ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

সেহেরি ও ইফতারে যা খাবেন

প্রকাশিত : ০৩:০৪ পিএম, ২৮ মে ২০১৭ রবিবার | আপডেট: ০৭:২৯ পিএম, ২৯ মে ২০১৭ সোমবার

সময়ের পরিক্রমায় বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমানের দরজায় আবারো এসে উপস্থিত রহমত-বরকত- মাগফিরাতের মাস রমজান। ইসলামী জীবন বোধের সৌহার্দ্য-সৌন্দর্যের অনন্য সম্ভার এই পবিত্র রমজান। আর এই মাসে সিয়াম সাধনার জন্য প্রয়োজন সুস্থ শরীর। তাই সারা দিন রোজা রাখার পর যেন ইফতারিটা স্বাস্থ্যকর হয় সেদিকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ ইফতারির সময় ভাজাপোড়া খাবারের প্রতি অনেকটা আসক্ত। সেসব খাবার মুখোরোচক হলেও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। তাই ইফতারে সুষম পুষ্টির সঙ্গে শারীরিক সুস্থতার কথা মাথায় রেখে ফুড প্ল্যানিং জরুরি।

সারাদিন রোজা থাকার কারণে শরীরে পানির অভাব দেখা দেয়। তাই ইফতারিতে প্রচুর পানি খাওয়ার অভ্যাস করুন। পানির সাথে লেবু এবং একটু চিনি মিশিয়ে পান করতে পারেন। সেই সাথে সকালের ভেজানো ইসুবগুলের ভূষির সঙ্গে একটু চিনি মিশিয়ে পরিবেশন করতে পারেন। ডায়েবেটিস রোগী অবশ্যই তাদের নির্ধারিত চিনির বিকল্প মিষ্টি ব্যবহার করবেন।

সহজে হজম হয় ইফতারিতে এমন খাবার শরীরের জন্য উপকারি। চিড়া ভিজিয়ে কলা মিষ্টি দিয়ে খেতে পারেন। সাথে দই খেতে পারলে পেট ঠান্ডা থাকবে। তাছাড়া খেজুর দিয়ে ইফতার করা সুন্নত।

একটানা একমাস রমজান। বিধায় মাঝে মাঝে ইফতারিতে বৈচিত্র্য আনতে পারেন। সপ্তাহে ১/২ দিন নরম করে খিচুড়ি খেতে পারেন।

কিছু ফল রাখতে পারেন আপনার ইফতারের টেবিলে। ফলের উপকারিতা হচ্ছে পানি শূন্যতায় দ্রুত শরীরকে সতেজ করে। ডাবের পানিও রোজার সময় উপকারি। খেজুর তো থাকবেই, সাথে আম, আনারস ইত্যাদি মৌসুমী ফল হলে মন্দ হয় না।

কিছু ইফতারি আপনি প্রতিদিন তৈরি করেতে পারেন। যেমন মুরগির মাংস ছোট করে কেটে ফ্রাই করার জন্য মেরিনেট করে কয়েকটি প্যাকেট মজুদ করে রাখতে পারেন ডিপ ফ্রিজে।

মসুর ডাল বেটে ছোট ছোট বক্সে করে ২/৩ দিনের জন্য রেখে দিতে পারেন। এসব বাড়তি কাজ একবারে করে রাখলে নামাজ বা ইবাদতের সময় নষ্ট হবে না। ছোলা এবং আলু বেশি করে সিদ্ধ করে ফ্রিজে রেখে দিলে প্রতিদিন ঝামেলা করতে হয়।


কাঁচা ছোলা খাওয়া হজমের জন্য বা শরীরের জন্য অনেক উপকারী। সারাদিনের ভেজানো ছোলা খোসা ছাড়িয়ে বাটিতে অল্প পেঁয়াজ কুচি, কাঁচা মরিচ আর লেবু মিশিয়ে খেলে ইফতারিতে অনেক উপকার পাওয়া যাবে।

সেহেরিতে যা খাবেন

এবারের রমজান মাস শুরু হয়েছে জ্যৈষ্ঠের একেবারে মাঝামাঝিতে। আর কিছুদিন পরেই বর্ষার আগমন ঘটবে। তবে জৈষ্ঠের এ গরমে রোজা শুরু হওয়ার ফলে দেখা দিতে পারে পেটের সমস্যা, মাথাব্যথা, দুর্বলতা, অবসাদ, আলসার, অ্যাসিডিটি ও বদহজমের মতো নানা সমস্যা। আর তাই রোজার এ দিনগুলোতে সুস্থ থাকতে চাই বাড়তি কিছু সর্তকতা।

তাহলে জেনে নিন রোজার দিনে সেহরিতে কেমন খাবার খাওয়া উচিত।

সেহরিতে এমন কিছু খাওয়া ঠিক না যা খেলে বদহজম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অনেকে সেহেরিতে দুধ কলা খেতে পছন্দ করেন। এতে বদহজম বা ঢেকুর ওঠার সম্ভাবনা থাকে। তাই সেহেরিতে এ জাতীয় খাবার পরিহার করাই ভালো।

খুব বেশি পরিমাণে খাবার না খেয়ে রুচি অনুসারে স্বাভাবিক খাবার খাবেন। সারাদিন খেতে পারবেন না বলে ইচ্ছামত উদরপূর্তি করে খাবেন না। পেটের এক-চতুর্থাংশ খালি রাখবেন। একজন মানুষের সারাদিন যে পরিমাণ পানি দরকার হয় সে পরিমাণ রাতে পান করা উচিত।

সেহরিতে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যেমন লাল আটা, বাদাম, বিনস, শস্য, ছোলা, ডাল ইত্যাদি খেতে হবে। এগুলো হজম হয় আস্তে আস্তে, তাই অনেক সময় পর ক্ষুধা লাগে। রক্তেও চিনির পরিমাণ তাড়াতাড়ি বাড়ে না।

সেহরিতে খেজুর বা খোরমা অবশ্যই খাবেন। এতে আছে শর্করা, চিনি, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, কপার, সালফার, ম্যাঙ্গানিজ, সিলিকন, ক্লোরিন ফাইবার, যা সারাদিন রোজা রাখার পর খুবই দরকারি।

সেহরিতে তাজা ফলের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে সবজি খান। না হলে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এগুলো আপনার নিঃশ্বাসকেও সতেজ রাখতে সাহায্য করবে।

রোজার সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ না করলে এর অভাবে শরীরে কিটোন উৎপন্ন হবে। তাই এ সময় কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খান যেমন কলা, ওটস, রুটি ইত্যাদি।

সেহরিতে দুধের সঙ্গে ইসবগুল খেতে পারেন।এতে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।

সেহেরিতে সহজপাচ্য বা ঠাণ্ডা খাবার যেমন দই, চিড়া খাবেন। তাহলে সারাদিন রোজা রাখা নাজুক পাকস্থলী শান্তিতে খাবার হজম করতে পারবে।