ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সুন্দরবন থেকে ৫ মৌয়াল আটক 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:১৪ পিএম, ১৭ এপ্রিল ২০২১ শনিবার | আপডেট: ০৯:২৩ পিএম, ১৭ এপ্রিল ২০২১ শনিবার

প্রতিকী ছবি

প্রতিকী ছবি

সুন্দরবনের অভয়ারণ্য এলাকায় প্রবেশ করে গড়ান গাছ ও গোলপাতা আহরণের অভিযোগে ৫ মৌয়ালকে আটক করেছে বন বিভাগ। আটককৃতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের পূর্বক শনিবার (১৭ এপ্রিল) বিকেল আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। এর আগে শুক্রবার (১৭ এপ্রিল) বিকেলে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের কোকিলমনি টহল ফাঁড়ি এলাকা থেকে এদেরকে আটক করে।
  
বনরক্ষীরা আটককৃত মৌয়ালদের পরিবারের অভিযোগ মৌয়ালরা চাহিদা মতো মধু না দেওয়ায় জোরপূর্বক মধু লুট ও মারধরের অপরাধ ঘটনা ধামাচাপা দিতে এই আটকের নাটক সাজানো হয়েছে বলে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন।

আটককৃতরা হলেন, শরণখোলা উপজেলার সোনাতলা গ্রামের শহিদুল হাওলাদার (৩৫), সলেমান হাওলাদার (৩০), রফিকুল গাজী (৪০), আফজাল (৪৫) ও একই উপজেলার রসুলপুর গ্রামের বেল্লাল (২৮)। এরা সবাই শহিদুলের নৌকায় মধু আহরণে সুন্দরবনে গিয়েছিল।

নৌকার মহাজন শহিদুল হাওলাদারের স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, বনবিভাগের কাছ থেকে বৈধ পাশ পারমিট নিয়ে মধু আহরণ করতে সুন্দরবনে গিয়েছিলো আমার স্বামী। সুন্দরবনে মধু আহরণে গেলে বনরক্ষীরা জন প্রতি এক কেজি মধু চাঁদা হিসেবে নিতো। কিন্তু এ বছর জন প্রতি সাড়ে তিন কেজি মধু দাবি করে। ১৭ এপ্রিল বিকেলে কোকিলমনি এলাকায় অবস্থানকালে এই মধু দিতে অস্বীকৃতি জানালে বনরক্ষীরা আমার স্বামীসহ নৌকায় থাকা আরও চারজনকে ধেরে নিয়ে যায়। নিয়ে সেখানে তাদেরকে মারধর করে এবং নৌকা, কিছু নগদ টাকা ও নৌকার মধু লুট করে বনরক্ষীরা। আমরা অন্য মৌয়ালদের কাছ থেকে খবর পেয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তাদের মুঠোফোন বন্ধ পাই। পরবর্তীতে আজ বিকেলে জানতে পারি তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের পূর্বক আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। আমরা গরীব মানুষ সুন্দরবন থেকে মধু আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করি এভাবে আমাদের উপর অত্যাচার করলে আমরা কোথায় যাব?

অন্য আটককৃতদের স্বজন নাছিমা বেগম, তাসলিমা বেগম ও খাদিজা বেগম বলেন, গত ১ এপ্রিল শরণখোলা ষ্টেশন থেকে ১৫ দিনের পারমিট নিয়ে মৌয়ালরা সুন্দরবনে মধু আহরনে যায়। শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) কোকিলমনি টহল ফাঁড়িতে যায় শহিদুলসহ অন্য মৌয়ালরা। এ সময় ঘুষ হিসেবে এক কেজি মধুর জায়গায় সাড়ে তিন কেজি মধু দাবি করলে শহিদুলসহ অন্য মৌয়ালরা এই পরিমান মধু দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে বনরক্ষী রিয়াজ তার সহকর্মীদের নিয়ে মৌয়াল শহিদুলকে আটক করে বেধরক মারধর করতে থাকে। এ দৃশ্য দেখে সকল মৌয়ালরা মিলে তাকে উদ্ধার করার চেষ্টা চালায়। এ নিয়ে দু'পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। পরে টহলরত কোষ্টগার্ড সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। বনরকক্ষীরা নৌকা, নৌকার মধুসহ শহিদুল ও অন্য মৌয়ালদের আটক করে। আমরা এই মারধর ও মামলার বিচার চাই।

তারা আরও বলেন, সুন্দরবনে পাশ পারমিট দিয়ে মধু আহরণ করি আমরা। সেখানে কেন এক কেজি-দুই কেজি-তিন কেজি করে মধু দিতে হবে। আমরা এই অন্যায় নিয়ম থেকে মুক্তি চাই।

বন বিভাগরে শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা (এসিএফ) মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, মৌয়ালরা অভয়ারণ্যে প্রবেশ করে গোলপাতা ও গড়ান কাঠ কাটছিল। তাদেরকে বাঁধা দিলে মৌয়ালরা কটকা অভায়রণ্য কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালামসহ তিনজন বনরক্ষীদের মারধর করে। পরবর্তীতে কোস্টগার্ডের সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। পাঁচ মৌয়ালকে আটক করা হয়েছে।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, শরণখোলা রেঞ্জের অভয়ারণ্য এলাকায় প্রবেশ করে গেড়ান কাঠ ও গোলপাতা আহরণের অভিযোগে ৫ জেলেকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের পূর্বক আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। তাদের পরিবারের লোকেরা যে অভিযোগ করেছে সে বিষয়টি আমার জানা নেই। আপনাদের মাধ্যমে যে বিষয়টি জেনেছি, তা পুরো ঘটনা তদন্ত করা হবে তদন্তে সত্যতা পেলে বনরক্ষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি।
কেআই//