ঢাকা, রবিবার   ২৮ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১৫ ১৪৩১

শ্বশুরকে কাঁধে চাপিয়ে হেঁটে চলেন পুত্রবধূ, অতঃপর...!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০১:৫১ পিএম, ৬ জুন ২০২১ রবিবার

আসামের নারী নীহারিকা

আসামের নারী নীহারিকা

পরনের গোলাপি শাড়ি, আঁচল কোমরে কষে আঁটা। অবলীলায় এক বয়স্ককে কাঁধে চাপিয়ে হেঁটে চলেছেন এক নারী। পিঠ আঁকড়ে ঝুলছেন এক বৃদ্ধ। করোনা আক্রান্ত শ্বশুরকে পিঠে চাপিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া নীহারিকা দাসের এই ছবিটি এখন সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল। 

আসামের অভিনেত্রী থেকে বিহার-মুম্বাই-চেন্নাইয়ের বহু মানুষ কুর্নিশ জানাচ্ছেন নগাঁও জেলার এই নারীকে। কিন্তু জনপ্রিয়তা, ভাইরাল হওয়া, মানুষের কুর্নিশে আপাতত পাত্তা দেওয়ার অবস্থায় নেই তাঁর। কারণ নিজেও যে কোভিডে আক্রান্ত নীহারিকা! একটাই চিন্তা কেবল, একলা হাতে নিজেকে আর শ্বশুরমশাইকে কীভাবে সামলাবেন! 

কর্মসূত্রে রাজ্যের বাইরে থাকেন স্বামী সূরজ। ভাটিগাঁওয়ের বাড়িতে ৭৫ বছর বয়সি শ্বশুর থুলেশ্বরের দেখভাল, সংসার সামলানো সবকিছু একাই করেন নীহারিকা। শ্বশুরের জ্বর ও কোভিডের উপসর্গ দেখা দেওয়ায় তাঁকে পরীক্ষা করাতে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনেকের সাহায্য চেয়েও পাননি নীহারিকা। তাই অগত্যা শ্বশুরমশাইকে পিঠে চাপিয়েই তিনি রওনা হন রহা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। 

সেখানে থুলেশ্বরের কোভিড ধরা পড়ে। কোভিড ধরা পড়ে বৌমা নীহারিকারও। স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে থুলেশ্বরকে হাসপাতাল ও নীহারিকাকে হোম আইসোলেশনে পাঠানো হয়। কিন্তু অসহায় শ্বশুরকে একা ছাড়তে রাজি হননি নীহারিকা। বসে থাকেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। শেষ পর্যন্ত সঙ্গীতা ধর নামে এক চিকিৎসক দু’জনকেই অ্যাম্বুল্যান্সে ভোগেশ্বর ফুকনানি হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।

হাসপাতালে জেনারেল ওয়ার্ড থেকে নিয়ম করে এসে আইসিইউতে ভর্তি শ্বশুরের সেবা করছিলেন নীহারিকা। সেই ভিডিও-ও ছড়িয়ে পড়েছে। কখনও বউমা শ্বশুরের কপালে চুমু খেয়ে সাহস দেন। কখনও মজা করেন। কখনও বলেন, “এটা আইসিইউ দেউতা (বাবা), ভয় পাবেন না। বুড়ো হয়ে ঢুকেছেন, ডেকা (যুবক) হয়ে বেরোবেন।” 

কখনওবা তাঁকে বলতে শোনা যায়, “দেউতা আপনার কোনও চিন্তা নেই। কাঁদবেন না একদম। আমি তো আছি আপনার ভরসা। আর আমার আছেন আপনি।”

কিন্তু থুলেশ্বর বাবুর অবস্থা আরও খারাপ হওয়ায় গতকাল তাঁকে গুয়াহাটি মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে। তবে সঙ্গে যেতে পারেননি নীহারিকা। 

তাইতো এক ভিডিও বার্তায় হাতজোড় করে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, “শ্বশুরের রক্ত লাগবে শুনছি। তাঁর পাশে কেউ নেই। আমার নিজের শরীর ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। শক্তি শেষ হয়ে আসছে। দয়া করে আমায় গুয়াহাটির একই হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন। না হলে শ্বশুরমশায়কে সাহায্যের কেউ থাকবে না।”

এদিকে, নীহারিকার এসব ছবি ও ভিডিও দেখে রীতিমত মুগ্ধ আসামের অভিনেত্রী আইমি বরুয়া বলেন, “নারীশক্তির অনন্য চেহারা নীহারিকা।” 

অবশ্য অনেকেই মন্তব্য করছেন, পিঠে করে শ্বশুরকে বয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টির পিছনে যে পরিকাঠামোর অভাব, সরকারি সদিচ্ছার অভাব, দারিদ্রের যন্ত্রণা লুকিয়ে রয়েছে— তার সমালোচনা ও সংশোধন হওয়া বেশি প্রয়োজন। সূত্র- আনন্দবাজার।

এনএস/