ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

পূজায় মাটি দেবে না পশ্চিমবঙ্গের যৌনপল্লীগুলো

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৫:২৯ পিএম, ৩ অক্টোবর ২০২১ রবিবার | আপডেট: ০৫:৫১ পিএম, ৩ অক্টোবর ২০২১ রবিবার

দুর্গাপূজায় ‘বেশ্যাদ্বার মৃত্তিকা’ লাগে বলে উল্লেখ রয়েছে শাস্ত্রে। কিন্তু ভারতের পশ্চিম বাংলার যৌনকর্মীরা সেই রীতি মানার জন্য বারোয়ারি কমিটিগুলির পাশে আর দাঁড়াতে চায় না। এবার গোটা পশ্চিম বাংলার সব যৌনপল্লী এক হয়েছে এই সিদ্ধান্তে।

বাংলার যৌনকর্মীদের সংগঠন দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির সম্পাদক কাজল বসু বলেন, ‘‘আগেও আমরা এই কথা বলেছি যে, আমাদের দরজার মাটি না পেলে পূজা হবে না, কিন্তু কেউ আমাদের ঘরের চৌকাঠ পার হলেই অপরাধী। কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন আইনই সেটা বলেছে। তাই আমরা ঠিক করেছি, গোটা রাজ্যেই এবার সব যৌনপল্লি এক সুরে বলবে, দরজার মাটি দেব না।’’

দুর্বারের বক্তব্য, সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার যে মানবপাচারবিরোধী আইন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে তাতে এই পেশায় যুক্ত যৌনকর্মীরা বিপদের মধ্যে পড়বেন। এমনকি, এই পেশাই উঠে যেতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।

প্রসঙ্গত, ‘ট্র্যাফিকিং পার্সনস (প্রিভেনশন, প্রোটেকশন অ্যান্ড রিহ্যাবিলেটশন) বিল ইতিমধ্যেই লোকসভায় পাশ হয়েছে। এখন রাজ্যসভার অনুমোদন পেলেই তা আইনে রূপ নেবে।  

সেই বিলই সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর দাবি তুলে গত আগস্টে সংসদ চলাকালীনই সরব হয়েছিল দুর্বার।

সংগঠনের আইনজীবী অভিজিৎ দত্ত বলেন, ‘‘আমাদের দেশে আগের পাচারবিরোধী আইন রয়েছে। সেটির পরে এই বিলে কোথাও ইচ্ছুক-অনিচ্ছুক যৌনকর্মীদের কথা আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়নি। অর্থাৎ ইচ্ছাকৃতভাবেও যারা এই পেশায় আসবেন তাদের পুনর্বাসন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু যারা স্বেচ্ছায় এই পেশায় এসেছেন তাদের তো বাধ্য করা যায় না। মানবপাচার রোধের নামে আসলে যৌনকর্মীদের পেশাটাকেই তুলে দিতে চাইছে কেন্দ্র।’’

সেই রেশ টেনেই সর্বজনীন দুর্গাপুজোকে বয়কট করতে চাইছেন যৌনপল্লির বাসিন্দারা।

দুর্বার অবশ্য নিজেদের পূজা করছে এবারও। তবে অতীতে সেই পূজায় পুলিশের অনুমতি নিয়ে চাপে পড়তে হয়েছিল তাদেরকে। সেই সময় কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়ে অনুমতি আদায় করেছিল দুর্বার।

দুর্বারের সদস্য বিমলা রায় বলেন, ‘‘এতকাল তো আমাদের মাটি নিয়ে সবার পূজা হয়েছে। এবার থেকে আমাদের মাটি, আমাদের পূজা। এটাই আমাদের পূজার থিম বলতে পারেন।’’

যৌনপল্লীর মাটির সঙ্গে দুর্গাপূজার যোগ সম্পর্কে পুরোহিত প্রশিক্ষক ও ‘দুর্গাপূজার জোগাড়’ বইয়ের লেখক নবকুমার ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সবাই শুধু বেশ্যাদ্বার মৃত্তিকার কথা বলে। কিন্তু শাস্ত্র অনুযায়ী একই সঙ্গে পূজায় রাজদ্বার, সর্বতীর্থ, বৃষশৃঙ্গ, গজদন্তের মৃত্তিকাও লাগে। কিন্তু সেসব তো আর পাওয়া যায় না। গঙ্গামাটিকে প্রতীকী হিসেবে ব্যবহার করা হয়। একান্তই বেশ্যাদ্বার মৃত্তিকা না পাওয়া গেলে সে ক্ষেত্রে প্রতীকী ব্যবহারের অনুমোদন রয়েছে শাস্ত্রে।’’

সূত্র: আনন্দবাজার

এসি