মোমেন-ব্লিংকেনের বৈঠকে ফলপ্রসূ আলোচনা
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৮:৪৩ এএম, ৫ এপ্রিল ২০২২ মঙ্গলবার

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্টনি ব্লিংকেনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন।
সোমবার ওয়াশিংটন সময় দুপুর দেড়টায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে তাদের।
যুক্তরাষ্ট্র সরকার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়বদ্ধতা চায়। অন্যদিকে বাংলাদেশ চায় বিনিয়োগ এবং অবকাঠামো উন্নয়নে সহায়তা।
বৈঠক শেষে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, “র্যাব কখনও কখনও মাত্রাতিরিক্ত করেছে। তবে আমাদের নিজস্ব সিস্টেম আছে এবং অনেকের শাস্তি হয়েছে, এমনকি মৃত্যুদণ্ডও দেওয়া হয়েছে। সুতরাং এখানে দায়বদ্ধতা আছে। আপনাদেরই একজন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি বলেছিলেন— ‘র্যাব হচ্ছে বাংলাদেশের এফবিআই। আপনাদের নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কারণে র্যাবে লোকজন কাজ করতে আগ্রহ হারাবে। এজন্য আমি খুব খুশি হব যদি আপনার পুনর্বিবেচনা করেন।”
আব্দুল মোমেন বলেন, “এর জবাবে ব্লিনকেন জানিয়েছেন—এর একটি প্রসেস আছে এবং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এটি হবে। কিন্তু আমরা দায়বদ্ধতা চাই। এ ব্যাপারে আমরা খুব সোচ্চার।”
আব্দুল মোমেন বলেন, “আমরা সব ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছি। গত চার মাসে কেউ মারা যায় নাই। আমি উনাকে (ব্লিনকেন) জানালাম—ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে গত চার মাসে ট্র্যাক রেকর্ড খুব ভালো। একটা লোকও ডিএসইতে অ্যারেস্ট হয়নি। ব্লিনকেন উত্তরে বললেন, এটা খুব ভালো। আমরা এক একসঙ্গে কাজ করবো।”
নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে হবে এবং এর সঙ্গে জড়িত কমিটির সদস্যদেরকে সন্তুষ্ট করতে হবে। এর জন্য কিছু সময় প্রয়োজন। এটি সুইচের মতো না যে অন বা অফ করলে সব ঠিক হয়ে যাবে।”
বৈঠকে বাংলাদেশে ঔষধ, ইনফরমেশন টেকনোলজিসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন।
তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র অবকাঠামো খাতে তেমনভাবে বিনিয়োগ করেনি। আমি উনাদের অনুরোধ করেছি এখানে যুক্ত হওয়ার জন্য।”
আব্দুল মোমেন বলেন, “আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এ বিষয়ে একটি রোডম্যাপ নিয়ে কাজ করতে চাই। ইতোমধ্যে আমরা ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং আইএলও’র সঙ্গে এ বিষয়ে কাজ করছি। এর জবাবে ব্লিনকেন বলেছেন, আইএলও'র সঙ্গে কাজ করলেই সেটিকে আমরা মোটামুটিভাবে মানদণ্ড হিসেবে মেনে নেই।”
বৈঠকে বাংলাদেশের তরফে র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রস্তাবিত দু’টি সামরিক চুক্তি-আকসা ও জিসোমিয়া সই করার অগ্রগতি জানতে চাইতে পারে।
ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনমিক ফ্রেকওয়ার্ক নিয়েও আলোচনা হতে পারে। পাশাপাশি, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ইউক্রেনে মানবিক সহায়তা সংক্রান্ত প্রস্তাবের পক্ষে বাংলাদেশ ভোট দেওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করতে পারে। একই সঙ্গে আগামীতে রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থান চাইতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।
এর আগে সোমবার সকালে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন উপলক্ষে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্টনি জে ব্লিঙ্কেনের আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে পৌঁছেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
এদিকে বঙ্গবন্ধু’র খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত দিতে রাজি হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু পরে সেটি বাস্তবায়িত হয়নি বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্থনি ব্লিনকেনের সঙ্গে এ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বৈঠক শেষে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, “আগে একবার ঠিক হয়েছিল তাকে পাঠানো হবে কিন্তু পাঠানো হয়নি। এই প্রক্রিয়াটি দ্রুত শেষ করা উচিত।”
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ বছরের কূটনৈতিক সম্পর্কে রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত পাঠানো একটি গেম চেঞ্জার হবে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেনকে জানিয়েছেন, একজন খুনিকে আশ্রয় দেওয়াকে আমেরিকান জনগণ পছন্দ করবে না। এটি আপনারা চিন্তা করতে পারেন।
দুই মন্ত্রীর বৈঠকে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বিমান চলাচল, রোহিঙ্গাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
এসএ/