ঢাকা, বুধবার   ১১ ডিসেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ২৭ ১৪৩১

গাব্বায় নতুন ইতিহাস লিখলেন হেড

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:০৭ পিএম, ৯ ডিসেম্বর ২০২১ বৃহস্পতিবার

ট্রাভিস হেডের সেঞ্চুরি উদযাপন

ট্রাভিস হেডের সেঞ্চুরি উদযাপন

অ্যাশেজ মানেই উত্তেজনা, অ্যাশেজ মানেই আলোচনা। তবে ঐতিহাসিক সিরিজটির এবারের আলোচনার শুরুটা স্টার্ককে ঘিরে, পরের গল্পে নায়ক কামিন্স, বৃষ্টি বাঁধায় প্রথম দিনটি অজিদের। তখনও আলোচনার বাইরে হেড। ওয়ার্নার-স্মিথদের ভিড়ে তাকে নিয়ে আলোচনার কি-ই বা আছে! তারওপর লাবুশানের ব্যাটিং মুগ্ধতার গল্প তো রয়েছেই। তার মাঝে আবার অ্যালেক্স ক্যারির অভিষেক।

যাইহোক, দ্বিতীয় দিনের শুরুর গল্পটা অবশ্য নিজেদের করেই নিয়েছিলেন ওয়ার্নার ও লাবুশানে! দ্বিতীয় উইকেট জুটিতেই অজিদের রেখেছিলেন চালকের আসনে। কিন্তু হঠাৎ-ই ছন্দপতন! এটাকেই আবার অ্যাশেজের মহত্ত্বও বলতে পারেন। 

যাতে প্রথম টেস্টে ইংল্যান্ডকে একেবারে কোণঠাসা করে রেখেছে অস্ট্রেলিয়া। প্রথমে দিন অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের বিধ্বংসী রূপ। তারপর ডেভিড ওয়ার্নার, ট্রেভিস হেড, মার্নাস লাবুশানেদের সৌজন্যে দ্বিতীয় দিনের শেষে ১৯৬ রানের লিড। ব্রিসবেনের গাব্বায় রীতিমতো চাপে পড়ে আছে ইংলিশরা।

তবে গল্পের শুরুতেই যেন জমে উঠতে চলছিলো ম্যাচটি। ইংল্যান্ডকে ১৪৭ রানে গুড়িয়ে দিয়ে মাত্র ১০ রানেই প্রথম উইকেট হারিয়ে বসে অজিরা। এরপরও অজিরা যে এভাবে ফিরে আসবে সেটা হয়তো ভাবতে পারেন নি অনেকেই। কিন্তু কারো ভাবা না-ভাবা নিয়ে ওয়ার্নার ও লাবুশানের যে গাব্বার বাইশ গজে নামেননি, সেটা প্রমাণ হয়েছে নিশ্চয়ই। দারুণ সব শটে গাব্বায় আগত দর্শকরা যেমন মন্ত্রমুগ্ধ হয়েছেন, তেমনি দেশ-বিদেশের কোটি ক্রিকেট ভক্তও টিভির পর্দায় খুঁজে নিয়েছে আনন্দ।

বাহারি সব শট আর বলের গুণাগুণ বিচার করে উইলোর নাচন দেখানো ওয়ার্নার-লাবুশানে যখন ব্রিটিশদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন, ঠিক তখনই লাবুশেনেকে বিদায় করেন লিচ। ততক্ষণে অবশ্য অজিরা পাড়ি দিয়েছে দীর্ঘ পথ, জুটিতে উঠে গেছে ঠিক ১৫৬ রান! ৭৪ রানে ফেরা লানুশানের পর স্মিথও ফেরেন মাত্র ১২ করেই।

তবে ট্রাভিস হেডকে নিয়ে গল্পটার পুরো আলো যেন নিজের দিকে নিয়েছিলেন ওয়ার্নার। দারুণ সব শটে এগুচ্ছিলেন সেঞ্চুরির দিকেই। কিন্তু তা আর হলো কই! সেঞ্চুরির আগেই একরাশ হতাশা নিয়ে ফিরলেন সাজঘরে। আক্ষেপ মাত্র ৬ রানের। তখনও দ্বিতীয় দিনের গল্পের নায়ক ছিলেন ওই ওয়ার্নারই।

অজি এই ওপেনারকে বিদায় করেই ইংলিশ পেসার ওলিয়ে রবিনসন যেন জমিয়ে তুলেছিলেন ম্যাচ, টানা দুই বলে দুই উইকেট নেই অজিদের। যেখানে ফুটে উঠেছিলো অ্যাশেজের মহত্ত্ব। কিন্তু পরের গল্পটা যে এমন হবে সেটা কি কেউ কল্পনা করেছিলো? হয়তো না।

এবারের গল্পটা ট্রাভিস হেডকে ঘিরে। যাকে নিয়ে ছিল না একটুও আশা। ছিল না ওয়ার্নার, স্মিথদের মতো আলোচনা, কিংবা কানাঘুষাও। তাতে কি? সুযোগের সঠিক ব্যবহারটা কিভাবে করতে হয়, সেটাই যেন বুঝিয়ে দিলেন হেড। তাও প্রায় এক বছর পর একাদশে ফিরেই।

অ্যাশেজ অভিষেকের রেকর্ড বুকে নিজের নামটা লিখিয়ে নিলেন হেড! কিন্তু কিভাবে? টেস্ট অভিষেক তো হয়েছে বেশ আগেই।

হ্যাঁ, এর আগে দুইবার সেঞ্চুরি উদযাপনেও মেতেছেন হেড, কিন্তু অ্যাশেজ খেলা হয়নি তাঁর। নিজের প্রথম অ্যাশেজেই গাব্বায় লিখলেন ইতিহাস। ব্যাটের পরশে গড়লেন রেকর্ড। সাদা পোশাকের ম্যাচে হেড যেন হয়ে উঠেছিলেন বিধ্বংসী। মাত্র ৮৫ বলেই মেতে ওঠেন সেঞ্চুরির উদযাপনে। আর এখানেই ইতিহাস, কেননা অ্যাশেজ ইতিহাসে তৃতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরি এটি।

অথচ ঘণ্টা দেড়েক আগেও সকলের মধ্যমণি ছিলেন ডেভিড ওয়ার্নারই। কিন্তু সময় গড়াতেই আলোটা নিজের করে নেন হেড। কিভাবে বিপক্ষের বোলারদের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে কিংবা নিজের সেরাটা উজাড় করে দিয়ে দলকে এগিয়ে নেয়া যায়, সেটা হেডের মতো লড়াকু ক্রিকেটাররা জানেন বলেই টেস্ট ক্রিকেট রাজকীয় ফরম্যাট হিসেবে বিবেচিত! 

চলতি অ্যাশেজ সিরিজের প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে তিনি অপরাজিত ৯৫ বলে ১১২ রান করে। যে ইনিংসে আছে ১২টি চারের সঙ্গে দুটি ছক্কার মার। সঙ্গী মিচেল স্টার্ক অপরাজিত ২৪ বলে ১০ রান নিয়ে। যাতে দ্বিতীয় দিনের শেষে অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ ৭ উইকেট হারিয়ে ৩৪৩ রান। 

এনএস//