ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৫ ১৪৩১

কোয়ান্টাম ল্যাবের রক্ত সরবরাহ ছাড়াল ১৩ লক্ষাধিক ইউনিট

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৪৮ এএম, ৩০ জুলাই ২০২১ শুক্রবার

কোয়ান্টামের স্বেচ্ছা রক্তদান কর্মসূচিতে সঙ্গীত শিল্পী এসআই টুটুল

কোয়ান্টামের স্বেচ্ছা রক্তদান কর্মসূচিতে সঙ্গীত শিল্পী এসআই টুটুল

স্বেচ্ছা রক্তদানের মানবিক সংগঠন কোয়ান্টামের ল্যাবের সরবরাহ ১৩ লক্ষ ব্যাগ ছাড়িয়েছে। গত ৮ জুলাই চার লক্ষাধিক রক্তদাতার মাধ্যমে সেবার এই অঙ্ক অতিক্রম করে। ১৩ লক্ষাধিক মুমূর্ষু মানুষকে সেবা দিতে পেরে সকল স্বেচ্ছা রক্তদাতা, স্বেচ্ছাসবী এবং কর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে ল্যাব কর্তৃপক্ষ। সেই সাথে দেশের রক্তের চাহিদা মেটাতে নতুন রক্তদাতাদেরও আহ্বান জানায় স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানটি।

জানা যায়, চলতি মাসের ২৫ তারিখ পর্যন্ত ১৩ লাখ ৫ হাজার ১৮২ ইউনিট রক্ত ও রক্ত উপাদান দিয়ে মুমূর্ষু মানুষকে সেবা দিতে পেরেছে কোয়ান্টাম। কোয়ান্টামের রয়েছে চার লাখ ১৬ হাজার ৬০৮ জন স্বেচ্ছা রক্তদাতার ডোনার পুল। এর মধ্যে কমপক্ষে ৩ বার রক্তদান করেছেন লাইফ লং ডোনার ৪৭ হাজার ৯৩৫ জন, ১০ বারের রক্তদাতা সিলভার ডোনার ১০ হাজার ৩১৯ জন, ২৫ বারের দাতা গোল্ডেন ডোনার এক হাজার ৯২৬ জন এবং ৫০ বার রক্ত দিয়েছেন এমন প্লাটিনাম ডোনারের বর্তমান সংখ্যা ৪৬ জন। এছাড়াও অনিয়মিত রক্তদাতার সংখ্যা ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৩৮২ জন। 

ল্যাব কর্তৃপক্ষ জানায়, রোগভেদে একেক রোগীর জন্যে রক্তের একেক উপাদান লাগে। যেমন- রক্তরস বা প্লাজমা, রক্তকণা বা প্যাকড সেল, লোহিত রক্তকণা ইত্যাদি। কোয়ান্টাম ল্যাবে আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে দেয়া এক ব্যাগ রক্তকে এমন কয়েকটি উপাদানে আলাদা করার ব্যবস্থা রয়েছে। অর্থাৎ এক ব্যাগ রক্ত একইসাথে কয়েকজনের প্রয়োজনে ব্যবহৃত হচ্ছে।

ল্যাব কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, করোনার এই দুর্যোগ সময়েও কোয়ান্টাম ল্যাবের কর্মীরা তাদের এ সেবা কার্যক্রম চালু রেখেছেন। প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়ে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা মানুষকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এর মধ্যে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে রক্তের চাহিদা আরও বেড়ে গেছে। গত বছর ২০২০ সালে কোয়ান্টাম ল্যাবে রক্ত ও রক্ত উপাদানের চাহিদা ছিল ৯৭ হাজার ৬১৪ ইউনিট। এর বিপরীতে ল্যাব সরবরাহ করতে পেরেছে ৮৫ হাজার ৩৫৭ ইউনিট। দেশে রক্তের চাহিদা পুরোটা মেটাতে নতুন স্বেচ্ছা রক্তদাতার অংশগ্রহণ আরও বাড়াতে হবে। রক্তের যেহেতু কোনও বিকল্প নেই, তাই স্বেচ্ছা রক্তদানের মাধ্যমেই থ্যালাসেমিয়া রোগী, সন্তানসম্ভবা নারী কিংবা অপারেশনের রোগীকে প্রয়োজনের মুহূর্তে রক্ত সরবরাহ করা সম্ভব।

