ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

রাগ ও মহামতি বুদ্ধ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৪:১৭ পিএম, ২৮ জানুয়ারি ২০২১ বৃহস্পতিবার

আপনি হয়তো বলতে পারেন রাগ না করে কি থাকা যায়? একজন অহেতুক গালিগালাজ করল, মা-বাবা তুলে গালি দিল, তখনও কি প্রো-একটিভ বা ইতিবাচক থাকা যায়? অনায়াসে থাকা যায়। মহামতি বুদ্ধের জীবনের একটি ঘটনা এ ক্ষেত্রে আমাদের জন্যে এক অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত।

মহামতি বুদ্ধ তখন বৃদ্ধ। এক চালবাজ লোক জুটে গেল। সে ভাবল বুদ্ধ আর বেশিদিন বাঁচবেন না। এখন তার সাথে কিছুদিন থেকে যদি কিছু কায়দা-কানুন টেকনিক শিখে নেয়া যায়, তাহলে বুদ্ধ মারা যাওয়ার সাথে সাথে নিজেকে বুদ্ধের অবতার ঘোষণা করে দেব। তখন আর পরিশ্রম করতে হবে না। বসে বসে দান-দক্ষিণা গ্রহণ করেই জীবনটা সুখে কাটিয়ে দেয়া যাবে। যেই ভাবা সেই কাজ। ভণ্ড একেবারে নিবেদিতপ্রাণ শিষ্যের মতো ভান করে বুদ্ধের সেবাযত্ন করতে লাগল। মহামতি বুদ্ধ তার মতলব বুঝলেও কিছুই বললেন না।

বছর দুই পার হওয়ার পর ভণ্ড শিষ্য বুঝতে পারল যে, সে ধ্যানের ক্ষমতা বা আধ্যাত্মিক শক্তি কিছুই লাভ করে নি। কারণ উদ্দেশ্য মহৎ এবং পরিষ্কার না থাকলে ধ্যানের ক্ষমতা বা আধ্যাত্মিক শক্তি লাভ করা যায় না। ভণ্ড শিষ্য এর ফলে ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠল। মনে মনে ঠিক করল এর উপযুক্ত প্রতিশোধ সে নেবে। একদিন ভোরবেলা মহামতি বুদ্ধ একা বসে আছেন। ভণ্ড ভাবল এই সুযোগ। সে কাছে গিয়ে বুদ্ধকে অশ্রাব্য গালিগালাজ করতে লাগল। বুদ্ধ চুপচাপ শুনছেন। কিছুই বলছেন না।

অনেকক্ষণ গালিগালাজ করার পর ভণ্ড শিষ্য যখন একটু থামল, বুদ্ধ তখন মুখ খুললেন। শান্তভাবে জিজ্ঞেস করলেন আমি কি তোমাকে কোনো প্রশ্ন করতে পারি? ভণ্ড শিষ্যের মেজাজ তখনও ঠাণ্ডা হয় নি। সে ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল, জিজ্ঞেস করেন, কি জিজ্ঞেস করবেন? বুদ্ধ বললেন, ধরো তোমার কিছু জিনিস তুমি কাউকে দিতে চাচ্ছো। কিন্তু সে যদি তা না নেয়, তাহলে জিনিসগুলো কার কাছে থাকবে? উত্তেজিত শিষ্য জবাব দিল, ‘এ তো সহজ বিষয়। এটাও আপনি বোঝেন না? আমার জিনিস আমি যাকে দিতে চাচ্ছি, সে যদি না নেয় তাহলে আমারই থাকবে। বুদ্ধ আবার জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার জিনিস তুমি তাকে দিতে চাচ্ছো সে না নিলে তোমার থাকবে?’ ভণ্ড শিষ্যের উত্তর, ‘হাঁ আমার থাকবে।’ এবার মহামতি বুদ্ধ বললেন, তাহলে এতক্ষণ তুমি আমাকে যা (গালিগালাজ) উপহার দিলে, আমি তার কিছুই নিলাম না।’

আপনিও আপনার জীবনে ব্যক্তিগত গালিগালাজ ও অপমানসূচক কথাবার্তার জবাবে মহামতি বুদ্ধের এই কৌশল অবলম্বন করতে পারেন। আসলে একজন মানুষ যখন অযৌক্তিক আচরণ করে, গালিগালাজ করে, মা বাবা তুলে গাল দেয় তখন এর জবাবে আপনি তার মা-বাবা তুলে গাল দিতে পারেন, কিন্তু তার মা-বাবাকে গালি দিয়ে আপনি নিজেকেই অপমানিত করলেন। সে গালিগালাজ করে আপনার শান্তি নষ্ট করতে এসেছিল, আপনি গালির জবাব দেয়ার অর্থই হচ্ছে তার উদ্দেশ্যকে সফল করা। তার চেয়ে কিছুক্ষণ তার গালিগালাজ শোনার পরে আপনি যদি বিনয়ের সাথে বলেন, ‘ভাই/ আপা আপনি অনেক মেহেরবান। অনেক কিছু আমাকে দিলেন। কিন্তু এগুলো রাখার কোনো জায়গা আমার কাছে নেই। আমি কিছুই নিলাম না। এগুলো আপনারই থাক। এ কথা বলার পর দেখবেন, অপরপক্ষ দাঁত কামড়ে চলে যাচ্ছে। তার গালিগালাজ যে আপনার উপর কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারল না, এটাই তার পরাজয়। আর এ পরাজয়ের যন্ত্রণা হয়তো অনেক দিন সে বয়ে বেড়াবে। সে এসেছিল আপনার শান্তি নষ্ট করতে, কিন্তু শান্ত থেকে আপনি তাকে পরাভূত করলেন।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাগের আসল কারণ অর্ন্তগত হীনম্মন্যতা। নিজের দুর্বলতাকেই মানুষ ঢাকার চেষ্টা করে দুর্ব্যবহার বা রাগারাগির মধ্য দিয়ে। তাই খুঁজে দেখুন আপনার মধ্যে কোনো হীনম্মন্যতা আছে কিনা। হও উন্নত শির বা নেতিচিন্তার মেডিটেশন করুন। আত্মবিশ্বাস এবং ইতিবাচকতা বাড়াতে অটোসাজেশন দিন।
এসএ/