ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

সন্তান লালনে সচেতন হউন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:২৮ এএম, ৩০ জানুয়ারি ২০২১ শনিবার

আপনি কী একজন শুদ্ধ মানুষ হতে চান? তাহলে পথ চলার ক্ষেত্রে কিছু শুদ্ধাচার মেনে চলুন। আর তা যদি আপনি পারেন, তবে দেখবেন চমৎকার এক জগতে প্রবেশ করেছেন। শুদ্ধ হওয়া বিষয়টি এমন নয় যে এটা আপনা আপনি হয়ে যায়। শুদ্ধ হওয়ার জন্যে আপনাকে এটা চর্চ্চা করতে হবে। এটা অনেকটা ভালো সঙ্গীত শিল্পী বা ক্রীড়াবিদ হয়ে উঠার মতোই। সাফল্যের জন্যে তাদেরকে যেমন চর্চ্চা করতে হয়, শুদ্ধা মানুষ হওয়ার ব্যাাপরেও আপনাকে সেটা করতে হবে।

সুষ্ঠু বিকাশের অন্যতম শর্ত হলো সুন্দর শৈশব। তাই শিশুদের প্রতি মমতাময় ও যত্নশীল হোন। আপনার আনন্দ বা কৌতুকের জন্যে শিশুদের রাগিয়ে দেবেন না, কাঁদাবেন না। একসাথে কয়েকটি শিশু এক জায়গায় থাকলে মজা করে তাদের মধ্যে ঝগড়া-কুস্তি বাঁধাবেন না।

