ঢাকা, সোমবার   ২০ মে ২০২৪,   জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড: ৪০ দোকান মালিক নিঃস্ব

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সংবাদদাতা

প্রকাশিত : ০৭:১৬ পিএম, ২৩ জুলাই ২০২১ শুক্রবার | আপডেট: ০৬:০৩ পিএম, ২৬ জুলাই ২০২১ সোমবার

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের তহাবাজারে স্মরণকালের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিঃস্ব হয়েছেন অনেক দোকান মালিক। এ অগ্নিকান্ডে প্রায় ৪০টি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) বিকেলে ওই মার্কেটের একটি কাপড়ের দোকান থেকে এ আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের ৬টি ইউনিট প্রায় আড়াই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। এরপর প্রশাসনের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তারা ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে দোকান মালিকদের সহায়তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বাস দেন।

এ ঘটনায় গঠিত ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটি রোববার পর্যন্ত আগুনের কারণ উদঘাটন করতে পারেনি। ঘটনার তিন দিনেও আগুনের কারণ, ক্ষতিগ্রস্ত দোকানের সংখ্যা ও ক্ষতির পরিমাণ নিয়ে সঠিক তথ্য দিতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। আড়াই ঘণ্টায় আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে কারও সারা জীবনের পুঁজি আর কারও জীবনধারণের একমাত্র অবলম্বন। হতাশ হয়ে পড়েছেন এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। আবার কীভাবে দাঁড় করানো যাবে জীবিকার একমাত্র উৎস। কীভাবে জুটবে পরিবারের সদস্যদের মুখে খাবার। এমন হাজারও প্রশ্ন ভিড় করছে মাথায়। অনেকে ব্যাংক ঋণ নিয়ে ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছিলেন। এখন ব্যাংক ঋণ কীভাবে শোধ করবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ক্ষতিগ্রস্তরা। রোববার তহাবাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের অনেকেরই বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া আছে। তবে পুরো মার্কেটে কী পরিমাণ ব্যাংক ঋণ আছে, তার কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি।

শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ছাইয়ের স্তূপের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন ব্যবসায়ীরা। তারা পুঁজি-রুজি হারানোর ব্যথায় কাতর। এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলার মানসিকতাও নেই তাদের। পুড়ে যাওয়া বেশির ভাগই কাপড়ের দোকান। আগুনে তাণ্ডবে ধ্বংস হয়ে গেছে দোকানগুলো। ব্রিটিশ আমলের তৈরি ইট, কাঠ ও টিনের তৈরি এ  দোকানগুলো পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। আর পোড়া টিনের স্তূপ এখনও পড়ে আছে। নতুন ভবন নির্মাণ ছাড়া সংস্কারেরও সুযোগ নেই। দুই একটি দোকানে কিছু পণ্য রক্ষা হয়েছে। আগুন পানিতে নষ্ট হওয়া ওইসব পণ্যগুলো পরিস্কার করতে দেখা গেছে তাদের। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা বলছেন- ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আমাদের কিছুই রক্ষা হয়নি। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি হয়। বাজারটির সামনের দোকানগুলো রক্ষা হলেও ভেতরে অনেকের মালামাল, পুঁজি সবই আগুনে পুড়ে গেছে। অনেক দোকানি দাবি করেছেন- মালপত্রের সঙ্গে দোকানের ক্যাশবাক্সে থাকা নগদ টাকাও পুড়ে গেছে। ফলে তারা এখন একেবারেই নিঃস্ব।

সোনালী গার্মেন্টসের মালিক বাবু বলেন, এতদিনে যা সঞ্চয় করেছি আর ব্যাংক ঋণের টাকায় কেনা পণ্য সবকিছু আগুনে পুড়ে শেষ। কোনো মালামাল রক্ষা হয়নি। আমার দোকানে থাকা প্রায় ৮০ লাখ টাকার মালামাল আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। দুই ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছিলাম। আমি এখন নিঃস্ব। আর ব্যবসা কীভাবে করব, সেই চিন্তায় পড়ে গেছি। তবে ব্যাংক থেকে ঋণ সুবিধা পেলে নিজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চান তিনি।

আরেক গার্মেন্টস ব্যবসায়ী লিটন বলেন, দীর্ঘদিন থেকে এখানে দোকান করছি। এ দোকানে প্রায় ১০ লাখ টাকার মালামাল ছিল। একটি সুতাও রক্ষা হয়নি। তিনি আরও বলেন, দোকান ঘিরে শুধু পরিবারই চলত না, অনেক স্বপ্নও ছিল এখানে। কিন্তু আগুনে সব স্বপ্ন পুড়ে গেছে।

ঈসমাইল হোসেন বলেন, আমার দোকানের নাম সালাম অ্যান্ড সন্স। সেখানে ৩৫ লাখ টাকার মালামাল ছিল। সামান্যতম জিনিসও সেখান থেকে বের করতে পারিনি। আগুন শুধু আমার ৩৫ লাখ টাকার মালামালই কেড়ে নেয়নি, কেড়ে নিয়েছে আমাদের স্বপ্ন।

দোকানটিও ক্ষতিগ্রস্ত, সেটি সংস্কারেরও সুযোগ নেই। তবে আশপাশে কোন দোকান পেলে ছোট পরিসরে অবারও ব্যবসা শুরু করতে চান তিনি। গার্মেন্টস ব্যবসায়ী মিলন বলেন, গার্মেন্টসের এই দোকান থেকে আমাদের জীবন-জীবিকা চলতো। দোকানে থাকা প্রায় ৮ লাখ টাকার মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এ ব্যবসা ছাড়া তো কিছু করতে পারবো না। তাই যে কোন ভাবে টাকার ব্যবস্থা করে তিনি সীমিত পরিসরে আবারও এ ব্যবসায় ফিরতে চান।

ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মো. ছাবের আলী প্রামানিক জানান, খবর পাওয়ার পর দ্রুত ঘটনাস্থলে যায় ফায়ার সার্ভিসের দল। আড়াই ঘণ্টার বেশি সময় চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। ক্ষতিগ্রস্ত দোকানের সংখ্যা, ক্ষতির পরিমাণ ও আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে এখনও জানা যায়নি। ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি তদন্ত করছেন। তদন্তের পরই বলা যাবে আগুনের কারণ, দোকানের সংখ্যা ও ক্ষতির পরিমাণ।

আরকে//