ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৫ ১৪৩১

বরাত মানে কী, ভাগ্যটা আসলে কী?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:১২ পিএম, ২৯ মার্চ ২০২১ সোমবার | আপডেট: ০৯:৩২ পিএম, ২৯ মার্চ ২০২১ সোমবার

আমরা বিশ্বাস করি- আল্লাহ যা খুশি তাই করতে পারেন। যা ইচ্ছা তা-ই করতে পারেন। কিন্তু তিনি করেন একটা নিয়মের মধ্য দিয়ে। আর তা হলো যে- আপনাকে আপনার অংশটুকু করতে হবে, তাহলে আপনার বাকি অংশটুকু তিনি করবেন।

রসুলুল্লাহ (স.)-এর জীবনে অলৌকিকত্ব তখন এসছে, যখন তিনি বাস্তবে তাঁর কাজগুলো সম্পন্ন করেছেন। আল্লাহর হাবীব রসুলুল্লাহ (স) জীবনে যতগুলো কাজ করেছেন, তন্মধ্যে অলৌকিকত্ব তখনই এসছে, যখন তিনি বাস্তবে তাঁর কাজগুলো সম্পন্ন করেছেন।

আমরা যদি দেখি যে, হিজরতের সময় তিনি যখন মক্কা থেকে মদিনায় গেলেন, পৌঁছলেন; সমস্ত পরিকল্পনা অত্যন্ত সুন্দরভাবে, নিখুঁতভাবে তিনি সম্পন্ন করেছিলেন।

দ্রুতগামী উট যোগাড় করা থেকে শুরু করে মদীনার উল্টোদিকে তিনদিন একটা গুহাতে তিনি যে অবস্থান করবেন, সেটা তার মরুপথের বেদুঈন গাইড ঠিক করে দিয়েছিলেন (যিনি একজন পৌত্তলিক ছিলেন)। কিন্তু মরু পথের আদি-অন্ত তার জানা ছিল। তিনি সেই গাইডকে ঠিক করলেন এবং প্রত্যেকদিন আবুবকর (রা.) এর মেয়ে ও মেষপালক খাবার নিয়ে যেত। এবং তাঁর ছেলে সারাদিন মক্কায় কী হচ্ছে- তার খবর নিয়ে যেতেন।

তিনদিন পরে গাইড যখন এলেন, তখন তাঁর জন্যে যাত্রাপথের খাবার আবুবকর কন্যা নিজে নিয়ে এলেন এবং পথের সমস্ত প্রতিকূলতা সমস্ত জনপদগুলোকে এড়িয়ে দুর্গম পথে তিনি মদিনায় পৌঁছলেন।

অর্থাৎ তাঁর দিক থেকে সমস্ত পরিকল্পনা তিনি সুসম্পন্ন করেছিলেন এবং সে কারণেই নিঃসন্দেহে আল্লাহর রহমত তিনি পেয়েছিলেন। আল্লাহ তাকে রক্ষা করেছেন এবং সহিহ-সালামতে তিনি মদিনায় পৌঁছেছেন।

আমরা পথের অলৌকিক ঘটনাগুলো শুধু দেখি। কিন্তু আমরা নবীজীর (স.) যে প্রস্তুতি, সেই প্রস্তুতিটা আমরা দেখি না। আসলে আপনি আপনার অংশটা যখন সম্পন্ন করবেন তখন আল্লাহ তাঁর অংশ নিজে করবেন। এটাই হচ্ছে আল্লাহর আইন। এটাই হচ্ছে আল্লাহর নিয়ম। আল্লাহ ভাগ্য লেখেন, ভাগ্য পরিবর্তন করেন, সবকিছুই করেন। কিন্তু আপনার কাজের অংশটুকু আপনাকেই করতে হবে।

আপনার সুস্থতার জন্যে, ভালো থাকার জন্যে, রোগ থেকে মুক্ত থাকার জন্যে করণীয়টা আপনাকেই করতে হবে। যে কারণে আল্লাহর রসুল (স.) বলেছেন যে, তুমি নির্ভর করো আল্লাহর উপরে। কিন্তু উটটাকে- ভালোমতো খুঁটির সাথে বেঁধে রেখো। তারপরে আল্লাহর উপরে ছেড়ে দাও।

অর্থাৎ জীবন চলার পথেও আপনার সুস্থতার জন্যে, আপনার ভালো থাকার জন্যে, বালা-মুসিবত থেকে মুক্ত থাকার জন্যে আপনার যা করণীয়, এই করণীয়টা আপনাকেই করতে হবে। এবং যখনই করণীয়টা সুসম্পন্ন করবেন, তখনই আল্লাহর রহমতের ছায়ার মধ্যে আপনি চলে আসবেন। আল্লাহ আপনার ওপর রহমত দান করবেন।

ভয়-আতঙ্ক-গজব -এসবই কর্মফল। আমাদের যে ভয়-আতঙ্ক-গজব -এগুলোর কারণ আল্লাহতায়ালা খুব পরিষ্কারভাবে বলেছেন, এটা তোমাদের কর্মফল। “কী? এতিমের প্রতি সম্মানজনক আচরণ করো না, অভাবী-অসহায়কে অন্নদানে পরস্পরকে উৎসাহিত করো না, অন্যের উত্তরাধিকারের সম্পদ নিজেরা আত্মসাৎ করো? আর ধন-সম্পত্তির প্রতি তোমাদের আকর্ষণ আসক্তিতে পরিণত হয়েছে।”

আমরা রোগ নিয়ে আতঙ্কগ্রস্ত না হয়ে নিরাময়ের অনুসন্ধান করতে পারি। এবং বোখারী শরীফের হাদিস হচ্ছে, আল্লাহ তায়ালা এমন কোনও রোগ পাঠান নাই যার নিরাময়ও তিনি পাঠান নাই। তো আমরা রোগ নিয়ে আতঙ্কগ্রস্ত না হয়ে নিরাময়ের অনুসন্ধান করতে পারি।

সেইসঙ্গে নিজের দেহের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্যে সঠিক খাদ্যাভ্যাস, যোগ ব্যায়াম, ইয়োগা এবং মেডিটেশন করতে হবে। এবং ইয়োগা মেডিটেশন যে শুধু দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে তা নয়! এটি আপনার উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও কমিয়ে দিবে। 

আমাদের জন্যে আল্লাহর স্মরণ এবং বেশি বেশি দরুদ শরীফ পাঠ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা হ্রাসে সবচেয়ে কার্যকরী ওষুধ হতে পারে। আর আমরা যারা গভীরভাবে বিশ্বাসী- আমাদের জন্যে আল্লাহর স্মরণ এবং বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা- এটা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা হ্রাসে সবচেয়ে কার্যকরী ওষুধ হতে পারে।

আসলে যে অন্তর থেকে আল্লাহকে স্মরণ করে, সেই অন্তরে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, মৃত্যুভয়- এই ভয় কখনও স্থান পেতে পারে না।

অতএব আজকের শবে বরাতের অন্যতম উদ্দেশ্য হোক নিজেকে পুরোপুরি আল্লাহর কাছে সমর্পিত করার। এবং সবকিছু নিজের অনুশোচনার মধ্য দিয়ে, নিজের সুস্থ জীবনধারার অনুসরণের প্রতিজ্ঞার মধ্য দিয়ে স্রষ্টার কাছে নিজেকে সমর্পণ করার।

এনএস/