ঢাকা, সোমবার   ০৬ মে ২০২৪,   বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

তামাকপণ্যের দাম ও কর বাড়ানোর দাবি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৪:২৯ পিএম, ১৩ জুন ২০২১ রবিবার | আপডেট: ০৪:৩০ পিএম, ১৩ জুন ২০২১ রবিবার

২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পাস হলে সব ধরনের তামাকপণ্য আরও সহজলভ্য হবে এবং তরুণ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠির মধ্যে তামাকের ব্যবহার বাড়বে। হুমকির মুখে পড়বে জনস্বাস্থ্য, লাভবান হবে তামাক কোম্পানি। সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাবে। তাই তামাকপণ্যের দাম ও কর বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন সংসদ সদস্য, অর্থনীতিবিদসহ দেশের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণ।

আজ রোববার (১৩ জুন) তামাকবিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স- আত্মা’র যৌথ উদ্যোগে আায়োজিত অনলাইন বাজেট প্রতিক্রিয়ায় এই দাবি জানান তারা।

অনুষ্ঠানে প্রজ্ঞা’র পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত বাজেট বিশ্লেষণ তুলে ধরে বলা হয়, বর্তমানে সিগারেট বাজারের প্রায় ৭২ শতাংশ নিম্নস্তরের সিগারেট এবং প্রায় ১৬ শতাংশ মধ্যম স্তরের সিগারেট। অথচ প্রস্তাবিত বাজেটে এই দুই স্তরের সিগারেটের দাম ও করহার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। উচ্চ ও প্রিমিয়াম স্তরে দশ শলাকা সিগারেটের দাম যথাক্রমে ৫ টাকা এবং ৭ টাকা বৃদ্ধি করে ১০২ টাকা এবং ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই নামমাত্র মূল্যবৃদ্ধি (৫%) জনগণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির (৯%) তুলনায় অনেক কম। ফলে সবধরনের সিগারেট আরও সস্তা হয়ে যাবে। 

২০০৯ এর তুলনায় ২০১৭ সালে সিগারেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বাজেট পাস হলে আরেক দফায় সিগারেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়বে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। বিড়ি এবং বহুল ব্যবহৃত জর্দা ও গুলের দাম বৃদ্ধি না করায় দরিদ্র মানুষের মধ্যে এসব পণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে এবং অতিরিক্ত স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হবে। 

প্রজ্ঞা’র পক্ষ থেকে আরও বলা হয় তামাকে বর্ধিত করারোপ একটি দরিদ্র-বান্ধব উদ্যোগ। দাম বাড়লে দরিদ্র জনগোষ্ঠির মধ্যে তামাক ব্যবহারের প্রবণতা অধিকহারে হ্রাস পায়। এতে অকাল মৃত্যু হ্রাসসহ তামাক ব্যবহারজনিত রোগে চিকিৎসা ব্যয় হ্রাস পায়। ফলে তামাকের কারণে দরিদ্র গৃহস্থালিতে উৎপাদনশীলতা এবং আয় সংক্রান্ত যে ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে তা পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হয়। 

বাজেট প্রতিক্রিয়ায় আরও জানানো হয়, সিগারেটে ত্রুটিপূর্ণ বহুস্তর বিশিষ্ট অ্যাডভ্যালুরেম করকাঠামো চালু থাকায় কমদামি সিগারেট ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে। ফলে সরকার দামি সিগারেট থেকে অধিক পরিমাণ রাজস্ব প্রাপ্তির সুযোগ হারাচ্ছে। 

তামাকবিরোধীদের প্রস্তাব অনুযায়ী চূড়ান্ত বাজেটে সুনির্দিষ্ট কর আরোপের মাধ্যমে সিগারেটসহ সকল তামাকপণ্যের দাম বৃদ্ধি করা হলে প্রায় ১১ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপায়ী ধূমপান ছেড়ে দিতে উৎসাহিত হবে, ৩ লাখ ৯০ হাজার বর্তমান ধূমপায়ী এবং ৪ লাখ তরুণের অকাল মৃত্যু রোধ হবে। সিগারেট থেকে সম্পূরক শুল্ক, স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ এবং ভ্যাট বাবদ অতিরিক্ত ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হবে। একইসাথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জন ত্বরান্বিত হবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি বলেন, ‘এবছর সিগাটেরের নিম্ন ও মধ্যম স্তরকে একত্রিত করে সুনির্দিষ্ট কর দিতে হবে। আমরাতো মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য কাজ করছি। আমরা তামাক সিন্ডিকেটের কাছে হারতে রাজি নই। গত একবছরে কোভিডে যত মানুষ মারা গেছে তারচেয়ে দশ-পনের গুণ মানুষ বছরের বেশি মারা যায় তামাক ব্যবহারের কারণে। তাই তামাককে নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।’

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং জাতীয় তামাকবিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, আমরা সকল তামাকপণ্যের দাম বৃদ্ধির কথা বলেছিলাম, সুনির্দিষ্ট করারোপের কথা বলেছিলাম কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে সেটা করা হয়নি। তবে প্রধানমন্ত্রী চাইলে এই বাজেট প্রস্তাব পরিবর্তন করতে পারেন। 

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস)-এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, কমদামি সিগারেটের দাম এক ধাক্কায় বাড়াতে হবে। এর ফলে তরুণরা ধূমপান শুরু করতে নিরুৎসাহিত হবে। আমরা আগামীর স্বাস্থ্যবান তরুণদের পেতে চাই। তাহলেই উন্নত বাংলাদেশ গড়তে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টের সুবিধা আমরা পাব। 

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস)-এর রিসার্চ ডিরেক্টর ড. মাহফুজ কবীর বলেন, প্রায় ৮৮ শতাংশ মানুষ নিম্ন ও মধ্যম স্তরের সিগারেটের ভোক্তা। তাই এখানে দাম বাড়ানোর প্রয়োজন ছিল, তাহলে রাজস্ব বাড়তো এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি কমানো যেত। 

বাজেট প্রতিক্রিয়ার আলোচনায় আরও অংশ নেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান ড. নাসির উদ্দিন আহমদ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার ডা. সৈয়দ মাহফুজুল হক, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে), বাংলাদেশ লিড পলিসি অ্যাডভাইজর মো. মোস্তাফিজুর রহমান এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের ইপিডেমিওলজি অ্যান্ড রিসার্চ বিভাগের অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী। 

আত্মা’র কো-কনভেনর নাদিরা কিরণের সঞ্চালনায় বাজেট বিশ্লেষণ এবং প্রস্তাব তুলে ধরেন প্রজ্ঞা’র তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক প্রকল্প প্রধান হাসান শাহরিয়ার। এছাড়া গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেন আত্মা’র কনভেনর মর্তুজা হায়দার লিটন, প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়েরসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধি এবং তামাকবিরোধী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। (বিজ্ঞপ্তি)

এএইচ/