ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১০ জুলাই ২০২৫,   আষাঢ় ২৫ ১৪৩২

সম্প্রীতি সংলাপে শেখ কামালের বন্ধুরা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৩:৫০ পিএম, ৬ আগস্ট ২০২১ শুক্রবার | আপডেট: ০৬:৪২ পিএম, ৬ আগস্ট ২০২১ শুক্রবার

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় ছেলে, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শহীদ শেখ কামালের জন্মবার্ষিকীতে সম্প্রীতি বাংলাদেশের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়েছে সম্প্রীতি সংলাপ ‘প্রাণময় তরুণ শেখ কামাল’।

সম্প্রীতি সংলাপ-এর ৮৩তম এ পর্বটি অনুষ্ঠিত হয় বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) রাত ৯টায়। 

অনুষ্ঠানের শুরুতে সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আগষ্ট মাস শোকের মাস। জাতীয় জীবনে আগষ্ট মাসে যে কালো অধ্যায়ের সৃষ্টি হয় সেটা কখনো জাতীর ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা যাবে না। এ আগস্ট মাসেই জন্মেছিলেন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল এবং বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব।’

তিনি আরও বলেন, ‘আজকে একটা তৃপ্তির বিষয় কয়েকবছর আগে আমরা বন্ধুরা শেখ কামালের স্মৃতিচারণ নিয়ে আলোচনা শুরু করি। এখন শেখ কামালকে নিয়ে সারা দেশে আলোচনা হচ্ছে। ক্রীড়াঙ্গনে, সরকারী অফিসে আলোচনা হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য অনেক ভাল লাগার বিষয়।’

এরপর স্বাগত বক্তব্য রাখেন সম্প্রীতি বাংলাদেশের সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন ছাত্রলীগ করতাম তখন শেখ কামালকে নিয়ে তেমন ইতিবাচক আলোচনা শুনিনি। তখন শেখ কামালকে নিয়ে অপপ্রচার ছিলো বেশি।’

তিনি আরও বলেন, ‘১৯৭৫ পরবর্তী শেখ কামালকে এমনভাবে নেতিবাচক চরিত্রে তুলে ধরা হয়েছিলো যে- শেখ কামাল মানেই খারাপ কিছু। আজ শেখ কামালকে জাতীর কাছে সঠিকভাবে তুলে ধরার জন্য আপনাদের সতীর্থ বন্ধুদের অসামান্য কৃতিত্ব। আজকে সারাদেশে এতো আলোচনা, প্রশংসা, কাজের তথ্য প্রচার এসব কিছুই কয়েকবছর আগে আপনারা বন্ধুরাই শুরু করেছিলেন। এজন্য জাতি আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে।’

আলোচনায় শেখ কামালের বন্ধুরা তাঁর কর্মময় জীবনের স্মৃতিচারণ করেন।

সম্প্রীতি সংলাপে অংশগ্রহণ করেন শেখ কামালের ছাত্রজীবনের বন্ধু বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা নূরুল আলম, মেজর জেনারেল (অব:) সায়ীদ আহমেদ বীর প্রতীক, সাংবাদিক শফিকুল করিম সাবু, মেজর (অব:) দোস্ত মোহাম্মদ, ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান, রাজশাহী থেকে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, সিনিয়র সাংবাদিক আলী হাবিব, সাইফ আহম্মেদ, তাওরিদ হোসেন বাদল।

অনুষ্ঠানের সঞ্চালক সম্প্রতি বাংলাদেশের আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে শেখ কামালকে নিয়ে তার স্মৃতিতে থাকা ঘটনা বর্ণনা করেন। ক্রিকেট ম্যাচের ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, রকিবুল হাসান পহেলা মার্চ ১৯৭১ সালে যে ক্রিকেট ব্যাটে জয় বাংলা স্টিকার লাগিয়ে নেমেছিলেন, সেই স্টিকার শেখ কামাল ও ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন লাগিয়েছিলেন।

সাংবাদিক আলী হাবিব বলেন, ২০১৭ সালের ৫ই আগস্ট জাতীয় প্রেসক্লাবে সতীর্থ স্বজনের ব্যানারে শহীদ শেখ কামালের জন্মদিন পালন করা হয়েছিল। সেই দিন উদ্দীপ্ত যৌবনের দূত নামে সংকলন প্রকাশ করা হয়। সেই সংকলনটি স্বমন্বয় ও সম্পাদনা করেছিলেন আজকের সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, সম্ভবত শেখ কামালকে নিয়ে এটিই ছিল প্রথম প্রকাশনা। এ প্রসঙ্গে পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এই সংকলনে আমাদের জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম থেকে শুরু করে ডাকসু কর্মচারি গোপাল, মধুর ক্যান্টিনের মধুদার ছেলে অরুনসহ অনেকের লেখা আছে।

পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, স্মৃতি খন্ড খন্ড। সবতো একসাথে বলাও যায় না। এগুলো শুনতে ভালোই লাগে। কেউ যদি স্মৃতি ধরিয়ে দেয় তখন স্মৃতি সামনে চলে আসে। শেখ কামালকে নিয়ে কতনা অপবাদ ছড়িয়েছে সুবিধাবাদীরা। এখনও এসব অপবাদ ছড়ান সুবিধাবাদীরা। অদ্ভুত, নোংরা অপপ্রচার করেছে। এসবের পেছনে অনেক দুরভিসন্ধি ছিল। শেখ কামালকে নিয়ে খণ্ড খণ্ড অনেক স্মৃতি আসছে তবে সব কিছু রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এসেছে। সব কিছু মিলিয়ে রাজনীতি ছিল, শেখ কামালও রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। সেখানে অপরাজনীতি ছিল না, ঘৃণা ছিল না। শেখ কামালের অনেক বন্ধু ছিলেন ছাত্রলীগ করতেন না। 

তিনি বলেন, শেখ কামাল মুক্ত মন, গুণী, পরোপকারী ও সুন্দর চিন্তার মানুষ ছিলেন। যাকে আজকে খুব দরকার ছিল। তিনি থাকলে আজ যুব সমাজ সঠিক পথে থাকতো। 

তিনি আরও বলেন, অন্যান্য বছরের ন্যায় আমরা বন্ধুরা আজকেও বসেছি, শুধুই তাঁর স্মৃতিচারণ করতে, শুধুমাত্র তাঁকে স্মরণ করতে। তিনি বলেন, শেখ কামালের আদর্শ, নৈতিকতা, উদারতা, পরোপকারী মনোভাব ও মানবিকতা আজ গণমাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে।

শেখ কামালের বন্ধু বিশ্বব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা-নুরুল আলম বলেন, ১৯৬৩ সাল থেকে শেখ কামালের সঙ্গে আমার পরিচয়। আমি তখন শাহীন স্কুলে ক্লাস সেভেনে ভর্তি হই। আমাদের দু’জনের সঙ্গে বেশ আন্তরিকতা ছিল। দু’জনেই ভালো ছাত্র ছিলাম, দুষ্টামি করতাম। স্কুল জীবনেই শেখ কামালের ভেতরে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো গুণাবলী ছিল। আমাদের শাহীন স্কুলে চারটা হাউজ ছিল। 

নুরুল আলম বলেন, ৭ম শ্রেণীতে শেখ কামাল গ্রুপ ক্যাপ্টেন ছিলেন। শুধু সহপাঠি নয় জুনিয়র ছাত্ররাও শেখ কামালকে অনেক ভালোবাসতো, মরুব্বীদের শেখ কামাল অনেক শ্রদ্ধা করতেন। 

তিনি বলেন, স্কুল জীবনে শেষ করে দুজনেই ঢাকা কলেজে ভর্তি হলাম তারপরে দুজনেই ঢাকা ভার্সিটিতে পড়াশোনা করি। দীর্ঘদিন পর ১৯৭১ সালে আবার আমাদের দেখা হয় মুজিব নগরে। দু’জনেই অতীতের স্মৃতি এবং পরিচিতদের নিয়ে দীর্ঘক্ষণ গল্প করলাম। 

আয়োজনটি দেখা গেছে- https://www.facebook.com/sampritee.bangladesh এই লিংকে। একইসঙ্গে দেখা যায় একুশে টেলিভিশনের ফেসবুক পেজ (https://www.facebook.com/Ekushey24online)-এ।

প্রসঙ্গত, মহামারি করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই সম্প্রীতি বাংলাদেশ নিয়মিত ওয়েবিনার করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় অনুষ্ঠিত হয় সম্প্রীতি সংলাপের ৮৩তম পর্ব।

কবি নজরুলের বাণী- ‘গাহি সাম্যের গান’-কে ধারণ করে বিভিন্ন পেশাজীবীদের সমন্বয়ে ২০১৮ সালের ৭ জুলাই আত্মপ্রকাশ ঘটে সম্প্রীতি বাংলাদেশ-এর, জাতীয় জাদুঘরের শওকত ওসমান মিলনায়নে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। 

‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্য নিয়েই মূলত সংগঠনটি আত্মপ্রকাশ করে। বর্তমানে বিশিষ্ট অভিনেতা ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় আহ্বায়ক হিসেবে এবং সুপরিচিত চিকিৎসক ও অধ্যাপক ডক্টর মামুন আল মাহতাব স্বপ্নিল সদস্য সচিব হিসেবে ‘সম্প্রীতি বাংলাদেশে’র দায়িত্ব পালন করছেন। 

বাংলাদেশের নানা প্রান্তে সভা-সমাবেশ ও করোনাকালীন ওয়েবিনারের মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িকতার আদর্শ প্রচারের কাজ করছে সংগঠনটি। ইতিমধ্যে সীমান্তের ওপারেও প্রশংসিত হয়েছে সংগঠনটি। মুচকুন্দ দুবের মতো সাবেক কূটনীতিবিদ, যোগেন্দ্র যাদবের মতো সমাজকর্মী ও রাজনীতিবিদ, কিংবা গোবিন্দ নিহালনি-কবীর খানের মতো পরিচালকরা পর্যন্ত তাদের কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
এসএ/