ঢাকা, শুক্রবার   ০৩ মে ২০২৪,   বৈশাখ ১৯ ১৪৩১

দম : জীবনের মূল ছন্দ

একুশে টেলিভিশন  

প্রকাশিত : ০৫:৪৩ পিএম, ৩০ জুলাই ২০২১ শুক্রবার

দম হচ্ছে জীবনের মূল ছন্দ। খাবার ছাড়া আপনি বেশ কিছুদিন বাঁচতে পারবেন, পানি ছাড়াও কয়েকদিন বাঁচা সম্ভব। কিন্তু দম ছাড়া অর্থাৎ অক্সিজেন ছাড়া আপনি বড়জোর কয়েক মিনিট বাঁচতে পারেন।

অক্সিজেন আমাদের দেহের বায়ো-ইলেক্ট্র্রিক্যাল ব্যালান্স নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। আর খাবার দেহের বায়ো-কেমিক্যাল ব্যালেন্স নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

সাধারণত আমরা দুভাবে দম নিয়ে থাকি :

অ্যাবডোমিনাল ব্রিদিং (ওপর পেটে দম) : স্বাভাবিক অবস্থায় আমাদের দম নেয়ার সহজাত পদ্ধতিটি হলো এই অ্যাবডোমিনাল ব্রিদিং। কিন্তু এভাবে দম নিলে ফুসফুস পূর্ণমাত্রায় প্রসারিত হতে পারে না। ফুসফুস বঞ্চিত হয় পর্যাপ্ত অক্সিজেন থেকে। যার ফলে আমরা অধিকাংশ মানুষই পূর্ণ কর্মশক্তি ও প্রাণচাঞ্চল্য নিয়ে কাজ করতে পারি না।
চেস্ট ব্রিদিং (বুক ফুলিয়ে দম) : এভাবে দম নিলে ফুসফুস পূর্ণমাত্রায় প্রসারিত হতে পারে। প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেন ফুসফুসে প্রবেশ করে। ফুসফুস কাজ করতে পারে তার পুরো কর্মক্ষমতা নিয়ে। ফলে ক্লান্তি দূর হয় নিমেষেই এবং শরীর-মন সারাদিন প্রফুল্ল থাকে। এটাই দম নেয়ার সবচেয়ে সঠিক ও কার্যকরী পদ্ধতি।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, শ্বসনতন্ত্রের অনেক অসুখের কারণ হলো সঠিকভাবে দম নিতে না পারা। দুঃখজনক হলেও সত্যি, আমরা অধিকাংশ মানুষই এ ব্যাপারে উদাসীন। সঠিকভাবে দম নেয়া তখনই সম্ভব হবে—যখন আপনি নাক দিয়ে দম নেবেন, আপনার বুক ফুলবে এবং ফুসফুস প্রসারিত হবে পূর্ণমাত্রায়। এভাবে দম নিলে সারাদিন আপনি থাকবেন কর্মোদ্যমী ও প্রাণবন্ত। তাই যখনই পারেন, সচেতনভাবে বুক ফুলিয়ে দম নিন।

দমের মধ্য দিয়ে শরীরে শুধু অক্সিজেনই প্রবেশ করে না, এক ধরনের প্রাণশক্তিও প্রবেশ করে। সাধকেরা এটিকে বলতেন ‘প্রাণা’। তাই দমচর্চার এই পদ্ধতিকে প্রাচীন যোগব্যায়ামের ভাষায় সাধকেরা অভিহিত করেছেন ‘প্রাণায়াম’ নামে। প্রাণশক্তি বৃদ্ধি পায় ও দেহকে জরা-ব্যাধি থেকে মুক্ত রাখে বলেই এর নাম প্রাণায়াম।

প্রাণায়াম আপনার দেহ ও মনের মধ্যে ব্রিজ বা সেতু হিসেবে কাজ করে। স্ট্রেসের কারণে যখন সিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম উদ্দীপ্ত হয়, দেহ-মনে চলতে থাকে ফাইট অর ফ্লাইট রেসপন্স। তখন তৈরি হয় অস্থিরতা-অশান্তি এবং করোনারি ধমনীতে অযাচিত সংকোচন। আর এ অবস্থায় নিয়মিত প্রাণায়াম বা দমচর্চা আপনার দেহ-মনকে টেনশনমুক্ত করে। ভেতরে সৃষ্টি হয় অনাবিল প্রশান্তি। সিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেমের উদ্দীপনা কমে আসে। ফলে করোনারি ধমনীতে যে ক্ষতিকর সংকোচন সৃষ্টি হয়েছিল সেটি দূর হয়।

যোগসাধনায় বহু ধরনের প্রাণায়াম রয়েছে। এর মধ্যে হৃৎপিন্ডের  সুস্থতাসহ সার্বিক সুস্থতার জন্যে উপকারী তিনটি প্রাণায়াম হচ্ছে সহজ উজ্জীবন, নাসায়ন ও ভ্রমণ প্রাণায়াম। দিনের যে-কোনো সময় যে-কোনো পরিবেশে আপনি খুব সহজেই এ তিনটি প্রাণায়াম অনুশীলন করতে পারেন। মুহূর্তেই হয়ে উঠতে পারেন টেনশনমুক্ত ও প্রাণশক্তিতে ভরপুর। 

লেখাটি ডা. মনিরুজ্জামান ও ডা. আতাউর রহমান এর লেখা এনজিওপ্লাস্টি ও বাইপাস সার্জারি ছাড়াই ‘হৃদরোগ নিরাময় ও প্রতিরোধ’ শীর্ষক বই থেকে নেয়া। 
 
আরকে//