ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১০ ১৪৩১

যেভাবে গড়বেন অনন্য সন্তান

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০১:৩৫ পিএম, ৩১ জানুয়ারি ২০২১ রবিবার

সুস্থ, সুন্দর, দক্ষ, নৈতিক ও মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন সন্তান পাওয়া কিংবা আলোকিত মানুষ হিসেবে একজন সন্তানকে গড়ে তোলা এখন যুগের অন্যতম চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে সৃষ্টি হচ্ছে মা-বাবা ও সন্তানের মতপার্থক্য বা এটাকে জেনারেশন গ্যাপও বলা যেতে পারে। বৃদ্ধি পাচ্ছে গ্রেটেস্ট (মা-বাবা) ও লেটেস্ট (সন্তান)- এই দুই প্রজন্মের মানসিক দ্বন্দ্ব।

এর পাশাপাশি বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহারে তৈরি হচ্ছে আরও নানা রকম জটিলতা। 

মা-বাবা বলছেন- বেয়াড়া সন্তান, কথা শোনে না। আর সন্তানের মতে, ব্যাকডেটেড মা-বাবা কিছুতেই বুঝতে চায় না। নিজেদের ধারণা বা মতামত কেউ কাউকে বোঝাতে পারছেন না। দু’পক্ষেরই দাবি, তারা যা ভাবছেন সেটাই ঠিক, সেটাই সেরা। আর এই সেরার লড়াইয়ে কেউ কাউকে ছাড় দিতেও নারাজ।

আর এতে করে শুধু কী ঐ সন্তান কিংবা ঐ পরিবারই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে? না, শুধু একটি পরিবার নয়, একটি যথার্থ সন্তান গড়ে না ওঠার ক্ষতিকর প্রভাব পুরো সমাজ বা জাতির ওপরেই পড়ে। কেননা, পৃথিবীর মানচিত্রে এক মহান জাতি হিসেবে আমাদের জন্ম নেয়ার জন্যে কিছু অনন্য মানুষের আজ বড় বেশি প্রয়োজন। আর এই অনন্য মানুষ হওয়ার শক্তি নিহিত রয়েছে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে।

বিয়ের পর কোনও মানসিক প্রস্তুতি ছাড়াই আমরা সন্তানের মা-বাবা হয়ে যাই। কিন্তু সত্যিকার মা-বাবা হওয়ার প্রস্তুতি শুরু করতে হয় বিয়ের সিদ্ধান্তের সময় থেকেই। বিয়ের সময় সঠিক পাত্র-পাত্রী নির্বাচন করা, পরবর্তীতে সফল মা-বাবা হওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

অনেক সময় আমরা মনে করি, আগে শিশুটি ভূমিষ্ঠ হোক তারপর তার লালন পালন নিয়ে ভাবা যাবে। কিন্তু একটি মায়ের গর্ভে যখন শিশুর অস্তিত্ব শুরু হয়, তখন থেকেই তার যত্ন নিতে হয়। অর্থাৎ ভ্রুণ থেকেই তার যত্নের প্রয়োজন। 

পাশাপাশি যে মা তাকে পরম যত্নে পৃথিবীতে নিয়ে এলো, সেই মাকেও অবহেলা করা যাবে না। তার স্বাস্থ্যের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে, মাকে আনন্দে রাখতে হবে। কেননা, মায়ের শারীরিক-মানসিক ভালো থাকার প্রভাব সন্তানের ওপর পড়বে। 

আর জন্মগ্রহণ করার পর জীবনের প্রথচ পাঁচ বছর শিশুর মানসিক বিকাশের জন্যে খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই বয়সেই তাকে ভালো মন্দের পার্থক্য শেখাতে হবে। যা পরবর্তীতে তার নৈতিক মূল্যবোধ বিকাশে ভূমিকা রাখে। শিশুকে শৈশব থেকেই স্বাবলম্বী মানুষরূপে গড়ে তুলতে হবে। তাকে তার বয়সের উপযোগী ছোট ছোট কাজ করতে উৎসাহিত করতে হবে।

মনে রাখতে হবে- অতিরিক্ত আহ্লাদ যেমন সন্তানকে নষ্ট করে ফেলে, তেমনি অতিরিক্ত শাসনও সন্তানকে হীনমন্য, আত্মবিশ্বাসীহীন মানুষে পরিণত করে। তাই সন্তানকে আদর শাসনের ভারসাম্যে পরিপূর্ণ মানুষরূপে গড়ে তুলতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে- টিভি বা কম্পিউটারকে যেন বেবি সিটার না বানিয়ে ফেলি, সন্তান বড় হওয়ার ক্ষেত্রে মা-বাবা উভয়েরই সময় দেয়া প্রয়োজন।

সন্তানকে ইতিবাচক আচরণ ও সঠিক জীবন দৃষ্টি শিক্ষা দিতে হবে। জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ ও তা অর্জনের জন্যে কাজ করতে উৎসাহিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, সন্তানকে একজন আত্মবিশ্বাসী ও সফল মানুষ হিসেবে এগিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব মা-বাবা হিসেবে আমাদেরকেই নিতে হবে। যাতে সে তার মেধা ও যোগ্যতাকে পরিপূর্ণরূপে বিকশিত করে একটি সভ্য সমাজ ও জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।

এআই/এনএস/