বছরের আলোচিত যত দুর্ঘটনা
সোহাগ আশরাফ
প্রকাশিত : ০৮:৩৩ এএম, ৩০ ডিসেম্বর ২০২১ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১০:৪৫ এএম, ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ শুক্রবার
মহামারির সঙ্গে লড়াইয়ে কেটে গেল আরেকটি বছর। একদিকে করোনাভাইরাসের দাপটে বিপর্যস্ত অবস্থা, অন্যদিকে বেশ কয়েকটি বড় দুর্ঘটনা দেখতে হয়েছে বাংলাদেশকে।
শীতলক্ষ্যায় কার্গোর ধাক্কায় লঞ্চডুবি, মগবাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণ, রূপগঞ্জে জুস কারখানায় আগুনে মৃত্যুর মিছিল শুরু হয়েছিল।বছরের শেষভাগে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ভাসমান লঞ্চে আগুন লেগে বহু প্রাণহানি নাড়া দিয়ে যায়।
রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে আগুন
বছরের শুরুতে ১৪ জানুয়ারি কক্সবাজারের টেকনাফের নয়াপাড়া নিবন্ধিত শরণার্থী শিবিরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে পাঁচ শতাধিক বসতি পুড়ে যায়। গভীর রাতে ক্যাম্পের ই ব্লকে আগুন লাগার ঘটনা ঘটলে কিছুক্ষণের মধ্যেই ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। ততক্ষণে আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। যদিও অগ্নিকাণ্ডে বড় ধরনের হতাহতের খবরপাওয়া যায়নি।
উখিয়ায় রোহিঙ্গা শিবিরে আগুন
কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে ২২ মার্চ আগুন লেগে ১৫ জন মারা যান। পুড়ে যায় ১০ হাজার বসতি। সেখানকার বিভিন্ন ক্যাম্পে একযোগে আগুন লেগেছিল বলে দাবি করেন রোহিঙ্গারা। ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় হতবাক হয় বিশ্ব, আসহায় হয়ে পড়ে রোহিঙ্গারা।
রাজশাহীর কাটাখালীতে সড়ক দুর্ঘটনা
২০২১ সালের ২৬ মার্চ রাজশাহীর কাটাখালীতে যাত্রীবাহী বাস ও মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে ১৭ জন নিহত হন। রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কের কাপাশিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আরও অনেকে আহত হন।
শীতলক্ষ্যায় কার্গোর ধাক্কায় লঞ্চডুবি
৪ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে একটি কার্গো জাহাজের ধাক্কায় সাবিত আল হাসান নামের লঞ্চ ডুবে গেলে ৩৫ জন যাত্রীর মৃত্যু হয়।
যাত্রীবাহী লঞ্চটি নারায়ণগঞ্জ থেকে মুন্সিগঞ্জ যাওয়ার পাথে দুর্ঘটনায় পড়ে।
ঘটনার দিন সন্ধ্যা ৬টার দিকে লঞ্চটি মদনগঞ্জ এলাকায় নির্মাণাধীন তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর কাছাকাছি এলাকায় এসকে-৩ নামের একটি কার্গো জাহাজের ধাক্কায় ডুবে যায়। লঞ্চের অনেক যাত্রী সাঁতরে তীরে উঠলেও মৃত্যু হয় ৩৫ জনের।
সাততলা বস্তিতে আগুন
রাজধানীর মহাখালীর সাততলা বস্তিতে ৭ জুন এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিটের প্রচেষ্টায় প্রায় তিন ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে আসে আগুন। এতে হতাহত হওয়ার কোনো খবর না পাওয়া গেলেও পুড়ে যায় কয়েক শ ঘর।
মগবাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণ
২৭ জুন সন্ধ্যা ৭টা ৩৪মিনিটে রাজধানীর মগবাজার ওয়ারলেস এলাকার একটি ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ওই বিস্ফোরণ কেড়ে নেয় ১২ জনের প্রাণ; আহত হন ৬৬ জন। ভেঙে পড়ে আশপাশের কিছু ভবনের কাচ। দুমড়ে-মুচড়ে যায় সড়কের অসংখ্য গাড়ি।
ঘটনার পর আহতদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়। এর মধ্যে বার্ন ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয় ১২ জনকে।
৭৯ নম্বর আউটার সার্কুলার রোডের পুরনো একটি তিনতলা ভবনের দোতলায় সিঙ্গারের বিক্রয় কেন্দ্র ছিল। নিচতলায় ছিল খাবারের দোকান শরমা হাউস ও বেঙ্গল মিটের বিক্রয় কেন্দ্র। বিস্ফোরণে শরমা হাউস ও বেঙ্গল মিট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ধারণা করা হয় সেখান থেকেই জমে থাকা গ্যাসে এ বিস্ফোরণ হয়।
রূপগঞ্জে জুস কারখানায় আগুন
বছরের আলোচিত দুর্ঘটনাটি ঘটে ৮ জুলাই নারায়ণগঞ্জে।
রূপগঞ্জ উপজেলায় সজীব গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান সেজান জুস কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ৫০ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন অর্ধশতাধিক মানুষ।
৮ জুলাই বিকাল ৫টার দিকে উপজেলার কর্ণগোপ এলাকায় অবস্থিত ওই কারখানায় এ অগ্নিকাণ্ড ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, ছয়তলা ভবনটির মধ্যে চতুর্থতলার শ্রমিকরা কেউ বের হতে পারেননি। সিকিউরিটি ইনচার্জ চারতলার গেটটি বন্ধ করে রাখায় কোনো শ্রমিকই বের হতে পারেননি।
সুগন্ধা নদীতে লঞ্চে আগুন
২৩ ডিসেম্বর দিবাগত রাত তিনটার দিকে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। প্রায় ৪০০ যাত্রী নিয়ে সন্ধ্যা ৬টার দিকে এমভি অভিযান-১০ সদরঘাট থেকে ছেড়ে যায়।
চাঁদপুর ও বরিশাল টার্মিনালে লঞ্চটি থামে এবং যাত্রী ওঠানামা করেন। ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে পৌঁছলে রাত ৩টার দিকে এতে আগুন ধরে যায়।
ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডে ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া ৮০ জনেরও বেশি যাত্রী দগ্ধ হয়েছেন। দুর্ঘটনার সময় অনেক যাত্রী নদীতে ঝাঁপ দিয়ে বেঁচে গেলেও নিখোঁজ রয়ে গেছেন অনেক মানুষ।
এসএ/এএইচএস/