ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

স্লুইস গেটের অভাবে আট গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১০:১৩ এএম, ২ সেপ্টেম্বর ২০২১ বৃহস্পতিবার

চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রাম। এই গ্রামেরই খালের ওপর রয়েছে একটি ব্রিজ। আর সেই ব্রিজটিই তিতুদহ ও গড়াইটুপি ইউনিয়নের আটটি গ্রামের মানুষের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ ব্রিজের নিচে নেই কোনো স্লুইস গেট। এতে চিত্রা নদীর উজানের পানিতে গ্রামগুলোর প্রায় সাত হাজার একর জমির ধান ও সবজিসহ অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ ও গড়াইটুপি ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে চলে গেছে হিজলগাড়ী-সরোজগঞ্জ সড়ক। এই সড়কের গোলাপনগর গ্রামের শেষ প্রান্ত ও গড়াইটুপি ইউনিয়নের শুরুর মুখেই রয়েছে চিত্রা নদীর পাশ দিয়ে বেরিয়ে আসা বোয়ালখালি খাল। সেই খালের উৎসমুখে রয়েছে একটি ছোট ব্রিজ।

স্থানীয়রা জানান, চিত্রা নদীর উৎস ও প্রতিমুখ খনন না থাকায় নদীর পানি ওই ব্রিজের নিচ দিয়ে উজানে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে তিতুদহ ও গড়াইটুপি ইউনিয়নের গোলাপনগর, গোষ্ট বিহার, গড়াইটুপি, বিত্তিরদাড়ি, তিতুদহ, গহেরপুর, বাটিকাডাঙ্গা, গবরগাড়া, ছিলিন্দিপাড়া গ্রামের জমিতে পানি উঠে গেছে। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গ্রামগুলোর প্রায় ৭ হাজার একর জমির ফসল।

স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক মোবারক, মান্না, জলিল, দুখি, কদর, ঝন্টুসহ বেশ কয়েকজন বললেন, চিত্রার উজানের পানি বোয়ালিয়া গ্রামের খালের ওই ব্রিজের নিচ দিয়ে চলে আসায় মাঠের পর মাঠ তলিয়ে গেছে। ধান পানির নিচে ডুবে গেছে। শুধু ধান নয়, বিভিন্ন ধরনের সবজিও পানির নিচে তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে।

কৃষকরা বলছেন, বর্ষা মৌসুমে ফসলের জন্য বৃষ্টির পানিই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু চিত্রা নদীর অপ্রত্যাশিত উজানের স্রোতের পানি ফসলের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্লুইস গেট তৈরি করে পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে গ্রামের মাঠগুলো পানির নিচেই থাকবে।

তারা আরও বলেন, যখন পানির প্রয়োজন তখন নদীতে পানি থাকে না। আর যখন বৃষ্টি হয় তখন চিত্রা নদীর অতিরিক্ত পানি উজানে ঢুকে ফসলের ক্ষতি করে।

চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, জেলার দর্শনা মাথাভাঙ্গা নদীর গোপালখালী ব্রিজের উৎসমুখ থেকে গড়াইটুপি ইউনিয়নের শেষ সীমানা পর্যন্ত ৩৩ কিলোমিটার স্থানজুড়ে চিত্রা নদী ছড়িয়ে রয়েছে। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ড ২৩ কিলোমিটার নদী খনন করেছে। আর উৎসমুখের কিছু পরে ৩ কিলোমিটার এবং শেষের ৭ কিলোমিটার অংশের খনন এখনও বাকি।

তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে এলাকাবাসী বলছেন, বোর্ড কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবেই এখন পর্যন্ত ওই ব্রিজের নিচে স্লুইস গেট স্থাপন করা যায়নি। তার খেসারত দিতে হচ্ছে স্থানীয় কৃষকদের।

গড়াইটুপি ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান রাজু বলেন, এ ইউনিয়নের মধ্যে সাত কিলোমিটার চিত্রা নদী খনন এখনো বাকি আছে। এ কারণে নদীর পানি স্বাভাবিক গতিতে প্রবাহিত হতে পারছে না। ফলে বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি বাড়ছে আর সেই পানি উজানে চাপ তৈরি করছে। এর আগে বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সভায় অনেকবার তুলে ধরেও আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়নি।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ সাদিকুর রহমান বলেন, এ সমস্যার বিষয়টি অনেকেই জানিয়েছে। ভুক্তভোগীরা যদি লিখিতভাবে জানান সে ক্ষেত্রে আমাদের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ আহমেদ বলেন, চিত্রা নদী খনন করতে গিয়ে কিছুটা সমস্যায় পড়তে হয়েছে। খনন কাজের অধীন এলাকায় খাস ও মালিকানাধীন জমিও রয়েছে। সে কারণে কেন্দ্রীয়ভাবে এই জমিগুলো অধিগ্রহণের কাজ চলছে। এই কাজ শেষ হলেই নদী খননের কাজ ফের শুরু হবে। তখন এ সমস্যার সমাধান হবে। 

এএইচ/