ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

গ্রীন ভিউ উচ্চ বিদ্যালয়

একটি সুশিক্ষার বাতিঘর

ফারুক আহমেদ চৌধুরী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৬:৫৩ পিএম, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১ সোমবার | আপডেট: ০৮:৩৮ পিএম, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ রবিবার

চাঁপাইনবাবগঞ্জের স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গ্রীন ভিউ উচ্চ বিদ্যালয়। চার দশক ধরে জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে বিদ্যালয়টি। শিক্ষা বিস্তারের স্বপ্ন নিয়ে ১৯৮২ সালে যাত্রা শুরু করা বিদ্যালয়টি এখন শিক্ষা গ্রহণের আদর্শ প্রতিষ্ঠান। সুশিক্ষার বাতিঘর হিসেবে সবার আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠানটি প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিকে উন্নীত করা হয়।

পরিপাটি সবুজ ক্যাম্পাস। পড়ালেখা, আড্ডা, গল্প আর গান সবকিছু চলছে একসঙ্গে। নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও স্বমহিমায় এগিয়ে চলেছে এই শিক্ষায়তন। ২০১৯ সালে জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্বাচিত হয় গ্রীন ভিউ উচ্চ বিদ্যালয়। পেয়েছে স্বীকৃতিও। একবিংশ শতাব্দীর প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেকে ডিজিটাল করে নিয়েছে গ্রীন ভিউ উচ্চ বিদ্যালয়। বর্তমানে প্রায় সাড়ে ১৩শ’ শিক্ষার্থীর পদচারণে মুখর বিদ্যালয়টির ক্যাম্পাস।

গ্রীন ভিউ উচ্চ বিদ্যালয় সুশিক্ষার চমৎকার গন্তব্য। এখানকার শিক্ষাব্যবস্থা বেশ উন্নত ও আধুনিক। এখানে সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা নেই। অভিজ্ঞ শিক্ষকমণ্ডলী ও প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে বিদ্যালয়টি শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করেছে, আর মানসিক প্রশান্তি দিয়েছে অভিভাবকদের।

শহরের প্রাণকেন্দ্রে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে আম্রকাননের মধ্যে বিদ্যালয়টির অবস্থান। আম বাগানের মধ্যে গড়ে ওঠা ভবনের রং সবুজ। চারদিকে যেন সবুজের সমারোহ। এমনই এক অপার সৌন্দর্যের মনোমুগ্ধকর পরিবেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে গ্রীন ভিউ উচ্চ বিদ্যালয়। শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ থাকায় এ বিদ্যালয়ের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে শিক্ষার্থীরা। প্রতি বছর সবুজে ঘেরা এ ক্যাম্পাসে ভর্তি হচ্ছে শত শত শিক্ষার্থী।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সুপরিচিত নাম গ্রীন ভিউ উচ্চ বিদ্যালয়। বর্তমানে এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যোগ্যতার প্রমাণ দিচ্ছে। একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি সংস্কৃতি, ক্রীড়া, মানবিক গুণাবলি ও উন্নত মানসিকতা সৃষ্টির বিকাশে বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ যতœশীল। মেধাবী ছাত্রছাত্রী আর অভিজ্ঞ শিক্ষক-শিক্ষিকা ও জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে  জ্ঞান অর্জনের এক আদর্শ বিদ্যাপীঠে পরিণত হয়েছে এ বিদ্যালয়।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালে ১২৭ শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। শতভাগ উত্তীর্ণ হওয়াসহ ৪৮ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। জিপিএ-৪ পেয়েছে ৬৫ জন। এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজ  যোগ্যতায় যে কোনো কলেজে প্রত্যাশিত আসন দখল করতে সক্ষম। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে প্রাথমিকে ৫৭৪ এবং মাধ্যমিকে ৭৮৭ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত।

এ বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী নূরে আনাম বাকী জানায়, গ্রীন ভিউ উচ্চ বিদ্যালয় আমার শিক্ষা জীবনের ভীত গড়ে দিয়েছে। শিক্ষকরা তাদের অভিজ্ঞতা দিয়ে আমাদের সুশিক্ষা দিয়েছেন, দেখিয়েছেন নতুন পথের সন্ধান। এখন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা নিয়ে জীবনের বাকি স্বপ্নগুলোও পূরণ করতে পারব। প্রিয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গ্রীন ভিউ উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্লাস ও আড্ডা-গল্পে কাটানো সময়গুলো স্বপ্নের মতো মনে হয়। ক্যাম্পাসের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মনোমুগদ্ধকর। হাসি-আনন্দের মধ্যদিয়ে প্রতিনিয়ত নতুন কিছু শিখেছি। এ বিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষক একাডেমিক শিক্ষা প্রদানের পাশাপাশি সামাজিক রীতিনীতি শিক্ষা দেয়ার ব্যাপারেও খুবই যত্মশীল।

