ঢাকা, মঙ্গলবার   ৩০ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১৭ ১৪৩১

ইয়াসে মারা গেল চার হরিণ, পুকুরে ঢুকলো নোনা পানি 

এইচ এম মইনুল ইসলাম, বাগেরহাট

প্রকাশিত : ০৯:০৬ পিএম, ২৭ মে ২০২১ বৃহস্পতিবার

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলচ্ছাস ও প্রবল বাতাসে সুন্দরবনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সুন্দরবনের উপর দিয়ে ৫-৬ ফুট উচ্চতার জলচ্ছাসে কয়েকটি জলযান, ওয়াচ টাওয়ার, গোলঘর, রাস্তা, ফুট রেইল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। জোয়ারের পানিতে ডুবে মারা গেছে অন্তত চারটি হরিণ।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব শুরু হওয়ার পর থেকে সুন্দরবন সংলগ্ন নদ-নদী ও খালে পানি বাড়তে থাকে। বুধবার প্রায় ৫-৬ ফুট পানি উঠে যায় সুন্দরবনে। পানির তোরে পূর্ব সুন্দরবনের ১৯টি জেটি, ৬ টি জলযান (ট্রলার)ম দুটি গোলঘর, একটি ফুট রেইল, একটি ওয়াচ টাওয়ার, চারটি ষ্টাফ ব্যারাক ও একটি রেস্ট হাউজ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। অন্তত দশটি অফিসের টিনের চালা উড়ে গেছে ইয়াসের বাতাসে। সুন্দরবনের মধ্যে সুপেয় পানির সংস্থান হিসেবে পরিচিত ৯টি পুকুরের লবন পানি প্রবেশ করেছে। সুন্দরবন থেকে দুটি এবং লোকালয় থেকে ২টি হরিণের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সুন্দরবনের করমজল বন্য প্রাণি প্রজনন কেন্দ্রের দুটি কুমিরের শেড ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এই হিসেবে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের অন্তত ৬০ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে আশার কথা হচ্ছে সুন্দরবনের একমাত্র বন্য প্রাণি প্রজনন কেন্দ্র করমজলের কোন প্রাণির ক্ষতি হয়নি।

সুন্দরবনের করমজল বন্য প্রাণি প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলচ্ছাস ও বাতাসে কুমিরের দুটি শেড নষ্ট হয়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে আমরা বন্য প্রাণিগুলোকে নিরাপদ স্থানে নিয়েছি। এ যাত্রায় আমাদের কোন বন্য প্রাণির ক্ষতি হয়নি।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারি বন সংরক্ষক (এসিএফ) মোঃ জয়নাল আবেদিন বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব ও পূর্ণিমাতিথির জোয়ারের কারনে বনে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ থেকে ৬ ফুট পানি বৃদ্ধি পায়। এই পানিতে বনের প্রায় সব এলাকা প্লাবিত হয়েছে।  সুন্দরবনসংলগ্ন বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার বলেশ্বর নদীর তীরবর্তী রাজেশ্বরে একটি হরিণের, উত্তর তাফালবাড়িতে একটি, সুন্দরবনের দুবলা ও কচিখালী এলাকায় একটি করে হরিণের মৃতদেহ পাওয়া গেছে।বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত আর কোন বন্যপ্রাণি মৃত্যুর খবর পাইন আমরা।

এদিকে সেব দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, প্রতিটি ঝড় জলচ্ছাসে সুন্দরবন আমাদের রক্ষা করে। তবে আমাদের রক্ষা করলেও ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হয় সুন্দরবন । ইয়াসের প্রভাবে এখন পর্যন্ত আমরা ৫টি হরিণ মারা যাওয়ার খবর পেয়েছি। আসলে যে পরিমান জলচ্ছাস হয়েছে আরও বেশি প্রাণির প্রাণ হানি ঘটছে হয়ত। এই পরিস্থিতিতে সুন্দরবন রক্ষায় বাস্তবভিত্তিক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে। সুন্দরবনের মধ্যে পুকুর খনন করে বন্য প্রাণির জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে হবে। পুকুরের পারে যে উচু জায়গা থাকবে সেখানে যাতে বন্য প্রাণিরা থাকতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মাদ বেলায়েত হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সুন্দরবনে স্বাভাবিকের থেকে ৫-৬ ফুট বেশি পানি হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৭ মে) সকাল পর্যন্ত  আমরা যে তথ্য পেয়েছি, তাতে প্রবল পানির তোরে আমাদের বেশকিছু স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এর মধ্যে ১৯টি জেটি, ৬ টি জলযান (ট্রলার)ম দুটি গোলঘর, একটি ফুট রেইল, একটি ওয়াচ টাওয়ার, চারটি ষ্টাফ ব্যারাক ও একটি রেস্ট হাউজ রয়েছে। দুটি অফিসের রাস্তা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সব মিলিয়ে টাকার অংকে সুন্দরবনের প্রায় ৬০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে এটা প্রাথমিক ধারণা আরও বাড়তে পারে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান। কারণ এখন পর্যন্ত সব জায়গা যেতে পারেনি আমাদের কর্মীরা।

তিনি আরও বলেণ, সুন্দরবনে এবারের ঝড়ে তেমন কোন গাছপালা ভেঙ্গে যাওয়ার খবর পাইনি। তবে চারটি হরিণ মারা গেছে। একটি জীবিত হরিণও উদ্ধার করে বনের মধ্যে নিরাপদ স্থানে নিয়েছি। এর বাইরে হয়ত আরও কিছু বন্য প্রাণি বা স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানানো যাবে বলে জানান তিনি।

এছাড়া ইয়াসের প্রভাবে প্রাণহানির শঙ্কায় সোমবার (২৪ মে) সরিয়ে নেওয়া পূর্ব সুন্দরবনের যে আটটি টহল ফারির কর্মীদের পুনরায় সেখানো পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মাদ বেলায়েত হোসেন।

আরকে//