ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

নিঝুমের সৃষ্টিশীল কাজের প্রশংসা দেশ ছেড়ে বিদেশেও

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: 

প্রকাশিত : ০৮:৪৮ পিএম, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ বৃহস্পতিবার

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে লকডাউনের অলস সময়কে কাজে লাগিয়ে কলেজ ছাত্রী নিঝুম নিজের সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে তৈরী করেছেন পাঁচশতরও অধিক ফ্যাশনেবল অলংকার, পার্স ব্যগ, চাবির রিং ও কলমদানীসহ বিভিন্ন দৃষ্টি নন্দন সামগ্রী। তার হাতের এ কারুকাজ এলাকায় ব্যাপক সারা জাগিয়েছে। দৃষ্টি করেছে প্রবাসীরও। ‘গয়নার বাক্স” নামে একটি ফেইসবুক পেইজ দিয়ে ইতিমধ্যে আয়ও করেছেন অর্ধলক্ষ টাকা।

নিঝুম চক্রবর্তী জানান, ২০২০ সালের মার্চ থেকে করোনার করালঘাতে বন্ধ হয়ে যায় স্কুল কলেজ। বন্ধহয় তার এইচ এস সি পরীক্ষা। এদিকে সরকারী ঘোষনা বাড়িতেই থাকতে হবে। এক বিষন্নতায় পায় তাকে। এ সময় তিনি শুরু করেন আনকমন ফ্যাশনেবল অলংকার তৈরীর কাজ। তিনি জানান, এ কাজ করে ব্যপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন। এ উৎসাহেই তিনি একের পর এক আইটেম তৈরী করছেন। তবে প্রচুর কাজ করতে গিয়ে তার যে কাঁচামাল প্রয়োজন হয় তা সংগ্রহে তার বাবা তাকে সহায়তা করেন। 

তিনি জানান, এ কাজ করে সে এখন পর্যন্ত ৫০ হাজার টাকার উপরে আয় করেছেন। তিনি জানান, ইতিমধ্যে কানাডা, আমেরিকা, কুয়েত, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ ক্রেতাদের কাছে কুড়িয়ার করে পাঠিয়েছেন।

শ্রীমঙ্গল সবুজবাগ এলাকার ব্যাংকার পুলক রঞ্জন চক্রবর্তী জানান, নিঝুম তার কাজে এতো বৈচিত্রতা এনেছেন যা দ্রুত সৌখিন মানুষের দৃষ্টি কারে। তিনি জানান, তার মেয়ের এক বান্ধবির মাধ্যমে নিঝুমের এই হাতের কাজের খবর পান। সোমবার সকালে তিনিসহ তারা ২/৩জন নিঝুমের কাজ দেখতে এসে অনেকটা আশ্চর্য হয়েছেন। এতো সুন্দর কাজ যা নিজ চোখে না দেখলে বিশ^াসই করতেন না। একই কথা জানান, তার সাথে আসা মুদ্রণ ব্যবসায়ী বিজন আচার্য ও চা ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বুলবুল।

সোমবার সরজমিনে দেখা যায়, সৌখিন এ হ্যান্ডিকাপ্ট শিল্পি গত দেড় বছরে পাটের সুতা, কাঠ, পাটের কাপর, এন্টিক মেটাল, পলিমার ক্লে, রেসিন ও পুঁতি দিয়ে তৈরী করে যাচ্ছেন একের পর এক অলংকার ও সামগ্রী। অনেকে পোষাকের সাথে (মেসিং) সামঞ্জস্য করে ডিজাইন বলে দিলে সে রং-এ ও ডিজাইনেও তিনি তৈরী করে দিচ্ছেন অলংকার। এখন তিনি তৈরী করছেন পূজা কালেকশন।

নিঝুমের  মা আলপনা ভট্টাচার্য্য জানান, করোনার এই সময়ে সারা দিনই নিজের ঘরে থাকেন নিঝুম। প্রথম দিকে একটা দুইটা আইটেম করার পর আশে পাশের অনেকে তাকে আরো কিছু তৈরী করে দেয়ার জন্য বলেন। প্রথমে নিজের আত্মীয় স্বজনকে তার তৈরী অর্নামেন্ট ফ্রিতে  দিয়েছেন। অনেকে এটি ফেইসবুকে পোষ্ট করেন। তখন বেশ কয়েকজন প্রবাসী তার খোঁজকরে আরো কিছু অর্নামেন্টের অর্ডার করেন। সে এ গুলো তৈরী করে দেয়। এতে সে ব্যাপক উৎসাহিত হয়। এক সময় সে এই কাজেই মনো নিবেশ করে। তিনি জানান, অর্নামেন্টের কাজ করে করে যখন ক্লান্তি আসে তখন সেখানেই ঘুমিয়ে পড়েন। আবার কখনও কখনও গিটারে শুর তোলেন।

নিঝুমের এই সৃষ্টিশীল কাজে খুশি তার বাবা। নিঝুমের বাবা শ্রীমঙ্গল দ্বারিকা পাল মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক রজত শুভ্র চক্রবর্তী  জানান, তার মেয়ে ঘরে বসেই এন্টিক মেটালের গয়না, জুটের গয়না, কাঠের গয়না, পলিমার ক্লে এর মূর্তি গয়না,পুতির গয়না, ব্যগ, কলমদানী, চাবির রিং ও গয়নার বাক্স তৈরী করছে। যা “গয়নার বাক্স” নামে একটি ফেইসবুক প্রেইজে আপ করে অনেক সারা পেয়েছে। 

এ ব্যাপারে কাতার প্রবাসী সুব্রত চক্রবর্তী জানান, কাতার থেকে ফেইসবুকে তিনি নিঝুমের তৈরী ছবি দেখেছেন। সেখান থেকে যোগাযোগ করে তিনি ও তার ভারতীয় কিছু সহকর্মী বেশ কিছু অর্নামেন্ট নিঝুমের কাছ থকে সংগ্রহ করেছেন। নিঝুমের এই সৃষ্টিশীল কর্ম নতুন প্রজন্মের আরো অনেককেই উৎসাহিত করবে এমটাই আশা এলাকাবাসীর।

আরকে//