২০০০ সালে শুরু করে দুই দশকের নিরলস প্রচেষ্টায় চলছে কোয়ান্টাম ল্যাবের এই রক্তদান কার্যক্রম। মুমূর্ষু মানুষকে রক্তদান করলে মেলে মানসিক তৃপ্তি। ধর্মীয় দিক থেকেও এটি অত্যন্ত পূণ্যময় কাজ। রক্তদান স্বাস্থ্যের জন্যেও উপকারী। রক্তদান করার সাথে সাথে আমাদের শরীরের মধ্যে অবস্থিত ‘ব্যোন ম্যারো’ নতুন কণিকা তৈরির জন্যে উদ্দীপ্ত হয়। দান করার দুই সপ্তাহের মধ্যেই নতুন রক্তকণিকা জন্ম হয়ে এ ঘাটতি পূরণ করে আর বছরে তিন বার রক্ত দান রক্তদাতার লোহিত কণিকাগুলোর প্রাণবন্ততা বৃদ্ধি করে।

এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় ১৩ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারান। আহত বা পঙ্গুত্ব বরণ করেন ২ থেকে ৩ কোটি মানুষ। আহতদের মধ্যে অনেকেই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা যান। তাই একজন মানুষকে বাঁচাতে রক্তের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। অন্যদিকে সারা বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৩ লাখ শিশু থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্ম গ্রহণ করে। বাংলাদেশে প্রায় ৭ হাজার শিশু এ রোগ নিয়ে পৃথিবীতে আসে। এসব শিশুর নিয়মিত রক্ত সঞ্চালনের প্রয়োজন হয়। এখন পর্যন্ত রক্ত উৎপাদন করা সম্ভব হয়নি। তাই রক্ত পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো রক্ত দাতাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা।

স্বেচ্ছায় রক্ত দিচ্ছেন আরও দুইজন

রক্ত দিতে পারবেন করোনা থেকে সুস্থ হওয়া ব্যক্তিও। করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হয়ে উঠলে তখন তার রক্তের প্লাজমাতে প্রোটিন অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, যা নতুন করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করতে পারে। যারা করোনা থেকে পুরোপুরি সুস্থ হয়েছেন বা দুই সপ্তাহ পরও করোনার কোনও উপসর্গ নেই, তাদেরকে একজন রোগীর জীবন বাঁচাতে রক্তের তরল অংশ বা প্লাজমা দানে উৎসাহিত করা হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, একজন সুস্থ ব্যক্তি বছরে তিনবার রক্ত দিতে পারেন। উন্নত বিশ্বে প্রতি হাজারে স্বেচ্ছায় রক্ত দেয় ৪৫০ জন বা শতকরা ৪৫ ভাগ মানুষ। আর বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রতি হাজারে মাত্র তিনজন রক্ত দেয়। রক্তদাতার সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। দেশের ঘাটতি পূরণ ও অনিরাপদ রক্তের ব্যবহার বন্ধ করতে বর্তমানের চেয়ে বছরে মাত্র পাঁচ লাখ ব্যাগ অতিরিক্ত সংগ্রহ করতে হবে।

অসহায় একজন মানুষকে চাইলে যে কেউ সহজে জীবন দান করতে পারে। এক ব্যাগ রক্তে বাঁচতে পারে একটি প্রাণ। কাকে রক্ত দিচ্ছেন সেটি না জানলে আরও ভালো। কারণ পরিচিতজনদের রক্ত দিতে গেলে অনেক সময় মানসিক সীমাবদ্ধতা চলে আসে। আর দান তো হবে নিঃস্বার্থভাবে। এ দানে বাঁচবে অন্যের জীবন।

এনএস//