ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

বাড়ছে ডেঙ্গুজ্বর, বাড়ছে রক্তের চাহিদা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:১০ পিএম, ৪ আগস্ট ২০২১ বুধবার

করোনা মহামারির এ সময়ে ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়ায় প্রতিদিনই আক্রান্তের হার লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। শুধু বড়রা নয়, শিশুরাও আক্রান্ত হচ্ছেন ডেঙ্গুতে। বর্ষার এ সময়ে সামনে ডেঙ্গু আরও বাড়ার অশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সরকার ও ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে মানুষ সচেতন না হলে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা যাবে না। এদিকে ডেঙ্গু রোগীর জীবন বাঁচাতে রক্তের প্লাটিলেটের অভাব দেখা দিয়েছে।

গত কয়েক দিন ধরেই ডেঙ্গু সংক্রমণের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে অনেক বেশি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছর শুধু জুলাই মাসেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ১৯২০ জন, যা ২০২০ সালে সারা বছরজুড়ে আক্রান্ত সংখ্যার চেয়েও বেশি। এক হিসেবে দেখা যায় গত ২২ জুলাই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৮৫ জন। ১০ দিনের ব্যবধানে ২ আগস্ট নতুন রোগী ভর্তি হন প্রায় ৩০০ জন। সরকারি হিসেবে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু সংক্রমণ হয়েছিল ২০১৯ সালে। সেবছর এক লাখেরও বেশি মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। চলতি বছর জুলাই মাস পর্যন্ত সাত মাসে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩ হাজার ৪৪৬ জন। ডেঙ্গু সন্দেহে মানা গেছেন ৪ জন।

চার ব্যাগ পুরো রক্ত থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় উপাদানগুলো আলাদা করে তৈরি হয় এক ইউনিট প্লাটিলেট। এতে সময় লাগে প্রায় চার ঘণ্টা। এরপর তা দেয়া হয় একজন ডেঙ্গু রোগীকে। অর্থাৎ একজন ডেঙ্গু রোগীর মাত্র এক ইউনিট প্লাটিলেটের চাহিদা মেটাতে কমপক্ষে চার জন রক্তদাতা প্রয়োজন। রোগীর শারীরিক অবস্থাভেদে তিন, চার বা তারও অধিক ইউনিট প্লাটিলেট প্রয়োজন হতে পারে। সেক্ষেত্রে একজন ডেঙ্গু রোগীর তিন ইউনিট প্লাটিলেটের চাহিদা মেটাতে ১২ জন রক্তদাতা প্রয়োজন। সাম্প্রতিক সময়ে তাই স্বেচ্ছা রক্তদাতার দরকার খুব বেশি।  

ডেঙ্গু রোগী বৃদ্ধি ও তাদের প্লাটিলেট চাহিদার এমন চিত্রই দেখা গেল মিডফোর্ট হাসপাতাল, বঙ্গন্ধু শেখ মুজিবর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্লাড ব্যাংক এবং স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান কোয়ান্টামের ল্যাবে। প্লাটিলেটের জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করছেন রোগীর আপনজনেরা। ডেঙ্গু রোগী বৃদ্ধি এবং লকডাউনের প্রভাবের এই সময়ে প্লাটিলেট তৈরি ও সরবরাহ পূরণে স্বেচ্ছা রক্তদাতা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন দায়িত্বশীলরা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আসাদুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গুর কারণে রক্তের প্লাটিলেটের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে। তিনি বলেন, এমনিতে করোনার কারণে সেচ্ছা রক্তদাতারা আসতে পারছেন না। ডেঙ্গুর কারণে চাহিদা বাড়ায় সত্যিকার অর্থে হাসপতাতালে রক্ত সংকট বেড়েছে।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক শফি আহমেদ বলেন, প্রতিদিনই সাত-আটজন শিশু ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হচ্ছে। তার হাসপাতালে ভর্তি থাকা ২৫ রোগীর মধ্যে দুজন আইসিইউতে রয়েছেন। ডেঙ্গু ফিভার ও ডেঙ্গু শক সিনড্রোম নিয়ে রোগীরা আসছেন। এগুলোয় অবস্থাটা বেশি খারাপ হয়ে যায়। মিডফোর্ট হাসপাতলের পরিচালক কাজী মো. রশিদ উন নবী বলেন, জ্বর নিয়ে আসা ডেঙ্গু রোগীর রক্তে প্লাটিলেট কম থাকে। তাই চিকিৎসার পাশাপাশি রোগীকে প্লাটিলেট রক্ত কণিকা দিতে হয়। যা এখন চাহিদা অনুযায়ি পাওয়া যাচ্ছে না।

