ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

ঘটনাবহুল কানপুর টেস্ট

নাজমুশ শাহাদাৎ

প্রকাশিত : ০৬:২৯ পিএম, ২৬ নভেম্বর ২০২১ শুক্রবার

শ্রেয়াস আইয়ার

শ্রেয়াস আইয়ার

কথায় আছে- ‘শেষ ভলো যাঁর, সব ভালো তাঁর’। ভারতীয় ক্রিকেটার শ্রেয়াস আইয়ারের ক্ষেত্রে যেন পুরোটাই ঠিক। যেমন- চলতি বছরের শুরুটা খুব একটা ভাল কাটেনি দিল্লির এই ব্যাটারের। অথচ বছরের শেষের দিকে এসে সাফল্য যেন তাঁর পায়ে লুটোপুটি খাচ্ছে।

চলতি বছরের মার্চেই ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কাঁধে চোট পাওয়ার পর বেশ খানিকটা সময়ই মাঠের বাইরেই কাটাতে হয়েছিল শ্রেয়াসকে। চোটের জেরে কাঁধে অস্ত্রোপ্রচারও করতে হয় তাঁকে। তবে চোট সারিয়ে উঠে আইপিএলের দ্বিতীয় পর্বে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বেশ ভাল ছন্দেই ছিলেন আইয়ার। আর এবার কানপুরে অভিষেক টেস্টে অসাধারণ পারফরম্যান্স করে সবাইকে দিলেন রীতিমত তাক লাগিয়ে।

আইপিএলের দ্বিতীয় পর্বে ভালো পারফরম্যান্স করলেও ম্যাচ ফিটনেসের অভাবে ভারতের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলে জায়গা হয়নি এই মিডল অর্ডার ব্যাটারের। তবে কিউয়িদের বিপক্ষে সদ্য সমাপ্ত টি-টোয়েন্টি সিরিজে পুনঃরায় ভারতীয় দলে ফিরলেও তাঁকে ছন্দে পাওয়া যায়নি সেভাবে।

তবুও টেস্ট দলে ডাক পেয়ে সেই সুযোগ হাতছাড়া করেননি শ্রেয়াস। অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসেই খেলেন ১০৫ রানের অসাধারণ একটি ইনিংস। যে ইনিংসে ভর করেই ৩৪৫ রানের স্কোর গড়তে পারে ভারত। 

শ্রেয়াস ছাড়াও ইনিংসে শুভমন গিল ৫২ এবং রবীন্দ্র জাদেজা ৫০ করেন। এছাড়া রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ব্যাট থেকে আসে ৩৮ রান। বাকিরা কিন্তু সেভাবে ভারতকে নির্ভরতা দিতে পারেননি। মূলত শ্রেয়াসের সেঞ্চুরিই ভারতের বড় মূলধন।

কানপুরে শুক্রবার ১৬তম ভারতীয় ব্যাটার হিসেবে অভিষেক টেস্টেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শতরান করার গৌরব অর্জন করা শ্রেয়াস মুগ্ধ করেছেন বিশ্ব ক্রিকেটকে। নেটপাড়ায় তাঁকে ঘিরেই তাই তুমুল আলোড়ন। প্রশংসা যেন একেবারে উপচে পড়ছে। ইনস্টাগ্রামে কামব্যাকের একটি অসাধরাণ ভিডিও দিয়েছেন শ্রেয়াস নিজেও। সেখানেও ভালবাসা উপচে পড়েছে নেটিজেনদের।

কিছুটা ভাগ্য এবং অনেকটা পরিশ্রমের ফলেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে কানপুর টেস্টে অভিষেক হয় শ্রেয়াস আইয়ারের। আর প্রথম সুযোগেই বাজিমাত করেন তিনি। ১০ নম্বর ভারতীয় ক্রিকেটার হিসেবে দেশের মাটিতে অভিষেক টেস্টে শতরান করেন শ্রেয়াস। আর দ্বিতীয় ভারতীয় ক্রিকেটার হিসেবে কানপুরে টেস্টে অভিষেকেই সেঞ্চুরি করলেন আইয়ার। তাঁর আগে ১৯৬৯ সালে কিংবদন্তি গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ কানপুরে টেস্ট অভিষেকেই সেঞ্চুরি করেছিলেন।

এদিকে, শ্রেয়াসের শতকে ভর করে প্রথম ইনিংসে ৩৪৫ করা ভারতের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে কোনো উইকেট না হারিয়েই ১২৯ রান তুলে দ্বিতীয় দিন শেষ করেছে নিউজিল্যান্ড। স্বাগতিক বোলারদের হতাশায় ডুবিয়ে ফিফটি তুলে নিয়েছেন দুই কিউয়ি ওপেনারই। 

টম ল্যাথাম ও উইল ইয়ং

৭৫ রান নিয়ে অপরাজিত আছেন চতুর্থ টেস্ট খেলতে নামা উইল ইয়ং। তার সঙ্গী টম ল্যাথাম অজেয় আছেন সই পঞ্চাশ করে। ৫৭টি ওভার খেলে মাত্র ১৬টি বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন দুজনে মিলে। যাতে দিন শেষে হতাশা নিয়েই ফিরতে হয়েছে অশ্বিন, জাদেজা, উমেশ যাদবদের।

এর আগে অবশ্য পাঁচটি উইকেট নিয়ে ৪২ বছরের ইতিহাস ব্রেক করেন টিম সাউদি। এশিয়ার বাইরের কোনো বোলার হিসাবে কানপুরে এই প্রথম পাঁচ উইকেট নিলেন টিম সাউদি। 

সাউদির আগে মাত্র তিনজন নন-এশীয় বোলার কানপুরের ময়দানে এক ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন। ১৯৫৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওয়েস হল ছিলেন প্রথমজন। তার পরের বছরই অস্ট্রেলিয়ার অ্যালান ডেভিডসন একই কৃতিত্ব গড়েন। শেষবার আরেক অজি জেফ ডিমক কানপুরের ময়দানে পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন। 

টিম সাউদি

সেই ঘটনা ঘটে আজ থেকে ৪২ বছর আগে ১৯৭৯ সালে। তারপর সাউদিই প্রথম নন-এশীয় বোলার হিসেবে এই কৃতিত্ব গড়লেন। প্রসঙ্গত, বাকি তিনজনই দুই ইনিংসেই পাঁচটি করে উইকেট নেন। সাউদি সেই ধারা বজায় রাখতে পারেন কিনা, এখন সেটাই দেখার।

এনএস//