার আসন লাভ হয়, আপনার কবর যেন হয় জান্নাতের একটি বাগান- কায় মনোবাক্যে মহান পরওয়ারদিগারের নিকট এই দোয়া করছি।

লেখক- এএসপি (রাঙ্গুনিয়া সার্কেল), চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ।

এনএস/