ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৭ মে ২০২৪,   বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

দুর্যোগ সহিষ্ণু ৬ জাতের নতুন ধানের যাত্রা শুরু

খুলনা প্রতিনিধি 

প্রকাশিত : ০৬:১৮ পিএম, ১৮ জুলাই ২০২১ রবিবার

খুলনায় ফলন বেশি, গাথুনি ঘন, শীষ লম্বা ও দুর্যোগ সহিষ্ণু ৬ জাতের নতুন ধানের যাত্রা শুরু হয়েছে। আর এই নতুন ধানের উদ্ভাবক বটিয়াঘাটা উপজেলার গঙ্গারামপুর গ্রামের কৃষক আরুনী সরকার। বছর দশেক আগে ইমাসকুলেশন ও পলিনেশনের মাধ্যমে ব্রিডিং করে ৬টি জাত উদ্ভাবনে সফল হয়ে ২০২০ সালের আমন মৌসুমে এফ ১০ পর্যায় শেষ করলো এই উদ্ভাবক। এই নতুন ০৬ জাতের ধানের উদ্ভাবন বাংলাদেশের কৃষি তথা দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের কৃষিতে একটি নতুন মাত্রা যোগ করবে।

স্বপ্ন ও চেষ্টা; শেষ পর্যন্ত মানুষকে তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে সহায়তা করে। আরুণি সরকার তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। শেষ পর্যন্ত ৬ জাতের নতুন আমন ধানের যাত্রা শুরুই হলো। রবিবার দুপুরে (১৮ জুলাই ২০২১) খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার গঙ্গারামপুর ইউনিয়নের স্টার ইউনিট প্রাঙ্গনে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তার এই উদ্ভাবনীর ধানের বর্ণণা দেন।  

কৃষক আরুণি সরকার বলেন. ২০১০ সালে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা লোকজের প্রণোদনায় ব্রিডিং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দেশীয় প্রজাতির ১০টি জাতকে মাদার ও ১০টি জাতকে ফাদার করে ইমাসকুলেশন ও পলিনেশনের মাধ্যমে ব্রিডিং করে ৬টি জাত উদ্ভাবনে সফল হয়ে পর্যায়ক্রমে ২০১০ হতে ঋ-১ ঋ-২ ঋ-৩ ঋ-৪ ঋ-৫ ঋ-৬ ঋ-৭ ঋ-৮ ঋ-৯ ঋ-১০ পর্যায় গত ২০২০ সালে শেষ করেছেন। আরুনি ২০২০ সালে আমন মৌসুম শেষে ইতমধ্যে কিছু কিছু জাত কৃষকদের নিকট বিতরণ করেছে। জাতগুলোর মাদার ফাদার থেকে ফলন বেশি, গাথুনি ঘন, শীষ লম্বা ও দুর্যোগ সহিষ্ণু হয়েছে। মাদার ফাদার থেকে তাদের জীবনকাল কমেছে। সংবাদ সম্মেলনে ফাদার-মাদারসহ উদ্ভাবিত নতুন ধানগুলো ভিজুয়ালী উপস্থাপন করেন তিনি। 

স্থানীয় জটাই বালাম ও তেইশ বালাম ক্রসের ফলে উদ্ভাবিত নতুন ধানের নাম প্রস্তাবিত নাম আলো, সাহেবকচি ও কাঁচড়া ক্রসের ফলে উদ্ভাবিত নতুন ধানের নাম প্রস্তাবিত নাম লোকজ ধান, চাপশাইল ও কুমড়াগোড় ক্রসের ফলে উদ্ভাবিত নতুন ধানের নাম প্রস্তাবিত নাম আরুণি ধান, বেনাপোল ও ডাকশাইল ক্রসের ফলে উদ্ভাবিত নতুন ধানের নাম প্রস্তাবিত নাম গঙ্গা ধান, তেইশ বালাম ও জটাই বালাম ক্রসের ফলে উদ্ভাবিত নতুন ধানের নাম প্রস্তাবিত নাম মৈত্রী ধান এবং বজ্রমুড়ি ও কুমড়াগোড় ক্রসের ফলে উদ্ভাবিত নতুন ধানের নাম প্রস্তাবিত নাম লক্ষীভোগ ধান। 

এ ধানের চাষ করেছে ঐ গ্রামের দেবজ্যেতি মহলদার তিনি বলেন এই ধান চাষ কররে ফসল পাওয়া যায় প্রায় দ্বিগুণ। কোন সার বা কিটনাশক ব্যবহার করতে হয় না। ধানের গোজ মোটা এবং শক্ত। আরুণি সরকার এর এই ধানের আরো গবেষণা করতে পারলে ধানের উৎপাদন বাড়বে।

কৃষক আরুণি সরকার এর ভাই তরুণ কান্তি সরকার বলেন, প্রথমে আমি এইধান চাষ করতে রাজী হয়নি পরে দেখলাম আমার ভাই যে ধানের উদ্ভাবন করেছে তা চাষ করে বেশী ফলন পেয়েছি তাই আমি এই ধানের চাষ শুরু করি। এর আগে আমার ধানের ক্ষেতে কারেন্ট পোকা লেগেছিল। কিন্তু এই ধান চাষ কররে কারেন্ট পোকা লাগে না। হঠাৎ ধানের ক্ষেতে পানি জমলে অন্য ধানের গোছা পচে যায় কিন্তু এটার ক্ষেত্রে একটু সময় বেশি পাওয়া যায়। 

আরুনি সরকার বিশ্বাস করে তার উদ্ভাবনী এই ধানের যে নাম দেওয়া হয়েছে তা সরকার বিবেচনা করবে। ফলে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের কৃষিতে একটি নতুন মাত্রা যোগ করবে।

আরকে//