ঢাকা, সোমবার   ১৩ মে ২০২৪,   বৈশাখ ৩০ ১৪৩১

স্বজনপ্রীতির অভিযোগে অঝোরে কান্না করা চশমা পরা সেই ছেলেটি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:৩১ পিএম, ৫ মার্চ ২০২২ শনিবার

টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি হাঁকানোর পর ইমাম উল হক

টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি হাঁকানোর পর ইমাম উল হক

কথাই বলছেন না বাড়ির আপনজনদের সঙ্গে। মনে হচ্ছে, আশপাশটা সব ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। এই গোটা পৃথিবীতে একা হয়ে যাচ্ছেন তিনি। নিজের মনের সঙ্গেই লড়াই করে চলেছেন ২১ বছরের এক তরুণ। কখনও কখনও ভেঙে পড়ছেন। বাথরুমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেঁদে চলেছেন। আর তৈরি হচ্ছেন কেবল একটা সুযোগের জন্য।

ইমাম উল হক সেই সুযোগটা পেলেন ২০১৭ সালে। সেটাই যেন যথেষ্ট ছিল তার জন্য। প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই শতরান। এত দিন যারা বলছিলেন, “ইনজামাম উল হকের ভাইপো বলেই পাকিস্তান দলে সুযোগ পেয়েছে ইমাম”, তাদেরকে যেন সপাটে বাউন্ডারির বাইরে পাঠালেন ইমাম।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এক দিনের ম্যাচে ১২৫ বলে ১০০ করেন তরুণ তুর্কি। পাকিস্তানের দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে প্রথম ম্যাচেই শতরান করেন ইমাম। পরের নয় ম্যাচে চারটি শতরান। বিশ্বের আর কোনও ব্যাটারেরই এমন রেকর্ড নেই। স্বজনপ্রীতির অভিযোগ ভেঙে গুঁড়িয়ে দিল ইমামের ব্যাট।

এখনও পর্যন্ত ৪৬টি এক দিনের ম্যাচ খেলে ৭টি শতক হাঁকিয়েছেন তিনি। রান সংখ্যা ২০২৩। সর্বোচ্চ ইনিংস ১৫১ রানের। 

সাদা বলের ক্রিকেটে জায়গা হলেও লাল বলের ক্রিকেটে খেলার জন্য অপেক্ষা করতে হয় প্রায় দুই বছর। কিন্তু অভিজাত ক্রিকেটে সেভাবে নিজেকে মেলে ধরতে পারছিলেন না চোখে চশমা আঁটা ইমাম। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চলমান রাওয়ালপিণ্ডির টেস্ট ম্যাচটি বাদ দিলে এখনও পর্যন্ত ১১টি টেস্ট খেলেছেন তিনি। যেখানে ছিল না কোনও শতরান। তিনটি অর্ধশতরান হাঁকালেও ২০১৯ সালের পর দল থেকেই বাদ দেয়া হয় তাকে।

তবে ৪ মার্চ, ২০২২। আবারও পাকিস্তানের সাদা জার্সি ওপেন করতে নামলেন ইমাম। সামনে রীতিমত গোলা ছুড়ছেন মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্স, জস হ্যাজলউডের মতো পেসাররা। চোখে চশমা এঁটেই নেমে পড়লেন ইমাম। দেড়শো কিলোমিটার বেগে ছুটে আসা গোলা সামলাচ্ছেন চশমা পরেই! 

যদিও ক্রিকেট দুনিয়া এমন ঘটনা এই প্রথম দেখেছে- এমন নয়। অনিল কুম্বলে, ক্লাইভ লয়েড, জাহির আব্বাস, ড্যানিয়েল ভেট্টরির মতো একাধিক ক্রিকেটারই চশমা পরে খেলেছেন। কিন্তু কোনও ওপেনার চশমা পরে খেলছেন- এই দৃশ্য খুব পরিচিত নয়। কিছু সময়ের জন্য বীরেন্দ্র সেহবাগ চশমা পরে খেলতেন। তবে সেটা দীর্ঘ দিনের জন্য নয়।

ইমাম খেললেন। শুধু খেললেন নয়, স্টার্ক-কামিন্সদের তুলোধোনা করে তুললেন ১৫৭ রান। টেস্টে এটাই তার প্রথম শতরান। এটাই কি পাল্টে দেবে ইমামের টেস্ট জীবন? 

