ঢাকা, বুধবার   ১৫ মে ২০২৪,   জ্যৈষ্ঠ ১ ১৪৩১

নওশাদের সন্তানেরা হোক গ্যালিলিও নজরুল কিংবা নিউটন! 

মানিক মুনতাসির

প্রকাশিত : ০১:০৫ পিএম, ৩১ আগস্ট ২০২১ মঙ্গলবার | আপডেট: ০১:১৪ পিএম, ৩১ আগস্ট ২০২১ মঙ্গলবার

বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটন জন্ম নেন তাঁর পিতা আইজ্যাকের মৃত্যুর তিন মাস পর। তার বাবা ছিলেন গ্রামের একজন সাধারণ কৃষক। জন্মের সময় নিউটনের আকার-আকৃতি ছিল খুবই ছোট। তার মা হানাহ্‌ এইসকফ প্রায়ই বলতেন, ছোট্টবেলার সেই নিউটনকে অনায়াসে একটি কোয়ার্ট মগের ভিতর ঢুকিয়ে দেয়া যেত। 

নিউটনের তিন বছর বয়সে তার মা আরেকটা বিয়ে করেন এবং দ্বিতীয় স্বামী রেভারেন্ড বার্নাবাউস স্মিথের সাথে বসবাস করতে থাকেন। তখন নিউটন মাকে ছাড়াই বড় হতে থাকেন। এরপর তিনি মহাবিশ্ব, বিশ্ব পরিমন্ডল নিয়ে কি করেছেন- তা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। এই ইংরেজ বিজ্ঞানীকে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী বিজ্ঞানী হিসেবে ধরা হয়।

আরেক বিখ্যাত বিজ্ঞানী গ্যালিলিও, গ্রীসের পিসা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর আর্থিক অসচ্ছলতার দরুন তাঁর পড়াশোনাই বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু পরবর্তী জীবনে তিনি যা করে গেছেন পৃথিবীবাসী তাই অনুসরণ করছে। আর এরিস্টটলও শৈশবেই তাঁর পিতা নিকোমেকাসকে হারান। তারপরও আজ বিশ্বব্যাপী তিনিই প্রাণী বিজ্ঞানের জনক ও সেরা দার্শনিক।

আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ছোটবেলায় মসজিদের মুয়াজ্জিন ছিলেন। অর্থ কষ্ট আর দুঃখ দুর্দশার জন্যই তাকে দুখু মিয়া বলে ডাকা হতো। অথচ তিনিই বাংলাভাষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি। বিদ্রোহী নজরুল জেলও খাটেন। কিশোর বয়সে কাজ করেন রুটির দোকানে। সেনাবাহিনীর সৈনিকও ছিলেন। কিন্তু তাঁর লেখনী আর সংগ্রামী জীবনী সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নাই। 

অর্থাৎ জন্ম যেখানে, যেমনই হোক কর্মটাই আসল। তবে ব্লিডিং একটা ব্যাপার। সাথে সোসাইটিও। বহু প্রতিভা অঙ্কুরেই ঝরে যায় সোসাইটির বাধায়। আজ থেকে ২২ বছর আগে হারানো বাবাকে খুঁজি প্রতি মুহূর্তে।

এদিকে বিমান বাংলাদেশের পাইলট ক্যাপ্টেন নওশাদ ১২৪ জন যাত্রীকে নিরাপদে আকাশ থেকে নামিয়ে নিজে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। আহা! জীবন। দূর আকাশে হার্ট এ্যাটাক করেও যাত্রীদের জীবনকেই প্রাধান্য দিলেন। এটাই পেশাদারিত্ব। এটাই মনুষ্যত্ব।

নওশাদ রেখে গেছেন তিন ছেলে-মেয়ে। দুটি তো একেবারেই ছোট। তাঁর সন্তানরা হোক একেকজন গ্যালিলিও, নিউটন কিংবা নজরুল অথবা হোক বাবার চেয়েও বড় কিছু। এই দোয়াই করি। ক্যাপ্টেন নওশাদের ছেলেমেয়েরাও বাবার স্মৃতি হাতড়াচ্ছে হয়তো আজই।

আমার বাবার তো কোনো ছবিও নেই আমাদের কাছে। আছে শুধু কিছু স্মৃতি, আর উপদেশ। সেগুলোই পাথেয়। কলেজ জীবনে ঠাকুরগাঁও শহরের এক বাড়িতে লজিং ছিলাম বছর দেড়েক। বাড়ির মালিক ছিলেন একজন ট্রাক ড্রাইভার। কিন্তু তিনি ছিলেন একজন ভালো মানুষ। ছিলেন ভালো পিতাও। আমাকেও নিজের সন্তানের মতই দেখতেন। তাঁর ছেলে-মেয়েরা বেশ ভালই আছে আজ।

রাজধানী শহরে আসার পর প্রথম জীবনে উত্তরায় থাকতাম এক বন্ধুর সাথে। তার নির্মাণ সাইটে শ্রমিকদের সাথেই খেতাম। এমনকি পান করতাম সাপ্লাই লাইনের পানিও।

যাইহোক, গত দেড় বছর ধরে চলা করোনা মহামারীতে পুরো বিশ্বই আজ বিপর্যস্ত। প্রতিদিনই মারা যাচ্ছে অসংখ্য মানুষ। তারা আপনার-আমার কারো না কারো নিকটতম আত্মীয়-স্বজন। এতিম হচ্ছে মানব সন্তান। আমিও পার করছি জীবনের কঠিনতম সময়। প্রতিটা মুহূর্তই যেন একেকটা পাথর। যা সরে যাচ্ছে আর বুকটা হালকা হচ্ছে।

শেষ কথা, হয়তো এই মহামারী কেটে যাবে কোনো একদিন। ঘুরে দাঁড়াবে পৃথিবী। সঠিক শিক্ষা নিয়ে আবারো সামনে এগিয়ে যাবে মানবজাতি। আগামী প্রজন্মের জন্য রেখে যাব বাসযোগ্য পৃথিবী। 

এনএস//