সুবজ ক্যাম্পসে প্রাণের স্পন্দন : প্রাথমিকের ক্ষুদে শিক্ষার্থী ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের পদচারণে মুখর থাকে গ্রীন ভিউ উচ্চ বিদ্যালয়ের সবুজ ক্যাম্পাস। করোনায় দীর্ঘদিন বিদ্যালয় বন্ধ থাকার পর আবারও শিক্ষার্থীদের পদচারণায় প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে বিদ্যালয় চত্বর। আকাশছোঁয়া স্বপ্ন নিয়ে আসা শিক্ষার্থীদের আনন্দঘন ও উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে পুরো ক্যাম্পাসে। সবুজের চাদরে মোড়ানো বিদ্যালয় চত্বর, আম্র্রকানন, অভিভাবক শেড প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠেছে নতুন ভাবে। ৩৯ বছরে কত উজ্জ্বল নক্ষত্র এখানে এসেছেন, নিজেকে গড়েছেন, আবার কালের বিবর্তনে আলো বিলিয়ে চলে গেছেন। তারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে নিজেকে তৈরি করেছেন। সেই আলোয় আজও পথ চলে নতুন প্রজন্ম।

ইতিহাস : ১৯৮২ সালে তৎকালিন মহকুমা প্রশাসক মোঃ আতাউর রহমান মজুমদারের ঐকান্তিক ইচ্ছায় এবং জেলার গণ্যমান্যদের আগ্রহে গ্রীন ভিউ স্কুল প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। নবাবগঞ্জ মহকুমা জেলায় উন্নীত হলে ১৯৮৫ সাল থেকে জেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এই বিদ্যালয়টি পরিচালিত হয়ে আসছে এবং জেলা প্রশাসক বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির আসন অলংকৃত করছেন। পরে ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠানটিকে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ে উন্নীত করা হয়। বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা ১৯৮৩ সাল থেকে প্রাথমিক এবং ২০০৫ সাল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে কৃতিত্বের সাক্ষর রাখছে। গত ২০১২ সালের ২ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসক ড. শাহ আলমের একান্ত আগ্রহে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ ‘কালেক্টরেট গ্রীন ভিউ ট্রাস্ট’-এর অধীনে বিদ্যালয় পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেন। সাবেক জেলা প্রশাসক এজেডএম নূরুল হক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যুগোপযোগী, বিজ্ঞানমনস্ক ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ তৈরির লক্ষ্যে গ্রীন ভিউ উচ্চ বিদ্যালয়কে একটি মডেল প্রতিষ্ঠান হিসেবে রূপান্তরের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। বর্তমান জেলা প্রশাসক মো. মঞ্জুরুল হাফিজ সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছেন।

অবকাঠমো : বিদ্যালয়টির পূর্ব পাশে ৯ কক্ষের তিন তলা ভবন রয়েছে। ভবনটির একটি শিক্ষকদের কক্ষ এবং আটটি মাধ্যমিক পর্যায়ের ছাত্রদের ক্ল¬াসরুম। পশ্চিমে প্রবেশ পথ। রয়েছে দৃষ্টিনন্দন গেট। উত্তর পাশে ১২ কক্ষের দুই তলা ভবন রয়েছে। যার একটি প্রধান শিক্ষকের অফিস কক্ষ। এটিই এ বিদ্যালয়ের মূল ভবন। প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ক্ল¬াসরুম। দক্ষিণেও ১১ কক্ষের তিন তলা ভবন রয়েছে। যার একটি হল রুম ও ১০টি মাধ্যমিক পর্যায়ের ছাত্রীদের ক্লাসরুম হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। বিদ্যালয় ক্যাম্পাসের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে রয়েছে সততা স্টোর ও ড্রেস কর্ণার। বিশাল আকারের খেলার মাঠ। একটি লাইব্রেরি ও দুটি মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম রয়েছে।
কিছু সমস্যা : দীর্ঘ চার দশকেও জাতীয়করণ হয়নি বিদ্যালয়টি। ফলে শিক্ষক-কর্মচারিদের বেতন-ভাতার বোঝা টানতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। সরকারি না হওয়ায় যোগ্যতা অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছে না শিক্ষকরা। প্রতিটি শিক্ষার্থীকে প্রতি মাসে গুণতে হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬৫০ টাকা। সরকারি না হওয়ায় বিদ্যালয়টির মাধ্যমিক বিভাগে শিক্ষকও পাওয়া যাচ্ছে না। বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে নিবন্ধিত শিক্ষরা এখানে যোগদান করছেন না। ফলে ছয় জন খণ্ডকালিন শিক্ষক দিয়ে চলছে পাঠদান কার্যক্রম। এছাড়া বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীদের জন্য কম্পিউটার ল্যাবও নেই।

প্রধান শিক্ষকের কথা : এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলার জন্য চেষ্টা করছি। তাদের সুশিক্ষিত করতে চাই। একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি সংস্কৃতি, ক্রীড়া, মানবিক গুণাবলি ও উন্নত মানসিকতা সৃষ্টির বিকাশে আমরা যতœশীল। বিদ্যালয়টির শিক্ষার মান ও পরিবেশ সময়োপযোগী। সবার সম্মিলিত প্রয়াসে এ বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপযোগী। জেলা প্রশাসকের সুদৃষ্টি ও শিক্ষকদের প্রচেষ্টায় দিন দিন এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার মানোন্নায়ন হচ্ছে। আমাদের প্রত্যাশা, এখানকার শিক্ষার্থীরা আগামী দিনের আলোকিত মানুষ হবে।

আরকে//