ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

বিদেশি ঢঙ্গে বাংলা বলার প্রবণতা (ভিডিও)

মেহেদী হাসান

প্রকাশিত : ০৩:৪৮ পিএম, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ বুধবার

দীর্ঘ উপনিবেশিক শাসন আর নানা জাতিগোষ্ঠির আগমনে অনেক বিদেশি শব্দ যুক্ত হয়েছে বাংলা ভাষায়। কিন্তু বাংলা প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি বিদেশি ভাষার ওপর। এরই মধ্যে দেখা দিয়েছে বিদেশি ঢঙ্গে বাংলা বলার প্রবণতা। বিষয়টি উদ্বেগের বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক কারণে প্রাচীন কাল থেকে বহু জাতির আগমন ঘটেছে এই বাংলায়। যাদের সংমিশ্রণে বিদেশি অনেক শব্দ গৃহীত হয়েছে বাংলা ভাষায়। বিচিত্র এই শব্দ সম্ভারে বাংলা হয়েছে পৃথিবীর অন্যতম সম্বৃদ্ধ এক ভাষা। 

প্রায় সাড়ে আটশ’ বছরের মুসলিম শাসন আমলে ফার্সি ছিল দাপ্তরিক ভাষা, যার প্রভাবে বাংলায় ফার্সির পাশাপাশি আরবি ও তুর্কি অনেক শব্দও যোগ হয়েছে। ধর্মীয় কারণেও এসেছে অনেক আরবি শব্দ। ইউরোপিয় বণিকদের আগমনে পুর্তুগিজ, ওলন্দাজসহ বিভিন্ন ভাষা থেকে বাংলায় অনেক শব্দ যোগ হয়েছে। তবে দুই শতাব্দির ইংরেজ শাসন এ ভাষার ওপর তুলনামূলক বেশি প্রভাব ফেলেছে। বিশ্বায়ন ও বিশ্ববাণিজ্যের কারণে বাংলা ভাষায় ইংরেজির প্রভাব আরও বেড়েছে। 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবুর হক বলেন, ‘বিশ্বায়নের ফলে সারা দেশে পুঁজিবাদের বিকাশ। সেই পুঁজিবাদের পেছনে ইংরেজি ভাষা বড় ভূমিকা পালন করে।’

এদিকে সাহিত্যিকরাও বাংলা ভাষায় বিদেশি শব্দ ব্যবহার করেছেন দেদারসে। রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল থেকে শুরু করে বর্তমান সময়ের সাহিত্যিকদেরও আপত্তি নেই এ নিয়ে। তবে বিশ্বে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিস্তার না হওয়ায় বিদেশি ভাষার উপর তেমন প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি বাংলা। 

ভাষা ইতিহাস বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘একমাত্র উপায় হলো সংস্কৃতি এবং জ্ঞান চর্চার মধ্য দিয়ে, গবেষণার মধ্য দিয়ে, নতুন সৃষ্টির মধ্য দিয়ে যদি ব্যাপারটিকে গুরুত্বপূর্ণ করে গড়ে তোলা যায়। যদি এমন হয় যে, আমি নতুন কিছু সৃষ্টি করলাম এবং সেখানে আমার শব্দটা জরুরি, তখন এই শব্দসহ আমার জ্ঞানটা অন্য ভাষায় গ্রহণ করে।’

বিদেশি অনেক গণমাধ্যমেরই রয়েছে বাংলা বিভাগ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত বাঙালিদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন বিদেশিরাও। 

অধ্যাপক মাহবুবুর হক বলেন, ‘আমেরিকায় আমি দেখেছি অনেক অনুষ্ঠান হয়, বইমেলা হয়, নানারকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। তারা বসন্ত উৎসব, একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করেন।’

অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘বাংলা ভাষা ত্রিশ কোটি মানুষের ভাষা। এটা সমস্ত পৃথিবীর অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি যে কোনো কিছুর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

এদিকে, হালে এক শ্রেণির বাঙালির মধ্যে ইংরেজির মতো করে বাংলা উচ্চারণ বা ইংরেজি মিশিয়ে বাংলা বলার প্রবণতা বেড়েছে। বিষয়টিকে উদ্বেগের বলছেন বিশেষজ্ঞরা। 

এএইচ/