ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

একাত্তরের সায়মন ড্রিং

ড. এমএ মোমেন

প্রকাশিত : ০৯:০০ এএম, ১ আগস্ট ২০২১ রবিবার

একাত্তরে তার বয়স ছিল ২৬ বছর। অগ্নিঝরা ৬ মার্চ ভিয়েতনাম যুদ্ধের রণাঙ্গন সংবাদদাতা সায়মন ড্রিং সায়গন থেকে ঢাকা এসে পৌঁছলেন। পরদিনই রেসকোর্স মঞ্চের খুবই কাছে থেকে শুনলেন: এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। দ্বিতীয় দিনেই বাংলা ভাষা বুঝতে পারা সম্ভব নয়। কিন্তু জনতার সাড়া তাকে বুঝিয়ে দিল জনতা স্বাধীনতা চায় এবং এ আহ্বান স্বাধীনতারই। বিকালে যখন শুনলেন ইয়াহিয়া খান ঢাকা ছেড়ে চলে গেছেন একটা কিছু যে ঘটবে সে অনুমান তিনিও করলেন। কার্যত রাতের বেলায়ই টেলিগ্রাফের সায়মন ড্রিং থেকে শুরু করে নিউইয়র্ক টাইমসের সিডনি শনবার্গ পর্যন্ত প্রায় ৫০ জন বিদেশী সাংবাদিকের সবাই বন্দি। অপারেশন সার্চলাইট নামের ভয়াবহ অপারেশন ও গণহত্যার দৃশ্য থেকে সাংবাদিকদের দূরে রাখতেই ধরে ধরে সবাইকে গাড়িতে উঠিয়ে ডিপোর্ট করা হলো। সায়মন ড্রিং মেজর সিদ্দিক সালিকের সঙ্গে কথা কাটাকাটি করলেন: না গেলে কী হবে?

তিনি সেনাজাল থেকে ছিটকে বেরিয়ে গিয়ে রাত কাটালেন ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের ছাদে এয়ারকন্ডিশনিং প্লান্টের আড়ালে। ২৭ মার্চ যখন নিজে আবির্ভূত হলেন রিসেপশনে শুনলেন আরো একজন সেনাজাল থেকে বেরোতে পেরেছেন—ফরাসি ফটোগ্রাফার মিশেল লরেন্ট, তার বয়স আরো কম ২৫ বছর। ২৭ মার্চ কারফিউ শিথিল হলে দুজনে বেরিয়ে পড়লেন, প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ছবি তুললেন, গণহত্যার নোট নিলেন—এ দুজনই বিদেশী সাংবাদিক প্রত্যক্ষদর্শী। কাজ সেরে দ্রুত তারা ঢাকা ছাড়লেন, করাচিতে আতঙ্কে ছিলেন, ব্যাংককের ফ্লাইট ধরলেন। ৩০ মার্চ ১৯৭১ ডেইলি টেলিগ্রাফ ও ওয়াশিংটন পোস্ট প্রত্যক্ষদর্শী সায়মন ড্রিংয়ের বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করল।

এ প্রতিবেদনে একই সঙ্গে সিডনি শনবার্গ ও অ্যান্থনি ম্যাসকারেনহাসের প্রতিবেদন পৃথিবীকে জানিয়ে দিল এ হত্যাকাণ্ড মাইলাইকে ছাড়িয়ে গেছে। ১৬ জুলাই ২০২১ সায়মন ড্রিং প্রয়াত হলেন, ফটোগ্রাফার মিশেল লরেন্ট ১৯৭৫ সালেই ২৯ বছর বয়সে ভিয়েতনাম রণাঙ্গনে নিহত হন।

৫০ বছর পর

২৫ মার্চ ১৯৭১ বৃহস্পতিবার রাত

[পঁচিশ মার্চের ভয়াল রাতের ৫০ বছর পূর্তিতে সায়মন ড্রিংয়ের স্মৃতিচারণমূলক লেখাটি ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারসহ কয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। প্রয়াত এ খ্যাতিমান সাংবাদিককে শ্রদ্ধা জানাতে লেখাটি ভাষান্তরিত হলো]

সত্যিকারভাবে ও গভীরভাবে অনুভব করার মতো এবং স্পষ্টভাবে স্মরণ রাখার মতো মুহূর্ত মানুষের জীবনে তেমন বেশি আসে না। ২৫ মার্চ ১৯৭১ ঢাকার বৃহস্পতিবার রাত এমনই একসময় আমার সাংবাদিকতা জীবনে একই সঙ্গে ভয়ংকর এবং শরীরে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুত্স্পৃষ্ট করার মতো।

এখনো পঞ্চাশ বছর পর সেই ভয়ংকর রাতের শব্দ ও চিত্রকল্প এবং তার পরের দিনগুলোর ছবি আমার কাছে ঠিক আগেরই মতো।

হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ৫০ জন অন্তরীণ বিদেশী সাংবাদিকের আমিও একজন; ২৫ মার্চ  সন্ধ্যা থেকে ঢাকা শহরে কারফিউ জারি, তারপর অনিবার্য যা ঘটার তাই ঘটল।

আমরা শুনলাম পড়ন্ত অপরাহ্নে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান কোনোরকম সংকেত না দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানে ফিরে গেছেন। পূর্ব পাকিস্তান সংকটের সমাধান খুঁজে পেতে পাকিস্তানের দুই অংশের রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে যে আলোচনা চলছিল তা অকস্মাৎ বন্ধ হয়ে গেছে।

হোটেল থেকে যারাই বেরোবার চেষ্টা করছে সৈন্যরা বন্দুক উঁচিয়ে তাদের প্রতিহত করছে আর সন্ধ্যার অন্ধকার নেমে আসতেই ধীরে ধীরে রাস্তাঘাট জনশূন্য হয়ে আসছে। ছোট বাচ্চারা টায়ার, গাছের গুঁড়ি, কংক্রিট আর পুরনো আসবাব রাস্তায় ফেলে কোনোরকম ব্যারিকেড তৈরির চেষ্টা করছে।

কিন্তু ১১টা বাজার খানিক আগে প্রথম আমার চোখে পড়ে পাকিস্তানি ট্যাংকের বহর, ট্রাকভর্তি সৈন্য শহরের দিকে ঢুকছে, তাদের উদ্দেশ্য হাসিলে লাগাতার উদ্যম নিয়ে ব্যারিকেড রাস্তার একপাশে সরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। রাত ১২টার সামান্য পরেই আমি হোটেলের ছাদের ওপর থেকে দেখতে পেলাম বন্দুকের গুলির অগ্নিচ্ছটা, কামানের গোলার শব্দ আর মেশিনগানের ক্রমাগত গুলি মর্মর ভেসে এল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিক থেকে।

খুব ভোরে আকাশ আগুনের শিখায় আলোকিত, আগুন শহরের চারদিকে সব পুড়ছে। কিন্তু এর চেয়েও খারাপটা তখনো আসার বাকি।

পরের কয়েকটি দিন আমি সামরিক জাল থেকে পালিয়ে থেকেছি—যে জাল ছুড়ে দেয়া হয়েছে বিদেশী সাংবাদিকদের ওপর। ডরমিটরিতে ও বাইরে ক্যাম্পাসের সীমানায় আমি গুলিতে মৃত ছাত্রদের মরদেহ দেখতে পাই, বুলেটবিদ্ধ রক্তাক্ত রিকশাওলা রাস্তার পাশে পড়ে আছে; যখন রাস্তার দুদিক বন্ধ করে বাড়িঘরে আগুন দিয়েছে, পুরো পরিবার আগুনে পুড়ে প্রাণ হারিয়েছে। পুরান ঢাকার বাজার ভস্মীভূত হয়ে মাটিতে মিশে গেছে। আমার আরো দেখার আছে, আরো ভয়ংকর যা ২৫ ও ২৬ মার্চ ঠাণ্ডা মাথায় বেসামরিক জনগণ হত্যার সাক্ষ্য দিয়ে সাহায্য করেছে। সে কারণেই পাকিস্তান চায়নি সাংবাদিকরা দেখুক এবং পৃথিবী তা জানুক। এটাকেই তারা বলেছে অপারেশন সার্চলাইট—এটা তাদের হত্যাযজ্ঞের কোড নাম, যার সাহায্যে তারা বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলন নিশ্চুপ করাবে, একাবারে গুঁড়িয়ে দেবে।

২৫ মার্চের রাত পেরোবার পর আমার যে ক্রোধ এ কথা স্মরণ করছি: রাজনীতিবিদ, আইনজীবী ও বুদ্ধিজীবী যারা আমাকে পরিস্থিতি বুঝতে সাহায্য করেছে, গত ক’ সপ্তাহের টালমাটাল রাজনীতি নিয়ে প্রতিবেদন লিখতে সাহায্য করেছেন, কোনো সন্দেহ নেই এখন তারাই বিপদের মুখে পড়বেন। আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কী ঘটল—৭ মার্চ আমি তার ঐতিহাসিক ভাষণ শুনেছি, যিনি বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু করার আহ্বান জানিয়েছেন। মাত্র ১৮ দিন পর এ কী ঘটল।

ঠিক রাত ১২টার পর বঙ্গবন্ধু তার এক সহযোগীকে বললেন, আমি যদি পালিয়ে যাই, আমার খোঁজে তারা ঢাকা শহর পুড়িয়ে দেবে। আর রাত ১টায় তিনি তার শেষ ফোনকলে জানালেন, ‘আমি যেকোনো মুহূর্তে গ্রেফতার হতে পারি।’ তিনি জানালেন, তার বডিগার্ড আর তিনজন ভৃত্য ছাড়া আর সবাইকে নিরাপদ জায়গায় পাঠিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু তার নিজের কী হলো?

