ঢাকা, সোমবার   ২৯ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

শুধু দুঃসাহসী সাংবাদিকই নন, ছিলেন মুক্তিযোদ্ধাও (ভিডিও)

মুহাম্মদ নূরন নবী, একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:৫৪ এএম, ২৮ মার্চ ২০২২ সোমবার | আপডেট: ১০:৫৮ এএম, ২৮ মার্চ ২০২২ সোমবার

শুধু দুঃসাহসী সাংবাদিকই নন, ছিলেন মুক্তিযোদ্ধাও। চরম ঝুঁকি নিয়ে একাত্তরের দিনে-রাতে রণাঙ্গনের খবর পাঠিয়েছেন। যার ছবি আর সংবাদ পাল্টে দিয়েছে স্বাধীনতাযুদ্ধের দৃশ্যপট। বলছি, সাইমন ড্রিংয়ের কথা। 

আলোচনার সুরাহা না করেই ইয়াহিয়া খান আকস্মিকভাবে পূর্ব-পাকিস্তান ত্যাগ করেন। সুতরাং যুদ্ধ যে অনিবার্য হতে চলেছে তা বুঝতে পেরেছিলেন বিদেশি সাংবাদিকরা।

ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল তখন সাংবাদিকদের ঘাঁটি। সংখ্যায় প্রায় দুশ’র মতো। 

২৫শে মার্চ গণহত্যার ঘটনা আড়াল করতেই ২৬ তারিখ বিকালে বিদেশী সাংবাদিকদের ফেরত পাঠানোর তোড়জোর চলে। কেউ কেউ চলেও যান। ঝুঁকি নিয়ে থেকে যান ব্রিটিশ সাংবাদিক সাইমন ড্রিং। 

২৭শে মার্চ বিদেশী সাংবাদিকদের বিমানবন্দরে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত হোটেলের ছাদে শীততাপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের পেছনে লুকিয়ে থাকেন সাইমন ড্রিং।

হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সাবেক ইউনিয়ন সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মো. সফিউদ্দিন বলেন, “ফাইভ স্টার হোটেলে শেফ থাকে বিদেশি। তাহলে আমাদের শেফও বিদেশি। সেই হিসেবে তাকে ড্রেস পরিয়ে কিচেনে রেখেছি। ওরা সার্স করেও তাকে ধরতে পারল না, নিতেও পারল না।”

সুযোগ পেলেই সাইমন ছুটে গেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স, নিউমার্কেট, পুরান ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায়। ছবি তোলেন সারি সারি লাশের। ক্যামেরায় উঠে আসে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া অন্য এক ঢাকা শহরের ছবি।  

মুক্তিযোদ্ধা মো. সফিউদ্দিন বলেন, “এই প্রচারের ফলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ত্বরান্বিত হয়। বর্হিবিশ্বে যুদ্ধের পক্ষে আমাদের সমর্থন, তা না হলে আরও কষ্ট করতে হইতো।”

সংবাদ পাঠাতে গিয়ে সাইমন পড়েন বড় ভোগান্তিতে। ২৭শে মার্চ ব্রিটিশ হাইকমিশন তাঁকে কোনো সহযোগিতা করবে না বলেই সাফ জানিয়ে দেয়। পরে জার্মান দূতাবাসের কূটনৈতিক চ্যানেলে ৯ রোল ফিল্ম পাঠায়। 

যুদ্ধদিনে সংগ্রহ করা সমস্ত নোট জুতার মোজা ও বেল্টের মধ্যে লুকিয়ে পাকিস্তান এয়ারলাইন্সে ভূখণ্ড ত্যাগ করেন। কলম্বো ট্রানজিটে ব্যাংককে চলে যান সাইমন ড্রিং। সেখান থেকে ৩০শে মার্চ প্রকাশ করা হয় সাড়া জাগানো খবর। বিশ্ববাসী প্রথমবারের মতো জানতে পারে ঢাকায় পাকিস্তানী সেনাদের নির্মম গণহত্যার খবর। 

জীবন বিপন্ন করে এই মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক বাঙালির জন্য যে অবদান রেখে গেছেন জাতি তা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে বহুদিন।

এএইচ/