- কোনো শিশুকে জোর করে কোলে নেবেন না। এমনভাবে আদর করবেন না বা কোলে নেবেন না যাতে তার কষ্ট হয় বা সে ভয় পায়। যেমন, বগলের নিচে শক্ত করে ধরে ওপরে তোলা, শূন্যে ছুড়ে দেয়া, মাথা টেনে ধরা, গাল টানা, কান টানা, চাপ দেয়া/ ঝাঁকানো, কাতুকুতু দেয়া ইত্যাদি।
- ভয় দেখিয়ে শিশুদের খাওয়াবেন না, ঘুম পাড়াবেন না। ভূত-প্রেতের কথা বলবেন না, কাউকে ভীতিকর হিসেবে উপস্থাপন করবেন না।
- শিশুদের কখনো আঘাত করবেন না। শাসন যেন কখনোই ভীতিপ্রদ শাস্তিতে পরিণত না হয়।
- কে বেশি ভালবাসে, বাবা নাকি মা?-এ ধরনের প্রশ্ন করে শিশুমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবেন না।
- শিশুদের হাতে টাকা দেবেন না। অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া তাকে কোনো গিফট দেবেন না।
- অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া শিশুদের চকলেট/ চিপস/ ক্ষতিকর কিছু খেতে দেবেন না।তার সামনে এসব জিনিস নাড়াচাড়া করবেন না।
- টিভি বা কোনো ধরনের স্ক্রিন দেখিয়ে শিশুকে খাওয়াবেন না।
- জন্মের পরপরই শিশুর ভিডিও করা থেকে বিরত থাকুন। ১৮ মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে স্ক্রিন থেকে যথাসম্ভব দূরে রাখুন।
- ছেলেমেয়েতে বৈষম্য না করে সমান দৃষ্টিতে দেখুন। ছেলে আপনার হলে মেয়েও আপনার।
- সন্তানের সামনে মা-বাবা ঝগড়া করবেন না। একে অপরকে দোষারোপ করে কথা বলবেন না।
- একান্নবর্তী পরিবারে সবার সন্তানকেই একনজরে দেখুন।
- তোমাকে হাসপাতাল বা রাস্তা থেকে কুড়িয়ে আনা হয়েছে-এমন বাজে কথা শিশুকে বলবেন না। শৈশবের এ দুঃখবোধ ও নিরাপত্তাহীনতা তার ভেতরে স্থায়ী ছাপ ফেলে।
- শিশু কোথাও পড়ে গিয়ে আঘাত পেলে সে জায়গাকে পাল্টা আঘাত করতে বলবেন না। এতে সে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠবে।
- সস্তা জনপ্রিয়তার লোভে শিশুকে সাথে নিয়ে সেলফি তুলে, ভিডিও বানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করবেন না। এটা অনৈতিক।
- শিশুদের সামনে আপনি কোনো ভুল করে ফেললে অকপটে দুঃখ প্রকাশ করুন। এতে আপনার প্রতি তাদের শ্রদ্ধাবোধ ও আস্থা বাড়বে।
- শিশুকে ভালো ও সৃজনশীল কাজে যুক্ত করুন। বই পড়া, গণিত শেখা, লেখালেখি/ ছবি আকাঁর জন্যে সুন্দর খাতা, রঙ পেন্সিল কিনে দিন।
- বয়স অনুযায়ী নিজের কাজগুলো নিজে করার ব্যাপারে শিশুকে উৎসাহিত করুন। যেমন, নিজের স্কুলব্যাগ বহন করা, পড়ার টেবিল গুছিয়ে রাখা, জুতোর ফিতা বাঁধা ইত্যাদি।
- শারীরিক অবয়ব, খারাপ রেজাল্ট, দুষ্টুমিসহ কোনো ধরনের প্রসঙ্গ তুলে শিশুকে খোঁটা দেবেন না। তার সম্ভাবনার কথা বলে তাকে উৎসাহিত করে তুলুন। আপনার উৎসাহ তাকে সাহসী ও আত্মবিশ্বাসী মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে।
- সবার সামনে শিশুকে বকবেন না। ভুল ধরিয়ে অপ্রস্তুত করবেন না। মমতার সাথে বুঝিয়ে বলুন, সংশোধন করে দিন।
- নাম বিকৃত করে শিশুকে ডাকবেন না, খ্যাপাবেন না।
- শিশুদের দিয়ে এমন কোনো কাজ করাবেন না, যা তার আত্মবিশ্বাস বা আত্মসম্মানকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
- আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ও ঝগড়া-বিবাদে কখনো শিশুদের জড়াবেন না।
- পরিবারে মিথ্যা বলা, গালিগালাজ করা, অন্যের দুর্নাম করার কোনো প্রবণতা থাকলে তা পরিহার করুন। তাহলে সন্তানও ছোটবেলা থেকেই শুদ্ধাচারী মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে।
- মাদ্রাসা/ এতিমখানার জন্যে অর্থ সংগ্রহের কাজে সেখানে অবস্থানরত শিশুদের নিয়োজিত করবেন না। ক্রমাগত অন্যের করুণা বা দয়া পেতে অভ্যস্ত হলে সে শিশু স্বাবলম্বী ও দাতা হতে পারে না।
- শিক্ষার প্রথম ধাপ হিসেবে শিশুকে শুদ্ধাচার শিক্ষা দিন।
- ‘অন্য ধর্মের কারো সাথে মিশবে না’-এ ধরনের কথা শিশুকে বলবেন না। তাকে সব ধর্ম ও মতের মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে গড়ে তুলুন।
- সন্তানকে আত্মকেন্দ্রিক করে বড় করবেন না। আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের সাথে মেলামেশার সুযোগ দিন।
- শিশুকে মুদি দোকানে/ বাজারে একা পাঠাবেন না।
- সন্তানকে ভিডিও গেম বা ভার্চুয়াল গেম নয়, বাস্তবে অন্য শিশুদের সাথে খেলার সুযোগ দিন। পরিপূর্ণ বিকাশের জন্যে মানুষের সংস্পর্শের কোনো বিকল্প নেই।
- শিশুসন্তানকে অতিরিক্ত উপহার, খেলনা ও বিলাসী জীবনে অভ্যস্ত করবেন না।
- আত্মীয়স্বজনের দেয়া উপহারের মধ্যে তুলনা করতে শেখাবেন না। ছোট-বড় প্রতিটি উপহারই যে মমতার প্রকাশ, এটা তাকে বুঝতে শেখান।
- শৈশব থেকেই সন্তানকে বলুন, তোমাকে ভালো মানুষ হতে হবে। মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হবে।
- দেশের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও বীরত্বগাথা সম্পর্কে শিশুকে ধারণা দিন। সে যে এক মহান জাতির উত্তরসূরি-এ প্রত্যয় তার মনে গেঁথে দিন।
এসএ/