বই মেলায় আসছে মিলটন রহমানের ‘ইদ্দতকালে ভিন্ন স্বর’
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১২:৩০ পিএম, ২৪ মার্চ ২০২১ বুধবার

বই মেলায় প্রকাশ পাচ্ছে লেখক মিলটন রহমানের নতুন উপন্যাস ‘ইদ্দতকালে ভিন্ন স্বর’। কেবল বাংলা নয়, বিশ্ব সাহিত্যেরও অধিকাংশ উপন্যাসে ধরা আছে পেছনের আখ্যান। ‘ইদ্দতকালে ভিন্ন স্বর’ উপন্যাসেও লেখক অতীতচারী থেকে বলেছেন আগামী দিনের খবর। এটি উপন্যাস সাহিত্যে নবতর সংযোজন।
মেটাফোর, ম্যাজিক রিয়ালিজম এবং জটিল দর্শন চিন্তার অর্শ্ববেগি এক গল্প গাঁথা উপন্যাস ‘ ইদ্দতকালে ভিন্ন স্বর’। রাজনীতি-প্রেম দু’টো বিপুল পরাক্রমে ধরা আছে এই উপন্যাসে।
একটি কালখন্ড। যার ভেতর হেঁটে চলে নিতান্ত গ্রাম্য কিশোর থেকে বেড়ে ওঠা তরুণ নিতাই চাঁন। সরল, প্রাকৃত-অতিপ্রাকৃত ঘটনাবহুল সময়ের স্বাক্ষী নিতাই। নানান সংস্কার, গ্রামীন ও ধর্মীয় মিথ, স্বদেশ ও বৈশ্বিক রাজনীতি, যুদ্ধ-বিগ্রহের অভিজ্ঞতা গ্রামের সহজ সরল কিশোরোত্তীর্ণ তরুণকে ঠেলে দেয় মারিয়ানা ট্রেঞ্জের মতো অতল খাদে। যার জটিল বিশ্বে ধরা দিয়েছে, সাতচল্লিশের দেশ ভাগ, পঞ্চাশের জমিদার প্রথা বাতিল, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যাসহ বিবিধ রাজনীতি। একই সময়ে ইরাক-ইরান যুদ্ধ, ইরাক কুয়েত যুদ্ধ, পশ্চিমা বিশ্বের আগ্রাসী ভূমিকাও বাদ পড়েনি তার চৌহদ্দি থেকে। মঙ্গল রাষ্ট্রের খোঁজ করতে গিয়ে নিতাই আবিস্কার করে আরো জটিল এবং বুর্জোয়া এক বিশ্ব। গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, পুঁজিবাদ, রাজতন্ত্র এসব কোন তন্ত্রই নিজস্ব অবস্থানে নেই। সোভিয়েত ভেঙে পনের টুকরো হওয়ার ঘটনা থেকে জেনে যায় সমাজতন্ত্র বা কমিউনিজম নিজস্ব অবস্থান থেকে যোজন দূরে। গণতন্ত্রের নিজস্ব কোন শক্তি নেই, সে পুঁজিবাদ চালিত! গণতন্ত্র হচ্ছে প্লেটোর সেই ‘দি শীপ অফ স্টেট’। যেখানে একটি দেশের মানুষ ওই নেশাগ্রস্থ জাহাজের মালিকের কাছেই বন্দী। তার এসব চিন্তার মজ্জায় এসে দাঁড়ায় কখনো রহস্যময় সুন্দরী তরুণী, কখনোবা অচেনা পাখি কিংবা বংশিবাদক যে কিনা রাতে পরী নাচায়।
কৈশোরে যে উচ্ছলতা নিয়ে বেড়ে উঠছিলো, তারুণ্যে এসেই নিতাই জেনে যায় জটিল বিশ্বের খবর। রাজনীতির চালে অপহরণ হয়ে যাওয়া নিতাই কিভাবে দেশী-বিদেশী সংবাদ মাধ্যমে খবর হয়ে যায়। কিভাবে তার বৈশ্বিক পরিচয় দাঁড়িয়ে যায়, উপন্যাসের মধ্যপথে নেয়া বাঁকে তা পরিস্কার হয়ে ওঠে। মিডিয়ার সম্মুখে সেই তরুণ বিশ্বে প্রচলিত সব তন্ত্রের রাজনীতি বাতিল করে দিলেই নড়ে ওঠে বিশ্ব। পুরো বিশ্বকে যেনো সে তরুণ ইঙ্গিত দেয় অন্য কোন চিন্তা অন্য কোন রাজনৈতিক দর্শনের।
রাজধানীতে নিতাই’র সাথে এমন আরো কিছু মানুষের আড়ালের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। উচ্চ শিক্ষায় ইংল্যান্ডে গিয়ে সেখানেও যুক্ত হয় সহযোদ্ধা ও বন্ধু লরা এবং বাস্কি নামের এক চিত্র শিল্পীর কাজের সাথে। যার কাজ হচ্ছে প্রচলিত নীতির বিরুদ্ধে নতুন যুক্তি প্রতিষ্ঠা। কাজের সাথে পরিচয় হলেও দেখা হয় নি শিল্পীর সাথে। ব্রিটিশ সরকার অনেক চেস্টা করেও বাস্কি কে তা আবিস্কার করতে পারে নি। সেখান থেকে যোগাযোগের সূত্র দীর্ঘ হতে থাকে তার। এখানে যাদের সাথে সম্পর্ক হয় তাদের রাজনৈতিক দর্শনও এক। বাংলাদেশে অপহরণ এবং রাজনীতি বিষয়ে তার অবস্থান ঘোষণার কারণে কেবল আন্তর্জাতিক মিডিয়া নয় আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও তার গতি বিধি লক্ষ্য করে। এভাবেই উপন্যাসের প্লট এগিয়েছে নতুন রাজনীতির সন্ধানে।
এক গ্রাম্য কিশোর কিভাবে সেই বৈশ্বিক রাজনীতির অংশ হয়ে গেলো এবং শেষ পরিণতিতে বিশ্ব গোয়েন্দা সংস্থার লক্ষ্যে পরিণত হলো তাই বিদৃত হয়েছে এ উপন্যাসে।
বইটি প্রকাশিত হচ্ছে পাঞ্জেরী প্রকাশনী থেকে। এটির লেখক মিল্টন রহমান।
লেখক মিলটন রহমানের পৈতৃক নিবাস চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে। স্কুল-কলেজের পাঠ শেষ করেছেন চট্টগ্রামেই। এরপর ভর্তি হন ঢাকা কলেজে। বাংলায় এম এ করেন। এরপর ২০১০ সালে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ওয়েলস থেকে এমবিএ করেন। ২০১১ সাল থেকে যুক্তরাজ্যের বাংলা টিভিতে বার্তা সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন। যুক্ত আছেন লন্ডন বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের সঙ্গে।
পেশাগত জীবনের বাইরে মিলটন রহমান একজন লেখক। লিখেন ছোটগল্প ও কবিতা।
এসএ/