বই মেলায় আবুল কাসেম শিল্পীর ‘অদেখা সব লাল রং’
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৯:৪১ পিএম, ২৩ মার্চ ২০২১ মঙ্গলবার
বঙ্গবন্ধুর অসাধারণ নেতৃত্বে সাড়ে সাত কোটি মানুষ একটি শোষণমুক্ত সমাজ-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে মধ্যযুগীয় পাকিস্তানকে বাঙলার মাটি থেকে চিরতরে বিদায় করেছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের নীতি চতুষ্টয় গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদের আলোকে দেশ পরিচালিত হবে। দেশবাসীর এমন প্রত্যাশা আকস্মিক মুখ থুবড়ে পড়ে। পঁচাত্তরের পট পরিবর্তনের পর পরাজিত শক্তির উত্থান, ইতিহাসের চাকা উল্টোদিকে ঘোরানোর রাষ্ট্রীয় প্রচেষ্টায় ভয়ানক মর্মাহত কবির উচ্চারণ-
স্তব্ধ শশ্মানের ভয় এখনো কাটেনি
নব্বই এর মিটি মিটি আলোয়
কে চোঙ্গাবাজ ভেতরে পোষে রাজাকার?
আর মেষের দেশ ভেবে বলে, বিপন্ন ইসলাম!
ঘন কুয়াশায় ঝাপসা পথ সবুজ মাঠ
বিশ্ববেহায়ার গ্রাসে শাপলা, দোয়েল
অদৃশ্য বঙ্গবন্ধু, বিতর্কিত রবীন্দ্রনাথ
খণ্ডিত নজরুল।
ডাকাত পড়েছে ধর্মনিরপেক্ষতায়
ছিনতাই চার স্তম্ভ সংবিধানের
(একানব্বইয়ের কড়চা)
জনজীবনের ক্রান্তিকাল, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জীবন ও জীবিকার নিরন্তর সংগ্রাম থেকেই উত্থিত নির্যাস নিয়েই অদেখা লালরং। গদ্যভঙ্গি, নাট্যচেতনা, করোনা বিষাদ, প্রেম, মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নভঙ্গ কবিতার পরতে পরতে। শিল্পীর কবিতা কে নেই? মুনসুর হাল্লাজ থেকে আবদুল হাকিম, কমরেড মুজফ্ফর আহমদ থেকে বিপ্লবী লালমোহন সেন। কবিতার মধ্য দিয়ে তিনি এক স্বপ্নজগৎ রচনা করতে চান। পাঠককে নিয়ে যেতে চান বোধের এক অনন্য উচ্চতায়। ইহজাগতিক সৌন্দর্যে বিশ্বাসী
আবুল কাসেম শিল্পী যখন শ্লেষের ভঙ্গিতে বলেন,
প্রথাসিদ্ধ লাটিমের স্থিত ঘূর্ণনে
ঘুরছেন তো ঘুরুন
জাবর কাটুন জোরে শোরে বহুত ফায়দা হবে
বুঝুন আর না-ই বুঝুন
অন্ধত্বের রেওয়াজ করুন একীন দিলে
আউর নেকি হাসিল করুন বেশি বেশি।
(আপন ঢোলে বাড়ি)
আবুল কাসেম শিল্পীর এ প্রথম কাব্যগ্রন্থের শেষাংশে একটি কাব্যনাটিকা রয়েছে। গাবতলার রক্তজবা নামক কাব্যনাটিকায় কবি পশ্চাৎপদতার বিরুদ্ধে মুক্তচিন্তার জয়গান গেয়েছেন। সমাজ-প্রগতির একজন আপোসহীন নাট্যযোদ্ধার প্রথম গ্রন্থে বেশ সাহস-সৌন্দর্য-সংগ্রামের ত্রিবেণী সঙ্গম ঘটেছে। আবদুল হাকিম, মুজফ্ফর আহমদ, লালমোহন সেন প্রমুখের চরিত্র চিত্রায়ণের মধ্য দিয়ে একটি সমঅধিকার ভিত্তিক সমাজ, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রব্যবস্থার অপরিহার্যতাকে চিহ্নিক করবার চেষ্টা করেছেন। শিল্পীর কাব্যে সঙ্গীত চেতনা একটি অনুচ্চারিত বিষয়। তাঁর অধিকাংশ কবিতাকে অনায়াসে সুরারোপ করা যেতে পারে। এসব কবিতায় আঞ্চলিক শব্দের ব্যবহারও লক্ষ করা যায়।
অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২১ উপলক্ষে কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশ করেছে অক্ষরবৃত্ত প্রকাশনী। নান্দনিক ভাষ্যে গ্রন্থটি উৎসর্গ করা হয়েছে শহীদ জননী জাহানারা ইমামকে। প্রচ্ছদ এঁকেছেন আল নোমান। সাড়ে চারফর্মার গ্রন্থটির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২২০/-টাকা।
কেআই/এসি