ঢাকা, মঙ্গলবার   ৩০ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১৭ ১৪৩১

‘ইয়াস’ আতঙ্কে সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলবাসি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৪৩ পিএম, ২৪ মে ২০২১ সোমবার

সিডর, আইলা, আম্ফান এর মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে লড়াই করে টিকে থাকাসুন্দরবন উপকূলের শরণখোলা, মোংলা, রামপাল ও মোড়েলগঞ্জ উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার জেলে ও বাসিন্দাদের মধ্যে নতুন আতঙ্ক এখন ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। প্রবল এই ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানলে উপকূলীয় এলাকার মানুষের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির আশংকা করা হচ্ছে। তবে জেলা প্রশাসন থেকে বলা হচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবেলায় সকল ধরণের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

বাগেরহাট জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২৬ মে (বুধবার) ভারতের উড়িষ্যার উপকূল ও বাংলাদেশের সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকা অতিক্রম করবে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’। ইতিমধ্যেই জেলা প্রশসন থেকে জেলার সুন্দরবন সন্নিহিত উপজেলা শরণখোলা, মোংলা, রামপাল ও মোরেলগঞ্জ ঝুকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে জেলার ৩৪৪টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

এর মধ্যে শরণখোলা উপজেলায় সাইক্লোন শেল্টারের পাশাপাশি ২০টি, মোংলা ১০টি ও রামপালে ১৪৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে হ্যান্ডস্যানিটাইজার ও মাস্ক এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে ১ কোটি ৮৭ লাখ ৫০ হাজার টাকাসহ মজুদ রয়েছে ২৮ মেট্রিক টন খাদ্য শস্য। আশ্রয় কেন্দ্রে গুলোতে পর্যাপ্ত পানি ও আলোর ব্যবস্থা করার পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিস, রেড ক্রিসেন্ট, নৌবাহিনী কোস্টগার্ডসহ সকল সরকারি বেসরকারি সংস্থাকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বাগেরহাট ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) খাদিজা আক্তার বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই সকল ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।  জেলা ৩৪৪টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলা শরণখোলা, মোংলা, রামপাল ও মোংলা উপজেলাকে ঝুকিপূর্ণ হিসাবে চিহ্নত করা হয়েছে। প্রয়োজন পরলে এসব উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি প্রতিষ্ঠান গুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি জেলার ৭৫টি ইউনিয়নে ২৫ হাজার টাকা ও ৩টি পৌরসভায় ২ লাখ টাকা করে বরাদ্ধ করা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় শিশু খাদ্যের জন্য ১ লাখ ও গো-খাদ্যের জন্য ১ লাখ টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি আশ্রয় কেন্দ্রে পর্যাপ্ত হ্যান্ডস্যানিটাইজার ও মাস্ক এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া জেলার অধিক ঝুকিপূর্ণ শরণখোলা,
মোরেলগঞ্জ, মোংলা ও রামপাল উপজেলায় ৪৬টি মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

এদিকে, ঘুর্ণিঝড় ইয়াস আতঙ্কে রয়েছে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন রায়েন্দা ও সাইথখালী ইউনিয়নের জেলে ও বাসিন্দাদের। সিডর, আইলা, আম্ফান এর মত প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে লড়াই করে টিকে থাকা এ এলাকার কয়েক হাজার জেলে ও বাসিন্দারা রয়েছে ঝুকির মধ্যে।

শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা ইউনিয়নের উত্তর কদমতলা গ্রামের বাসিন্দা আম্বিয়া বেগম বলেন, “প্রতি বছরই মোগো এইহানে ঝড় আয়। মোরা নদীর ধারে থাই। ঝড় আইলে সাইক্লোন সেন্টারে যাই। এর আগে যে ঝড়-তুফান আইছে, হ্যাতে মোগো গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি ব্যাবাগ কিছু ভাসাইয়া লইয়া গেছে।

শরণখোলার রাজেসর গ্রামের বাসিন্দা জেলে আসলাম শেখ বলেন, “সিডরে মোগো বাড়ি-ঘর সব কিছু গেছে। এহন মোরা এই নদীর পাড়ে ঘর বানাইয়া থাকি। নতুন কইরা নাহি আবার ঝড় আইতাছে। এই ঝড়ে যদি মোগো ঘর-দুয়ার আবার ভাসাইয়া লইয়া যায় মোরা কই গিয়া থাকমু।

একই উপজেলা জিলবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা কালাম হাওলাদার বলেন, “এক তো করোনা, হ্যাইয়ার মধ্যেই আবার ঝড়। এই ঝড় যদি আইয়া পরে মোরা কই যামুয়ানে। এই নদীর পাড়ে পোলাপান লইয়া থাহি। কি যে হরমু, ভাইব্বা পাইতেছিনা”।

শরণখোলা উপজেলা চেয়ারম্যান রায়হান উদ্দিন শান্ত বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবেলায় আমরা সকল ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। গত রাতে বৃষ্টি ছাড়া এখনও পর্যন্ত ঝড়ের তেমন কোন আলামত দেখা যাচ্ছে না। তারপরও ঝড় মোকাবেলায় উপজেলার প্রতিটি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। ইতি মধ্যেই আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত খাবার পানি মজুদ করার পাশাপাশি হ্যান্ডস্যানিটাইজার ও মাস্ক এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঝড়ের আলামত দেখা দিলেই সর্বপ্রথম সুন্দরবন উপকূলীয় জেলো ও বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হবে। 
কেআই//