ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০২ মে ২০২৪,   বৈশাখ ১৯ ১৪৩১

বিগো অ্যাপ ও লাইকির মাধ্যমে অর্থপাচার

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:৪৪ পিএম, ১৩ জুন ২০২১ রবিবার | আপডেট: ১০:০৫ পিএম, ১৩ জুন ২০২১ রবিবার

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) বলেছে, লাইভ ভিডিও স্ট্রিমিং অ্যাপ ‘লাইকি’ ও ‘বিগো লাইভ’র মাধ্যমে অবৈধভাবে দেশ থেকে প্রতি মাসে শত কোটি টাকা পাচার হচ্ছে। বিভিন্ন ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিসের অ্যাকাউন্টে গত এক বছরে প্রায় শত কোটি টাকারও বেশি লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

রবিবার (১৩ জুন) রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে এ তথ্য জানান সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের ডিআইজি জামিল আহমেদ। 

‘লাইকি’ ও ‘বিগো’র মাধ্যমে অর্থপাচারের অভিযোগে এক বিদেশি নাগরিকসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন- মোস্তফা সাইফ রেজা (২৬), মো. আরিফ হোসেন (২৭), এস এম নাজমুল হক (২৭), আসমা উল হুসনা সেজুতী (২৮) ও একজন বিদেশি নাগরিক।

জামিল আহমেদ জানান, বাংলাদেশি নাগরিক মোস্তফা সাইফ রেজা বিগো’র বাংলাদেশি অ্যাডমিন। আর গ্রেফতার বিদেশি নাগরিক বিগো লাইভ ও লাইকির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। মো. আরিফ হোসেন বাংলাদেশে বিভিন্ন মেয়েদের মাসিক বেতনে চাকরি দিয়ে বিগো লাইভের সঙ্গে যুক্ত করতেন। এসএম নাজমুল হক ভার্চুয়াল মুদ্রা ডায়মন্ড বিক্রির অন্যতম প্রধান বাংলাদেশি এজেন্ট এবং আসমা উল হুসনা সেজুতী বিগো লাইভের প্রধান অ্যাডমিন। অ্যাডমিনরা মাসে এক লাখ টাকা করে বেতন পেতেন।

সাইবার পুলিশের এই ডিআইজি বলেন, ‘ডায়মন্ড সাধারণ ব্যবহারকারীদের মধ্যে পৌঁছে দেওয়ার জন্য রয়েছে বিভিন্ন নামে বিভিন্ন এজেন্সি। এরকম একাধিক এজেন্ট বাংলাদেশে রয়েছে। এসব এজেন্সির প্রত্যেকের একাধিক পেমেন্ট গেটওয়ে রয়েছে। সাধারণত ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব এজেন্সির বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়। সাধারণ ব্যবহারকারীরা এজেন্সির পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে নির্দিষ্ট পরিমাণের অর্থ প্রদান করে ডায়মন্ড কেনেন।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশি লক্ষাধিক অ্যাপ ব্যবহারকারী ও প্রবাসী বাংলাদেশি অনলাইন ব্যাংকিং, হুন্ডি, ভার্চুয়াল মুদ্রা ও ব্যাংকের মাধ্যমে ডায়মন্ড কিনছেন। বাংলাদেশি এজেন্সিগুলো ডায়মন্ড কিনে আনে বিদেশি অ্যাডমিনদের কাছ থেকে। এসব এজেন্সি বিভিন্ন অবৈধ মাধ্যম ব্যবহার করে বিদেশে অর্থপাচার করে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে প্রতি মাসে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হচ্ছে।’

সাইবার পুলিশ জানায়, গ্রেফতার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে আরও অনেকের নাম এসেছে এবং তাদের বিভিন্ন ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিসের অ্যাকাউন্টে গত এক বছরে প্রায় শত কোটি টাকারও বেশি লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

গ্রেফতার নাজমুলের কাছ থেকে ২টি মোবাইল ফোন, ২টি ল্যাপটপ, ১টি প্রাইভেটকার, বিভিন্ন ব্যাংকের ৭টি ক্রেডিট কার্ড, বিভিন্ন ব্যাংকের ৬টি চেক বই, নগদ ৫০ হাজার ৪৬০ টাকা উদ্ধার করা হয়। আরিফ হোসেনের কাছ থেকে ২টি মোবাইল ফোন, ১টি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়। মোস্তফা সাইফ রেজা ও আসমা উল হুসনা সেজুতীর কাছ থেকে ৪টি মোবাইল ফোন ও ২টি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়।

শূন্য সহনশীলতার কথা বলে বিগো’র পক্ষ থেকে বক্তব্য

তবে শূন্য সহনশীলতার কথা বলে বিগো তাদের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দিয়েছে। সেখানে তারা উল্লখ করে, যেকোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানটি শূন্য সহনশীলতা (জিরো টলারেন্স) নীতি অনুসরণ করে। একইভাবে প্রতিষ্ঠানটি যেকোনো ব্যক্তির দ্বারা অপরাধের ক্ষেত্রেও জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে; এক্ষেত্রে, সে ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় কোনো এজেন্সি পার্টনার কিনা তা নির্বিশেষে এ নীতি অনুসরণ করা হয়।

যেকোনো অপরাধমূলক আচরণ মোকাবিলায় আমাদের এ খাতের শীর্ষ প্রযুক্তির সমন্বয়ে তৈরি কঠোর নীতিমালা রয়েছে। একইসাথে, এক্ষেত্রে, আমরা কোনো পক্ষপাত করি না, কিংবা কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা সমর্থন করি না—যার বা যাদের অপরাধমূলক কোনো কাজে বিগো’র নাম ব্যবহারের অসদিচ্ছা রয়েছে। আমরা এ ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করছি এবং যেভাবে সম্ভব বা প্রয়োজন এক্ষেত্রে আমরা সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাথে কাজ করবো। আমাদের ব্যবহারকারীদের জন্য একটি নিরাপদ, সুরক্ষিত এবং বিশ্বাসযোগ্য পরিবেশ তৈরিতে আমরা আগের মতোই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং ভবিষ্যতেও আমরা একইভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকবো।  

সিঙ্গাপুর ভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমাদের ডিজিটাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো বাংলাদেশের ব্যবহারকারীদের জন্য যোগাযোগের যে সুযোগ তৈরি করেছে, এজন্য আমরা সম্মানিত বোধ করছি। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২০টি’রও বেশি দেশের বিগো’র কার্যক্রম রয়েছে। আমাদের লক্ষ্য এ অঞ্চলে আমাদের ব্যবহারকারীদের জন্য ইতিবাচক সব সুযোগ তৈরি করা; এবং আমরা যে দেশেই কার্যক্রম পরিচালনা করি না কেনো, সেখানকার আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ে সকল আইন ও বিধি যথাযথভাবে মেনে চলি।  

আঞ্চলিক ও জাতীয় আইন এবং মূল্যবোধ সমুন্নত রাখতে আমরা আইনপ্রয়োগকারী সকল সংস্থা ও সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো, এবং একইসাথে নতুন প্রজন্মের ব্যবহারকারীদের জন্য ইতিবাচক সব সুযোগ তৈরিতে নিবিড়ভাবে কাজ করবো। 

এসি