আমার মনে পড়ছে ২৬ মার্চ সকালের দিকে আমি যখন পশ্চিম পাকিস্তানের জুলফিকার আলী ভুট্টোকে দেখি হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে তার স্যুটে, গার্ড পরিবেষ্টিত অবস্থায় সোফায় বসে একটার পর একটা সিগারেট ফুঁকছেন আমার ভীষণ রাগ হয়। যেন নিজের জীবনশঙ্কায় তার মুখ ছাই বর্ণ ধারণ করেছে—কিংবা তিনি বুঝতে পারছেন না, তথাকথিত অপারেশন সার্চলাইটের কী পরিণতি হবে সেই আশঙ্কায়।

এখন আমরা জানি সামরিক অপারেশনের মাধ্যমে কী অর্জন করার লক্ষ্য ঠিক হয়েছিল, আর ভুট্টো নিজে ছিলেন সেই পরিকল্পনার অংশ। অবশ্য তিনি এ নিয়ে আমার সঙ্গে কথা বলতেন না, যদিও পাকিস্তানে ফিরে গিয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, ‘আল্লাহকে ধন্যবাদ, পাকিস্তান রক্ষা পেয়েছে’ বলে খবর ছাপা হয়েছে।

আমার সেই ক্রোধের কথা মনে আছে, যখন মেজর সিদ্দিক মালিক (পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণসংযোগ কর্মকর্তা এবং সেনাবাহিনী গোয়েন্দা ইউনিটের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা) ২৬ তারিখ বিকালে হোটেলে এসে বললেন সে রাতেই সব বিদেশী সাংবাদিককে দেশ ছেড়ে যেতে হবে—স্পষ্টত কাল সকালে যখন কারফিউ প্রত্যাহার করা হবে, তখন সাংবাদিকরা যা দেখবে এবং যা নিয়ে রিপোর্ট করবে তা ঠেকাতেই এ আয়োজন।

তিনি বললেন, এটা আদেশ নয় আপনাদের নিজেদের নিরাপত্তার জন্যই। আমি যখন তাকে চ্যালেঞ্জ করে বললাম তাহলে আমি থেকে যেতে পারি, তিনি দানবীয় স্মিতহাস্যে বললেন, অবশ্যই, যদি আপনি তা চান, কিন্তু তখন আপনাকে নিয়ে পার্টি হবে।

কাজেই আমি রয়ে গেলাম। কী ঘটেছিল তার সত্যটা জানানো দরকার। সে রাতে হোটেলের ছাদে প্রধান এয়ারকন্ডিশনিং ইউনিটের পেছনে লুকিয়েছি। ২৬ তারিখ সন্ধ্যার পর পর্যন্ত আমি সেখানেই ছিলাম। ছাদ থেকে নিচে দেখতে পেয়েছি বিদেশী সাংবাদিকদের ধরে এনে ট্রাকে তোলা হয়েছে এবং তারা এয়ারপোর্টের দিকে চলে গেছে।

পরে আমি তরুণ ফরাসি ফটোগ্রাফার মিশেল লরেন্টকে পাই, মিশেল অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের প্রতিনিধি। তিনি থেকে যেতে চান বলে হোটেলের আলমারিতে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছেন।

সামরিক জাল এড়িয়ে আমাদের পালানো সম্ভবপর হয়েছে হোটেলে তরুণ সাহসী ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বাঙালি কর্মচারীদের কারণে (রিসেপশনের স্টাফ ও রান্নাঘরের পাচক) যারা নির্দ্বিধায় নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেনাবাহিনীর হাত থেকে তিনদিন আমাদের নিরাপদে লুকিয়ে রেখেছে।

তারাই আমাদের পরিকল্পনা করতে সাহায্য করেছেন কেমন করে শহরে ঢুকে যা কিছু ঘটেছে তা যেন প্রত্যক্ষ করে আসতে পারি।

২৭ মার্চ একটু বেলা করে কুর্তা-পাজামা পরে রুটির পুরনো ভ্যানের পেছনে জায়গা করে নিয়ে শহরের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে বেরিয়ে যাই।

