ঢাকা, বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১০ ১৪৩১

মোবাইল এক যমদূত!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:৩৮ পিএম, ৩১ জানুয়ারি ২০২১ রবিবার | আপডেট: ০৩:২৫ পিএম, ৩১ জানুয়ারি ২০২১ রবিবার

তথ্য-প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় মোবাইল ফোন এখন সবার হাতে হাতে। যন্ত্রটি সহজলভ্য হওয়ার পর থেকে এর নেতিবাচক প্রভাব প্রতিনিয়তই পড়ছে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে। এতে করে বাড়ছে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা। আমাদের শরীরে মোবাইল ফোনের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে কমবেশি আমরা অনেকে জানি। কিন্তু শিশুদের জন্য এটি কতটা মারাত্মক ক্ষতিকর, তা হয়তো অনেকের ভাবনার বাইরে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা অনুসারে, মোবাইল ফোন মাইক্রোওয়েভ ওভেনের সমপরিমাণ রেডিয়েশন ছড়িয়ে থাকে। ১৫ মিনিট একটানা মোবাইলে কথা বললে মস্তিষ্ক ও কান-সংলগ্ন ত্বক গরম হয়ে যায়, যা অত্যন্ত ক্ষতিকর।

শিশু মাত্র দুই মিনিট মোবাইল ফোনে কথা বললে তার স্বাভাবিক ব্রেন ওয়েভ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়, যা পরবর্তী একঘণ্টায়ও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে না।

মোবাইলের রেডিয়েশন শিশুর মস্তিষ্কের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত। একবার ভাবুন, ১০১ ডিগ্রি জ্বরেই যদি কোনও কোনও শিশুর খিঁচুনি হয়, তাহলে ১০৩ ডিগ্রি তাপমাত্রায় শিশুর মস্তিষ্কের টিস্যুগুলোতে কী প্রচণ্ড খিঁচুনি সৃষ্টি হতে পারে! অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারে স্মৃতিশক্তিতে ধস নামে। কাঁধ, কনুই ও কব্জির জয়েন্ট ক্রমশ অকেজো হয়ে যায়। স্বাভাবিক বিপাকক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়।

মোবাইল ফোনের টাওয়ার থেকে নির্গত রেডিয়েশনের প্রভাবে মারাত্মক ক্ষতির শিকার হন অন্তঃসত্ত্বা নারী ও বছরের কম বয়সী শিশুরা। অটিজমে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণও এই রেডিয়েশন।

মোবাইল ডিভাইস থেকে আমাদের শরীরে এক ধরনের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস তৈরি হয়। যা মাথাব্যথা, অনিদ্রা, অবসাদ, বমি বমি ভাব, ত্বক খসখসে করার সাথে সাথে ব্রেন টিউমার, ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। কানের পার্শ্ববর্তী এলাকাসহ স্যালাইভারি গ্ল্যান্ডের টিউমারের নেপথ্যে আছে এই অক্সিডেটিভ স্ট্রেস।

শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফল খারাপ হওয়া, ক্লাসে যেতে না চাওয়া, লুকিয়ে ক্লাসে ফোন ব্যবহার, ক্লাস থেকে ফিরেই স্মার্টফোনে দীর্ঘসময় ভিডিও গেমস খেলা, পরিবার ও সামাজিক অনুষ্ঠানের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলা- এ সবই মোবাইল আসক্তির লক্ষণ। এতে শিক্ষার্থীদের হাঁটাচলা, দৌড়ানোর মতো শারীরিক সক্ষমতা কমতে থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুসারে, এ রোগের নাম গেমিং ডিজঅর্ডার।

ভিডিও গেমস দৃষ্টিশক্তি কমায়, স্নায়ুচাপ বাড়ায় এবং তা মাদকের মতোই আসক্তিকর। স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে খেতে অভ্যস্ত হলে শিশুর দেহে পুষ্টির চেয়ে রেডিয়েশন বেশি ঢোকে। স্ক্রিনের দিকে মনোযোগ থাকায় খাবারের স্বাদ-গন্ধ-রঙের তফাত সে বুঝতে পারে না। এভাবে চলতে থাকলে শিশুর হজমপ্রক্রিয়া স্থায়ীভাবে দুর্বল হয়ে যায়। স্ক্রিন থেকে নির্গত নীল আলো চোখের রেটিনার ক্ষতি করে; যা দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নিতে পারে।

ঘুমের আগে যেসব শিশু-কিশোর মোবাইল, টিভি, কম্পিউটার, ট্যাব বা ল্যাপটপে সময় কাটায়, তাদের মনোযোগ কমে যায়। দেহে ক্ষতিকর চর্বি জমতে থাকে। ঘুম ভালো হয় না। সকালে তরতাজা অনুভূতির পরিবর্তে তারা ক্লান্তি অনুভব করে। 

তাই, রাতে ঘুমানোর আগে সব ধরনের স্ক্রিন শোবার ঘর থেকে বাইরে রাখুন। মোবাইলে ক্ষতি থেকে নিজেকে রক্ষা করুন।

এআই/এনএস/