ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা থাকুক বস্ত্র শিল্প 

সৈয়দ নুরুল ইসলাম

প্রকাশিত : ০৬:৪৪ পিএম, ১০ এপ্রিল ২০২১ শনিবার

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে সরকার মানুষকে ঘরে ঢুকিয়ে রাখতে চান একসপ্তাহের জন্য। গণস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা চান কম করে হলেও ১৪ দিন। আমিও মনে করি এর কোন বিকল্প নাই। করোনার এই উর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সব কিছু বন্ধ করে আমাদের ঘরে থাকতেই হবে। তার জন্য দরকার কড়া লকডাউন।

এখন কথা হচ্ছে লকডাউনে শিল্প-কারখানা কি বন্ধ থাকবে না বিশেষ ব্যবস্থায় শিল্প কারখানা খোলা রেখে উৎপাদন ব্যবস্থাকে সচল রাখা  হবে?

শিল্প-কারখানা খোলা বা বন্ধ রাখার প্রশ্ন আসলেই সবাই পোশাক কারখানার কথা বলে। তার সংগত কারণও আছে। দেশের প্রায় ৮৫ শতাংশ রপ্তানি আয় আসে এই খাত থেকে। কিন্তু আমরা ভুলে যাই আমাদের পোশাক খাত এখন আর কাপড় কেটে সেলাই করে বিদেশে রপ্তানি করেনা। আমাদের পোশাক খাতের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৭০ শতাংশ যোগান দেয় আমাদের বস্ত্র খাত যেখানে তুলা থেকে সুতা তৈরি হয়, সুতা থেকে কাপড়। আর সেই কাপড় কেটে সেলাই করে পোশাক খাত রপ্তানি করে। বস্ত্র খাতের পাশাপাশি গার্মেন্টস এক্সেসরিজ খাত ও সম্পৃক্ত। তাই শুধু পোশাক কারখানা খোলা রাখা বা বন্ধ রাখা নিয়ে ভাবলে হবেনা। ভাবতে হবে পুরো বস্ত্র, এক্সেসরিজ ও পোশাক খাতের কারখানা নিয়ে। পোশাক খাতের কারখানা খোলা রাখা হল। কিন্তু সুতা ও কাপড় তৈরির সঙ্গে এক্সেসরিজ কারখানা বন্ধ। তাতে লাভ কি? সুতা, কাপড় ও এক্সেসরিজ এর অভাবে পোশাক কারখানার উৎপাদন চালু থাকবে কি ভাবে? তাই কারখানা বন্ধ রাখা বা খোলা রাখার ব্যাপারে শুধু পোশাক খাতের কারখানার কথা ভাবলে ঠিক হবেনা। ভাবতে হবে বস্ত্র ও এক্সেসরিজ খাতের কারখানার কথাও। 

এখন প্রশ্ন, কারখানা খোলা থাকবে না বন্ধ থাকবে? আমি বলি দেশের অর্থনীতির স্বার্থে পুরো বস্ত্র ও পোশাক খাতের কারখানাগুলো কঠোর স্বাস্থ্য বিধি মেনে চালু রাখতে হবে। গতবারের অভিজ্ঞতা কি বলে? বিজিএমইএ'র তৎকালীন নেতৃত্বের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে কারখানা একবার খোলা একবার বন্ধ-এই করে হাজার হাজার শ্রমিক কর্মচারীদের রাস্তায় নামানো হল।পরবর্তীতে টাস্কফোর্স গঠন করে সিদ্ধান্ত হল কারখানা খোলা থাকবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে। আজকের অভিজ্ঞতা বলে সেই দিন টাস্ক ফোর্সের পরামর্শে  প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তই সঠিক ছিল। বিজিএমইএ’র নেতৃত্বের সেই দিনের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে যেই ক'দিন কারখানা বন্ধ ছিল তার জন্য বস্ত্র ও পোশাক রপ্তানি খাতের ক্ষতি ছিল প্রায় ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সেই ক্ষতি পুষিয়ে আমাদের বস্ত্র ও পোশাক খাত কবে আবার ঘুড়ে দাঁড়াবে সেটার কোন ঠিক নেই। আবারো যদি লকডাউনের কারণে বস্ত্র ও পোশাক খাতের কারখানা বন্ধ রাখা হয় তবে পুরো খাতই একেবারে শেষ হয়ে যাবে।

সরকারের প্রণোদনা বলি আর সহায়তা বলি কিছুই কাজে আসবেনা। তাই সরকারের প্রতি বিনীত অনুরোধ বস্ত্র, পোশাক ও এক্সেসরিজ খাতের কারখানাগুলোকে লকডাউনকালীন সময়ে কঠোর স্বাস্থ্য বিধি মেনে আগের মত খোলা রাখার সুযোগ দিলে আমাদের রপ্তানিখাত টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যেতে পারবে। বেঁচে থাকবে পুরো সেক্টরে কর্মরত ৫০ লক্ষের উপর নারী ও পুরুষ শ্রমিক কর্মচারী সহকর্মীরা।

লেখক: চেয়ারম্যান ও সিইও, ওয়েল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রি