সত্যটা লুকোনো অসম্ভব ছিল, যারা বেঁচে গেছেন তাদের পক্ষে বলাটাও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইকবাল হলের এবং পাশে ৩০টির মতো মরদেহ দেখতে পাই, আর্ট কলেজের ছাত্র নিজের ইজেলের ওপর পড়ে আছে, খালে ভাসছে লাশ, জগন্নাথ হলে দ্রুত খনন করা কবরে অন্যদের মরদেহ ছুড়ে ফেলে তার ওপর ট্যাংক চালিয়ে মাটি সমান করা হয়েছে। নিজেদের কোয়ার্টারে সাতজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে হত্যা করেছে, বাইরের একটি বাড়িতে ১২ জনের একটি পরিবারের সবার প্রাণহরণ করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তত ২০০ ছাত্রকে তারা হত্যা করেছে, আমাদের বলা হয়েছে বাড়ি বাড়ি গিয়ে অন্য শিক্ষককেও হত্যা করেছে।

রাজারবাগ পুলিশ লাইনে সেনাবাহিনী ঘরে ঘরে অগ্নিবোমা ছুড়েছে, তার সমর্থন জুুগিয়েছে ট্যাংক বাহিনী। সেখানে ১ হাজার ১০০ পুলিশের অনেকেই নিহত হয়েছে। প্রতিবেশীরা আমাকে বলেছে একটি ট্যাংক, একটি সাঁজোয়া গাড়ি এবং ট্রাকভর্তি সৈন্য ১টা ১০ মিনিটে বঙ্গবন্ধুর বাসার সামনে হাজির হয়। একজন অফিসার ইংরেজিতে চেঁচিয়ে বলেন, ‘শেখ আপনি নেমে আসুন।’ বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমি তৈরি, গুলি করার প্রয়োজন নেই।’ তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। অফিসারের সঙ্গে বেয়াদবি করার অপরাধে তার বডিগার্ডকে বেদম পেটানো হয়। বাড়িটি লণ্ডভণ্ড করে ফেলা হয়। গেটে তালা মারা হয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সবুজ, লাল ও হলুদ পতাকা গুলি করে নামানো হয়। সৈন্যদের সামান্যই জানার কথা যে শিগগিরই আবার এ পতাকা পড়বে।

শেষ পর্যন্ত আমরা যখন ঢাকা ছাড়তে সমর্থ হই, আমার লেখা ও মিশেলের তোলা ছবি প্রথমবারের মতো পৃথিবীর সামনে অনেক কিছু তুলে ধরে—সে রাতে কী ঘটেছিল সেই সত্য।

সেখানে বিস্তারিতই বলা হয়েছে, কিন্তু আমিও একটি ভুল করেছি। আমার কাহিনীতে আমি বলেছি, বহু জীবন দিতে হয়েছে, কেবল ঢাকাতে সাত হাজার, হয়তো তারা শিগগির বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটিয়ে দেবে।

একজন পাঞ্জাবি অফিসার আস্থার সঙ্গে আমাকে বলেছিলেন, ‘আমরা আল্লাহ ও অখণ্ড পাকিস্তানের নামে লড়াই করছি।’ তিনিও ভুল বলেছেন, এটাই যথেষ্ট নয়। সংগ্রাম শেষ হয়ে যাবে ভেবে আমিও ভুল করেছি। আসলে হোটেলে কর্মচারীরা মিশেল ও আমাকে যেভাবে সাহায্য করেছে, তাদের সাহস ও প্রত্যয়ের বাইরে অন্য কিছু আমার দেখার প্রয়োজন ছিল না। তখন আমার বোঝা উচিত ছিল বৃহস্পতিবার রাতে যাই ঘটুক, তার পরও বাঙালিদের স্বাধীনতায় বিশ্বাস, তাদের শক্তি ও মনোবল অত্যন্ত উজ্জীবিত। তা-ই শেষ পর্যন্ত মাত্র নয় মাস পরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিজয় নিশ্চিত করল, স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটাল।

তার স্মৃতিচারণাতে নেই, কিন্তু ৩০ মার্চ ১৯৭১ ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় প্রকাশিত বর্ধিত প্রতিবেদনে ছিল এমন একটি অনুচ্ছেদ উদ্ধৃত করছি :

সেনাবাহিনীর শেষ টার্গেটগুলোর একটি—বাংলা দৈনিক খবরের কাগজ ‘ইত্তেফাক’, যখন অপারেশন শুরু হয়ে যায় চার শতাধিক মানুষ এ অফিসে আশ্রয় নিয়েছিল, শুক্রবার (২৬ মার্চ) ভোর ৪টায় বাইরের রাস্তায় চারটি ট্যাংক দেখা গেল। সাড়ে ৪টা বাজতেই ভবনটি, প্রত্যক্ষদর্শীর মতে অগ্নিকুণ্ডে পরিণত হলো। শনিবার সকালে ভবনের পেছনের কক্ষগুলোতে পড়ে রইল পোড়া মরদেহের স্তূপ।
লেখক : সাবেক সরকারি কর্মকর্তা
এসএ/