কোয়ান্টাম ল্যাব কর্তৃপক্ষ জানায়, চলতি বছর জুন-জুলাই দুই মাসে কোয়ান্টাম ল্যাবে প্লাটিলেটের চাহিদা ছিল ৫৩৭০ ব্যাগ। এই সময়ে আমরা সরবরাহ করতে পেরেছি ৪১০০ ব্যাগ। গত ১৫ দিনে প্লাটিলেটের গড় চাহিদা ছিল ১৫৬ ব্যাগ। আমরা গড় সরবরাহ করতে পেরেছি ১১৯ ব্যাগ। ল্যাবে রোগীর স্বজন প্রতিদিন গড়ে আসছেন ৫০ জন। আমরা প্লাটিলেট চাহিদার ৭৬ শতাংশ সরবারাহ করতে পারছি। পাশাপাশি অন্যান্য রোগীর চাহিদা তো রয়েছেই। লকডাউন, করোনা আতঙ্ক সব মিলিয়ে এই সময়ে তুলনামূলক স্বেচ্ছা রক্তদাতার সংখ্যা স্বাভাবিকের চেয়েও কম। কিন্তু রক্তের যেহেতু কোনো বিকল্প নেই তাই এই সময়ে রক্তের চাহিদা মেটাতে স্বেচ্ছা রক্তদাতার কোনো বিকল্প নেই। ক্রান্তির এই সময়ে স্বেচ্ছা রক্তদাতারাই এগিয়ে আসতে পারেন মানবিক মমতা নিয়ে। তাদের দিকেই চেয়ে আছে অসংখ্য মুমূর্ষু রোগী। 

কোয়ান্টাম ল্যাবের দায়িত্বশীল শামীমা নাসরিন মুন্নী বলেন, ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী সুস্থ সবল যে কোনো মানুষ চার মাস পর পর রক্তদান করতে পারেন। তারা যদি নিয়মিত রক্তদান করেন তাহলেই রক্তের বর্তমান চাহিদা মেটানো সম্ভব। তিনি আরো জানান, কোয়ান্টাম ল্যাবের পক্ষ থেকে রক্তদাতাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে ব্লাড ক্যাম্প আয়োজন করা হচ্ছে। এর মাঝে ভ্রাম্যমাণ ব্লাড ক্যাম্পও রয়েছে। এছাড়া লকডাউনের এই সময়ে রক্তদাতাদের পরিবহন সেবার মাধ্যমে ল্যাবে নিয়ে আসা হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ২০ জন রক্তদাতা ল্যাবে এসে রক্ত দান করছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে শতকরা প্রায় ৯৭ ভাগই রাজধানী ঢাকায়।

শুধু বড়রা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে তা নয়। শিশুরাও রয়েছে চরম ঝুঁকিতে। ঢাকার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলছেন, কয়েক দিন ধরে এডিস মশাবাহিত এ ভাইরাস জ্বরে যেভাবে আক্রান্ত রোগী বাড়ছে, তাতে অনেক শিশুও পাচ্ছেন তারা।

জ্বর, মাথায় ব্যথা, চোখে ব্যথা, শরীরে ব্যথা, মুখ থেকে রক্তক্ষরণ, পেট ফুলে যাওয়া, শরীরে পানি আসা, গায়ে র‌্যাশ ওঠা এসব লক্ষণ নিয়ে হাসপাতালে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা।

এসি