হাসুমনির জন্মদিন
মহিবুর রৌফ শৈবাল
প্রকাশিত : ০৩:৪৬ পিএম, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১ বুধবার | আপডেট: ০৬:৩০ পিএম, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ বৃহস্পতিবার
বাংলাদেশ ছোট একটি দেশ। কিন্তু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিক থেকে আমাদের এই দেশটি সুন্দর ও সমৃদ্ধ। আমাদের দেশের চাইতে বিশ্বে অনেক বৃহৎ দেশ রয়েছে, তবে ঐ সব দেশের তুলনায় সবুজ, প্রাঞ্জল, সৌহার্দপূর্ণ, সম্প্রতির দেশ আমাদেরি- সোনার বাংলাদেশ। বিগত ৩০০ বছরের বেশি সময় পরাধীন থাকা এই দেশের মানুষ আত্মপ্রত্যয়ী। যার প্রমাণ মেলে ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাস পর্যালোচনায়। ছোট এই দেশটিকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরে ছিলেন একজন মানুষ; জানিয়েছিলেন এই শোষণ আর নিপীড়িত জনপদের মানুষের সংগ্রামের কথা; জানান দিয়েছিলেন আমাদের প্রাপ্ত স্বাধীনতার কথা। যার নেতৃত্বে এদেশের স্বাধীনতা এসেছে তিনি আমার আপনার ভালোবাসায় অনেক সম্মানিত হয়েছেন, হয়েছেন এদেশের জাতির পিতা। শুধু দেশের মানুষ নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশও তাকে সম্মান জানায়।
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় শেখ লুৎফর রহমান ও সায়ারা খাতুনে পরিবারের সন্তান শেখ মুজিবুর রহমান। শেখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ। শান্ত, দয়ালু এবং ধার্মিক পরিবারে পূর্বপুরুষের রক্ত এই সন্তান বহন করেছেন । পরবর্তীকালে বাবা মা’র প্রাপ্ত দয়া, ধর্ম, সততা ও দৃঢ়চেতা বৈশিষ্টের শিক্ষায় ‘খোকা’ নামে সকলের পরিচিত। শৈশবের খোকা থেকে হয়ে উঠেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যিনি বাঙ্গালীর স্বাধীনতার আন্দোলনের নেতৃত্বে দিয়ে এদেশকে স্বাধীন করেছেন।
ব্যক্তিগত পারিবারিক জীবনে স্ত্রী ফজিলাতুন নেসা মুজিব, বড় মেয়ে শেখ হাসিনা, শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রেহানা এবং শেখ রাসেলের পিতা বঙ্গবন্ধু। তার সন্তানদের ছেড়ে এদেশের মুক্তির জন্য দীর্ঘদিন কারাবাস করেছেন। দেশ ও জাতির প্রতি সম্মান রেখে ১৯৭১ সালে ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে লক্ষ জনতার জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে দৃপ্ত কণ্ঠে পরাধীন বাংলার স্বাধীনতার ঘোষণা করেন; লাখো কণ্ঠে ধ্বনিত করেছিলেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। হাজার বছরের জাতিসত্ত্বা তার ডাকে সাড়া দিয়ে দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ভিতর দিয়ে ছোট এই দেশটিকে দিয়েছে স্বাধীনতা, ভৌগলিক সীমারেখা, নাম দিয়েছে বাংলাদেশ।
স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতির পারিবারিক জীবনে বড় কন্যা শেখ হাসিনাকে সবচাইতে বেশি স্নেহ করতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন তার সন্তান তার অবর্তমানে এদেশ চালানের জন্য দায়িত্বভার গ্রহণ করবে। পিতা মুজিব ১৯৫৪ সালে মোগলটুলী রজনি বোস লেনের বাড়ীতে তার পরিবারকে নিয়ে বসবাস শুরু করার পর শেখ হাসিনা টিকাটুলি নারী শিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবন শুরু করেন। ১৯৬১ সালে ১ অক্টোবর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের বাসায় থাকা শুরু করলে আজিমপুর গার্লস স্কুল থেকে এসএসসি, এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করেন স্বামী হিসাবে বরণ করে নেন বিশ্ববরেণ্য বিজ্ঞানী এম এ ওয়াজেদ মিয়াকে।
মহিবুর রৌফ শৈবাল
দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কয়েকজন বিপথগামী সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারের শিশুসহ সকল (শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বাদে, কারণ তারা তখন দেশের বাইরে ছিলেন। এজন্য বেঁচে যান) সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করে। পৃথিবীর অনেক রাষ্ট্রপ্রধানকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে বা এখনও দেয়া হয় কিন্তু কোনো রাষ্ট্রপতির পরিবারকে এমন নৃশংসভাবে মেরে ফেলার নজির পৃথিবীর ইতিহাসে আর নেই। তার আজীবন সংগ্রামের ফসল আজকের বাংলাদেশ। পিতা আজ আমাদের সাথে নেই, কিন্তু রয়ে গেছে তার আজন্ম লালিত স্বপ্ন, সোনার বাংলা।