এখনই তা বলা কঠিন। তবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে গোটা সিরিজে নজর থাকবে তার দিকে। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শুরুটা খুব সহজ ছিল না ইমামের। সেখান থেকেই শিক্ষা নিয়ে যেভাবে লড়াই চালিয়েছেন, আগামী দিনেও সেই লড়াইটাই চালিয়ে যেতে হবে।

কেমন ছিল আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরুর লড়াই? এক সাক্ষাৎকারে ইমাম বলেন, “আমি একা একা খেতাম। কেউ ছিল না আমার পাশে। আমার প্রথম সফর ছিল সেটা। সবাই জানে, প্রথম সফর কেমন হয়। ফোন খুললেই আমাকে উদ্দেশ করে লেখা। খারাপ লাগত। বুঝতাম না কী করব। পরিবারের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। ওদের ওপর চাপ দিতে চাইনি। আমার ফোন বন্ধ করে ম্যানেজারকে দিয়ে দিয়েছিলাম।”

খুবই কষ্ট পেয়েছিলেন ইমাম। তিনি বলেন, “এখনও মনে আছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাঁদতে কাঁদতে গোসল করেছি। নিজের উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলার মতো অবস্থা হয়েছিল। শুধু একটা জিনিস আমার মাথায় ঘুরছিল। আমি দেশের হয়ে খেলিনি। যদি সুযোগ না পাই, আর খেলতে না পারি? আমার ক্যারিয়ারটাই শেষ হয়ে যাবে। ঘরের বাইরে যেতাম না। দুবাইতে প্রচুর পাকিস্তানী। তাই মনে হত, বাইরে গেলেই আমাকে কথা শুনতে হবে।”

সেই চাপ কাটিয়ে পাকিস্তানের হয়ে খেলছেন ইমাম। টেস্ট দলেও জায়গা করে নিয়েছেন। অপেক্ষা আগামী দিনের। ইনজামামের ভাইপো বলে আর পরিচিত নন তিনি! ইমামের নাম সকলে জেনে গেছে এখন। এবার সেই নাম প্রতিষ্ঠার সময়। এসে গেছে অভিজাত ক্রিকেটে নিজের নামটা খোদাই করার সময়।

এদিকে, ৫২৯ মিনিট ক্রিজে কাটিয়ে ৩৫৮টি বল মোকাবেলা করে ইমাম উল হক তার এই মহাকাব্যিক ইনিংসটি সাজিয়েছেন ১৬টি চার ও দুটি ছক্কার সাহায্যে।

ইমামের সঙ্গে সঙ্গে এদিন কম যাননি সাবেক অধিনায়ক আজহার আলীও। অজিদের বিপক্ষে দেড় শতক হাঁকিয়েছেন তিনিও। উপরন্তু মাত্র ১৫ রানের জন্য পাননি ক্যারিয়ারের চতুর্থ ডাবল সেঞ্চুরি। তবে উনিশতম শতকসহ আজহার তার ওই ১৮৫ রানের ইনিংসটি খেলেন ৩৬১ বলে, ৫৩৫ মিনিট ক্রিজে থেকে।

মূলত এই দুজনের ব্যাটেই ১৬২ ওভারে ৪ উইকেটে ৪৭৬ রান তুলে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে পাকিস্তান। জবাবে এক ওভারে মাত্র ৫ রান তুলেই দ্বিতীয় দিন শেষ করে অস্ট্রেলিয়া। উসমান খাজা ৫ রানে এবং ডেভিড ওয়ার্নার শূন্য রানে অপরাজিত আছেন।

এনএস//