হত্যাকাণ্ডে বেঁচে যাওয়া শেখ হাসিনা জাতির পিতার সোনার বাংলাদেশকে বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য ১৯৮১ সালে বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে প্রত্যাবর্তন করেন। ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ছয় বছরের নির্বাসিত জীবন থেকে ফেরা শেখ হাসিনাকে দলটির সভাপতি নির্বাচিত করে। এসময় শেখ হাসিনা ১৭ মে ১৯৮১ সালে মানিক মিয়া এভিনিউয়ে আয়োজিত সংবর্ধনায় বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘আমি চাই বাংলার মানুষের মুক্তি। শোষণের মুক্তি। বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফোটানের জন্য বঙ্গবন্ধু সংগ্রাম করে ছিলেন। আজ যদি বাংলায় মানুষের মুক্তি না আসে। তবে আমার মৃত্যুই শ্রেয়।’
সোজাসাপটা কথা বলার নেত্রী শেখ হাসিনা, তার এই ধরনের সহজ সত্য কথা বলায় তার অনেক শত্রু হয়েছে, তবুও অকপটে কথা বলে প্রতিকূলতাকে মাড়িয়ে তার বক্তব্যের প্রতিটি কথাকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। পরিচ্ছন্ন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থার রূপকার জাতি সংঘের ৬৭তম অধিবেশনে বলেছিলেন, ‘শান্তি ও উন্নয়নের লক্ষ্যে জনগণের ক্ষমতা অপরিহার্য। ন্যায়বিচার হচ্ছে তার ভিত্তি।’ যার কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই, তিনি জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা।
মুজিব কন্যা থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংগ্রামী জীবনকে হত্যা করতে নানা প্রয়াস চালানো হলেও আল্লাহর অশেষ রহমতে তিনি বেঁচে গিয়েছিলেন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায়। জাতির পিতার আদুরে কন্যা হাসু বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সম্মানসূচক ডিগ্রি, পদক ও স্বীকৃতি পেয়ে চলেছেন, যার পেছনের গল্পে তার আপসহীন রাজনৈতিক ও শিক্ষা দর্শন।
অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি পাঠ ও পাঠনের মূল্যায়নে তিনি এ দেশের মানুষের জন্য সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় গ্রহণ করেন। বিশ্বে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধ অর্জনে যে কৌশল অবলম্বন করেছেন শেখ হাসিনা, যা বিশ্বের জন্য এক নজির। নেতৃত্ব ও দূরদৃষ্টির জন্য দেশের জনগণের মৌলিক অধিকার যথাযথভাবে পূরণ করতে পেরেছেন, শিক্ষা সুবিধা, নারীর ক্ষমতায়ন, মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার কমানো, দরিদ্র মানুষের শৌচাগার ও স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান ও শিশুদের টিকাদান কার্যক্রমে সফলতা এসেছে।
ঘাতকের আঘাত থেকে বারবার বেঁচে যাওয়া শেখ হাসিনা মৃত্যুভয়কে পায়ের ভৃত্য করে ক্লান্তহীন পরিশ্রম করেছেন দেশ মাতৃকার জন্য। ৪০ বছরের দীর্ঘ রাজনৈতিক পথ পরিক্রমায় শেখ হাসিনা কেবল সেই মহান নেতার কন্যা এবং তার উত্তরসূরী হিসেবে গণমানুষের প্রধান নেতার আসনে স্থান পাননি, তিনি জেল-জুলুম মামলা-হামলা হত্যা প্রচেষ্টাসহ হাজারো হুমকির মুখে অটল থেকে নেতৃত্বের অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন, হয়েছেন বাংলার নতুন ইতিহাসের নির্মাতা, হিমাদ্রি শিখর সফলতার মূর্ত স্মারক,উন্নয়নের কারিগর, উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশের রূপকার। রাজনৈতিক পথ পরিক্রমায় ছাত্রনেত্রী থেকে জননেত্রী হওয়া মানবিক মানুষ শেখ হাসিনার জন্মদিন আজ।
নিখাদ দেশপ্রেম, দূরদর্শিতা, দৃঢ়চেতা মানবিকতা ও মানবীয় গুণাবলী তাকে আসীন করেছে বিশ্বে নেতৃত্বের আসনে। তিনি বাঙালীর জাতির ঐক্যের প্রতীক ও ভরসার শেষ আশ্রয়স্থল। আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক দৈন্য বাংলাদেশকে উন্নয়ন-অগ্রগতি-সমৃদ্ধির মোহাসোপানে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন শেখ হাসিনা, জাতির পিতার হাসু।
হাসু থেকে শেখ হাসিনা বর্তমান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা এবং শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাচ্ছি।
সারা দেশের মানুষের স্লোগানে কণ্ঠ মিলিয়ে বিশ্বাস রাখি আর দৃপ্তকণ্ঠে উচ্চারণ করি ‘শেখ হাসিনার হাতে থাকলে দেশ, পথ হারাবে না বাংলাদেশ। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।’
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
এসএ/